E-Paper

যাদবপুরের ছাত্রীমৃত্যুতে দুই ছাত্রের নামে নালিশ

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোরাম ফর স্টুডেন্টস উইথ ডিজ়েবিলিটি (এফএসডি) সদস্যেরা বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেন। তাঁদের দাবি, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে গঠন করুন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০৪:৫১
jadavpur university

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।

শিলিগুড়ির বাসিন্দা, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত দৃষ্টিহীন এক মেধাবী ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠল বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক ছাত্র ও এক গবেষক-ছাত্রের বিরুদ্ধে। গত ১৮ জানুয়ারি জলপাইগুড়ির মালবাজারে দাদুর বাড়িতে মৃত অবস্থায় উদ্ধার হয় ইংরেজি দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রী রেনেসাঁ দাসের (২০) দেহ। পরিবারের বক্তব্য, মানসিক বিপর্যয়ের জেরেই ওই ছাত্রী আত্মঘাতী হয়েছেন। ঘটনার সাত দিন পরে স্থানীয় মাল থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছে ছাত্রীর পরিবার। পরিবারের আরও অভিযোগ, অভিযুক্ত দুই সিনিয়র ছাত্র রেনেসাঁকে মাদকের নেশায় জড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। তার জেরেই মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন ছাত্রীটি।

ছাত্রীটির বাবা বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘মেয়ের মৃত্যুর শোকে প্রথমে আমরা ভেঙে পড়েছিলাম। প্রারম্ভিক শোক কাটিয়ে উঠে অভিযোগ করার সিদ্ধান্ত নিই।’’ তিনি জানান, অভিযুক্ত দুই সিনিয়র দৃষ্টিহীন ছাত্রের ব্যাপারে প্রথমে বাড়িতে কিছু না বললেও পরে তাঁদের কথা রেনেসাঁ জানান। বিশ্বজিৎ জানান, মেয়ের আচরণে তাঁরা অসঙ্গতি লক্ষ করেন গত কয়েক মাস ধরে। পাশাপাশি, যাদবপুরে গত বছর ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছিল পরিবারটি। এ সব ভেবে ছ’মাস আগে মেয়েকে শিলিগুড়িতে এনে এক মনোবিদের পরামর্শে তাঁর চিকিৎসা করাচ্ছিলেন বলে রেনেসাঁর বাবা জানান। জানা গিয়েছে, মেয়ে মাদকচক্রে জড়িয়ে পড়ছে— এমন আশঙ্কা করে হস্টেল থেকে তাঁকে শিলিগুড়ির বাড়িতে ফিরিয়ে এনেছিলেন বাবা-মা। পরীক্ষার সময় মা স্বর্ণালী দাস মেয়ের সঙ্গে যাদবপুরে যেতেন, আবার পরীক্ষা শেষে শিলিগুড়ি নিয়ে আসতেন। কিন্তু, লাগাতার ফোনে মেয়েকে দুই অভিযুক্ত ছাত্র উত্ত্যক্ত করতেন বলে তাঁরা অভিযোগ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পরীক্ষা দিয়ে গত ১৬ জানুয়ারি কলকাতা থেকে শিলিগুড়িতে নিয়ে আসার সময় রেনেসাঁ কিছু দিনের জন্য মালবাজারে দাদুর বাড়িতে থাকতে চেয়েছিলেন। অভিযোগ, মৃত্যুর আগের দিন অভিযুক্ত এক ছাত্রের ফোন এসেছিল ছাত্রীটির কাছে।

পরিবার সূত্রের খবর, ছোট থেকে রেনেসাঁ মালবাজারের ১ নম্বর ওয়ার্ডের রামকৃষ্ণ কলোনিতে দাদুর বাড়িতেই থাকতেন। সেখান থেকেই মাধ্যমিক দিয়েছেন। রেনেসাঁর বাবা কর্মসূত্রে সপরিবার শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ায় থাকেন। তাই রেনেসাঁ উচ্চ মাধ্যমিক পড়েন শিলিগুড়ি গার্লস থেকে। দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীদের মধ্যে গোটা রাজ্যে উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম হন রেনেসাঁ। এর পরেই যাদবপুরে ভর্তি হন ইংরেজি নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিহীন ছাত্রীদের হস্টেলে থাকতেন রেনেসাঁ। তাঁর বাবা শনিবার জানান, গত ২৫ তারিখ মালবাজার থানা, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা। উপাচার্যের ই-মেলে ও রেজিস্ট্রি ডাকেও অভিযোগপত্র পাঠিয়েছেন বলে জানান তিনি।

এ দিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোরাম ফর স্টুডেন্টস উইথ ডিজ়েবিলিটি (এফএসডি) সদস্যেরা বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেন। তাঁদের দাবি, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে গঠন করুন। অভিযুক্ত দু’জনকে আপাতত যেন ক্যাম্পাসে ঢুকতে না দেওয়া হয়। এঁদের ডিগ্রি যেন আপাতত না দেওয়া হয়। আরও দাবি, অপরাধ করলে দৃষ্টিহীন বলে যেন লঘু ভাবে তা না দেখা হয়।

মালবাজারের এসডিপিও নীলেশ শ্রীনিবাস গায়কোয়াড় বলেন, ‘‘মালবাজার থানায় মামলা রুজু করে আমরা তদন্ত শুরু করে দিয়েছি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jadavpur University Death

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy