Advertisement
E-Paper

শিলিগুড়িতে ‘যুদ্ধক্ষেত্র’, ফানুসে মাতল কৃষ্ণনগর

চুঁচুড়া, পুরুলিয়া, বহরমপুর, কৃষ্ণনগর পারল। পারল না শিলিগুড়ি, বর্ধমানের শিল্পাঞ্চল বা খড়্গপুর। শনিবার কালীপুজোর রাতটা ছিল অনেক সংযত। কিন্তু রবিবার রাতে শিলিগুড়ি, আসানসোল, কুলটি, খড়্গপুরে মানুষের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল নিষিদ্ধ বাজি।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:১২
নেই শব্দবাজির দাপট। কৃষ্ণনগরে দীপাবলির আকর্ষণ ফানুস। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

নেই শব্দবাজির দাপট। কৃষ্ণনগরে দীপাবলির আকর্ষণ ফানুস। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

চুঁচুড়া, পুরুলিয়া, বহরমপুর, কৃষ্ণনগর পারল। পারল না শিলিগুড়ি, বর্ধমানের শিল্পাঞ্চল বা খড়্গপুর।

শনিবার কালীপুজোর রাতটা ছিল অনেক সংযত। কিন্তু রবিবার রাতে শিলিগুড়ি, আসানসোল, কুলটি, খড়্গপুরে মানুষের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল নিষিদ্ধ বাজি। মিশ্র জনগোষ্ঠীর এলাকাতেই যে রবিবার রাতে যে অবাধে শব্দবাজি ফেটেছে ফেটেছে তা মেনেছে স্থানীয় প্রশাসনও।

পরিবেশ কর্মীদের বক্তব্য, যে সব জেলায় মানুষের সদিচ্ছার পাশাপাশি, প্রশাসনের সক্রিয়তা দেখার মতো ছিল, সেখানে বাজি ফেটেছে নিয়ন্ত্রিত ভাবে। আবার যেখানে প্রশাসনের রাশ আলগা বা সচেতনতার অভাব ছিল, সেখানে শব্দ-দানবকে বশে রাখা যায়নি।

শব্দবাজির দাপটে কলকাতাকে রবিবার ১০ গোল দিয়েছে শিলিগুড়ি। উত্তরবঙ্গের ওই শহরের খুব কাছেই থেমেছে দক্ষিণবঙ্গের দুর্গাপুর-আসানসোল শিল্পাঞ্চল। শনিবার রাতে বাজির দাপট কম থাকলেও রবিবার দেওয়ালির রাতে শিলিগুড়ি, কুলটি, বরাকর, বার্নপুরে রাতভর দেদার বাজি ফেটেছে। শিলিগুড়িতে একটা সময় বাজির তাণ্ডব এতটাই বেশি ছিল যে মনে হচ্ছিল, গুলি-বোমা নিয়ে দু’পক্ষের লড়াই হচ্ছে। কলকাতার মতোই প্রচুর নিষিদ্ধ বাজি পুলিশি অভিযানের আগেই বাজারে চলে আসায়, এ বার শব্দ-দানবের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা যায়নি বলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কমিশনারেট কর্তাদের দাবি। আবার যেখানে শব্দ-দানব নিয়ন্ত্রণ মানেনি সেখানে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদও নিষ্ক্রিয় ছিল বলে অভিযোগ।

‘রণক্ষেত্র’ শিলিগুড়ি

চার্চ রোড, সেবক রোড থেকে পঞ্জাবিপাড়া, হাকিমপাড়া, আশ্রমপাড়া, দুইমাইল, খালপাড়া, স্টেশন ফিডার রোড, প্রধান নগর এলাকা রবিবার সন্ধ্যা থেকেই কাঁপছিল বাজির আওয়াজে। সন্ধ্যা ৭টায় শুরু। বাজি ফাটানোর ‘প্রতিযোগিতা’ চলে রাত ১টা পর্যন্ত। দরজা-জানলা বন্ধ করে বসে থাকতে হয় মানুষকে। বেশ কিছু এলাকায় রাস্তায় আটকেও বাজি ফাটানোর ধুম দেখা দিয়েছে। পুলিশ-ভ্যান ইতিউতি গিয়েছে। কিন্তু শব্দবাজি ফাটানো বন্ধ হয়নি। শহরে এত নিষিদ্ধ বাজি কী ভাবে বিক্রি হল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বহু বাসিন্দা।

‘বেসামাল’ বর্ধমান

কালীপুজোর রাতে উপদ্রব কম থাকলেও রবিবার সন্ধ্যা থেকে নিষিদ্ধ শব্দবাজির দাপট দেখা গিয়েছে বর্ধমান শিল্পাঞ্চলের নানা জায়গায়। তবে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আসানসোলের আধিকারিক সুদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। নানা এলাকায় শব্দাঙ্ক মাপার যন্ত্র বসানো ছিল। কোথায়, কেমন বাজি ফেটেছে তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।’’

‘লাগামহীন’ খড়্গপুর

মোড়ের মাথায় পুলিশ। অথচ, কয়েক হাত দূরে অবাধে ফেটে চলেছে নিষিদ্ধ শব্দবাজি! রাত যত বেড়েছে, দাপটও তত বেড়েছে শব্দ-দৈত্যের। অথচ, এ বার সব ধরনের শব্দবাজি নিষিদ্ধ হয়েছিল খড়্গপুরে। মহকুমাশাসকের সেই নিষেধাজ্ঞা কার্যত প্রহসনে পরিণত হয়। এমনকী, বাড়ির পুজোর বিসর্জনের শোভাযাত্রাতেও শব্দবাজি ফাটানো হয়েছে অবাধে।

বীরভূমেও ফাটল বাজি

শনিবার, কালীপুজোর রাত মোটের উপরে নির্বিঘ্নে কাটলেও ২৪ ঘণ্টা পরেই বীরভূমে স্বমহিমায় দেখা দিল শব্দ-দানব। রাতভর শব্দবাজির দাপটে অতিষ্ঠ হলেন কমবেশি জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। ফাটল এন্তার চকলেট বোমা, দোদমা। তবে, স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, উৎপাত মূলত ছিল শহর ও লাগোয়া এলাকায়।

ফানুসে খুশি কৃষ্ণনগর

কৃষ্ণনগরে শব্দ-দানবের উৎপাত প্রায় নেই। দীপাবলির দখল নিল নানা রঙের ফানুস। এ বছর প্রথম থেকেই শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত করার ব্যাপারে পুলিশ ছিল সক্রিয়। পাঁচ জন ধরা পড়েছে। বাজেয়াপ্ত হয়েছে বহু টাকার নিষিদ্ধ শব্দবাজি। শহরের বাসিন্দা চিকিৎসক মহিতোষ বিশ্বাস বলেন, “পুজোর রাতে কান ফাটানো বাজির শব্দ পাইনি বললেই চলে। এটা সমাজের পক্ষে স্বাস্থ্যকর।” চিনে-ফানুস মন জয় করেছে বহরমপুরের মানুষেরও। শনিবার রাত সাড়ে ১২টায় বহরমপুর গির্জার মোড়ে, ব্যারাক স্কোয়ার ময়দানে এলাকাবাসী সোৎসাহে ফানুস উড়িয়েছেন।

অন্য চুঁচুড়া

চুঁচুড়া, চন্দননগর, ভদ্রেশ্বর, শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়া, আরামবাগের মতো শহরাঞ্চলে শব্দবাজির পরিবর্তে মানুষের বেশি ঝোঁক ছিল তুবড়ি, চরকি, রংমশাল বা হাউইয়ের মতো আতসবাজিতে। হুগলির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল) গৌরব লাল বলেন, ‘‘শব্দবাজিতে লাগাম পরাতে অভিযান চালানো হয়েছে। নানা জায়গায় ধরপাকড় হয়েছে। মানুষও অনেকটা সচেতন হয়েছেন। তারই ফল মিলেছে।’’ চন্দননগরের বাসিন্দা, পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘শব্দবাজি অনেক কম ফেটেছে। মানুষের মনে যে চেতনা এসেছে, তাতে আগামী দিনে এর দাপট থেকে পুরোপুরি নিস্তার মিলতে পারে।’’

নিয়ন্ত্রিত দুই ২৪ পরগনা

উত্তর ২৪ পরগনার দমদম, বারাসত, হাবরায় বেশ কিছু জায়গায় শব্দবাজি ফেটেছে। তবে অন্য বারের তুলনায় তা কিছুটা কম। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে শব্দবাজির দাপট তুলনায় কম। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারে শব্দবাজির দাপট গত বারের তুলনায় কম। ক্যানিংয়ে শব্দ বাজি ফাটানোর অভিযোগে গত দু’দিনে ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুরুলিয়ায় দাপট কম

কালীপুজোর রাতে ছিল টুকটাক। বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু শব্দবাজি ফাটায় উপদ্রব বলতে যা বোঝায়, সেটা এ বার পোহাতে হয়নি পুরুলিয়ার আমজনতাকে। তবে, রবিবার, দিওয়ালির রাতে কিছুটা হলেও শব্দবাজির আওয়াজ মিলেছে। কিছুটা দাপট ছিল পুরুলিয়া সদর ও আদ্রায়। তবে গতবারের চেয়ে এ বছর কালীপুজো ও দীপাবলিতে শব্দবাজির প্রকোপ অনেকটাই কম বলে জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। পুলিশের দাবি, দুর্গাপুজো থেকেই শব্দবাজির জন্য ধরপাকড় শুরু হয়েছিল। এটা তারই ফল।

Diwali Sound crackers control
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy