পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের বিষয়ে তো বটেই, সামগ্রিক ভাবে বিদেশনীতির বিষয়েও তৃণমূল কেন্দ্রীয় সরকারের পাশে রয়েছে। কিন্তু তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি-র ‘নাক গলানো’ যে বাংলার শাসকদল বরদাস্ত করবে না, সেই বার্তা স্পষ্ট করে দিলেন দলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা হলেও কেন্দ্রীয় সরকার ঠিক করেছে, ‘পাক মদতপুষ্ট’ সন্ত্রাসবাদের কথা সারা দুনিয়াকে জানাতে দেশ থেকে বহুদলীয় প্রতিনিধিদল পাঠাবে। সেই দল দেশে দেশে ঘুরে বলবে, কী ভাবে পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে মদত দিচ্ছে। প্রতিনিধিদলে বহরমপুরের তৃণমূল সাংসদ ইউসুফ পাঠানের নাম রাখা হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূল ইউসুফকে দিয়ে তাঁর নাম প্রত্যাহার করিয়েছে। দলগত ভাবে এ বিষয়ে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের অবস্থান এক হলেও সনিয়া গান্ধী-রাহুল গান্ধীর দল কিন্তু তাঁদের সাংসদ শশী তারুরের নাম ওই প্রতিনিধিদল থেকে প্রত্যাহার করাতে পারেনি।
আরও পড়ুন:
সোমবার উত্তরবঙ্গ সফরে রওনা হওয়ার আগে এ প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে মমতা বলেন, ‘‘প্রতিনিধিদলে নাম দেওয়ার বিষয়ে আমাদের দলের কাছে কোনও অনুরোধ আসেনি। প্রতিনিধিদলে আমাদের দলের কে যাবেন, তা আমরাই ঠিক করব। এটা অন্য কারও পছন্দে হবে না।’’ মমতা এ-ও জানিয়েছেন, এর পরেও যদি কেন্দ্রীয় সরকার তৃণমূলকে ‘অনুরোধ’ করে, তাঁর দল সেই অনুরোধ নিশ্চয়ই বিবেচনা করবে। দিল্লিতে বিদেশ বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ার আগে এ বিষয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদকে পাকিস্তান কী ভাবে মদত দিচ্ছে, তা নিশ্চয়ই আন্তর্জাতিক মহলে পৌঁছে দিতে হবে। কিন্তু সেখানে তৃণমূল, কংগ্রেস, ডিএমকে, আম আদমি পার্টি, সমাজবাদী পার্টির কে কে থাকবেন, তা বিজেপি ঠিক করে দিতে পারে না। সংশ্লিষ্ট দলই তা ঠিক করবে।’’
রাজনৈতিক ভাবে এই বিষয়ে সর্বভারতীয় কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র জয়রাম রমেশও বিজেপি-কে বিঁধেছেন। কিন্তু দলগত ভাবে কংগ্রেস তিরুঅনন্তপুরমের সাংসদ তারুরের নাম প্রত্যাহার করাতে পারেনি। গত কয়েক দিন ধরেই তারুরের নানাবিধ মন্তব্য নিয়ে জল্পনা তৈরি হচ্ছে। হঠাৎ করেই তাঁর মুখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘স্তুতি’ শোনা যাচ্ছে। সেই তারুরকে বহুদলীয় প্রতিনিধিদলের ‘নেতা’ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তারুরের বিষয়ে জয়রাম বলেছেন, ‘‘কংগ্রেসে থাকা আর কংগ্রেসের হয়ে থাকার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।’’ কিন্তু বাস্তব হল, তারুরের নাম প্রত্যাহার করাতে পারেনি কংগ্রেস। যেমন প্রতিনিধিদল থেকে প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদীর নাম প্রত্যাহার করাতে পারেনি উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনাও। দলের মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত এই প্রক্রিয়া নিয়ে বিজেপির সমালোচনা করেছেন। কিন্তু তাঁদের অবস্থাও খানিকটা কংগ্রেসের মতোই। সে দিক থেকে তৃণমূল ‘নজির’ তৈরি করতে পারল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের অনেকে।
উল্লেখ্য, তৃণমূলের সংসদীয় দলকে এড়িয়েই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু তৃণমূল সাংসদ ইউসুফের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর পাসপোর্ট চেয়েছিলেন। তার পরেই মাঠে নেমে বিষয়টি আটকায় তৃণমূল। অনেকের মতে, বিজেপির পাশাপাশি তৃণমূল দলীয় স্তরেও সাংসদদের ‘বার্তা’ দিতে চাইল, দল কাউকে ‘তারুর’ হতে দেবে না। কারণ, দলের জন্যই তাঁরা সাংসদ। যা করতে হবে দলের অনুমোদন নিয়েই করতে হবে।