আগামী ৯ জুন থেকে শুরু হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বাদল অধিবেশন। নিলম্বন (সাসপেনশন) উঠে যাওয়ার পর সেই অধিবেশনে যোগ দিতে পারেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। অধিবেশনের প্রথম দিন থেকেই ‘আক্রমণাত্মক’ হতে চাইছে বিজেপি পরিষদীয় দল। চাকরিহারা শিক্ষকদের ওপর পুলিশি লাঠিচার্জ এবং তৃণমূল নেতা সব্যসাচী দত্তের অনুগামীদের ‘হামলার’ ঘটনার কথা উল্লেখ করে অধিবেশন জুড়ে নানা আন্দোলনের কৌশল ঠিক করছে তারা। সম্প্রতি বিকাশ ভবনের সামনে আন্দোলনরত চাকরিহারা শিক্ষকদের অবস্থানমঞ্চে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা। সেখানে গিয়ে তিনি জানিয়েছিলেন, শিক্ষকদের উপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে বিধানসভার অধিবেশন অচল করে দেওয়া হবে।
সোমবার উত্তরবঙ্গে রওনা হওয়ার আগে বিমানবন্দরে এই সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘আমি চাকরিহারা শিক্ষকদের অবস্থানমঞ্চে গিয়ে বলে এসেছি, বিরোধী দলনেতা কোনও একটি রাজনৈতিক দলের নয়। রাজ্য সরকার এবং সরকারি দলের দ্বারা আক্রান্ত সকলের প্রতিনিধি তিনি। তাঁরা যদি আমাদের সুনির্দিষ্ট কোনও প্রস্তাব দেন, সেই বিষয়ে আমি কথা বলে তাঁদের জানাব।’’ শুভেন্দু আরও বলেন, ‘‘আমি সে দিন খোলা মঞ্চে তাঁদের প্রস্তাব দিয়েছিলাম আপনারা কী ধরনের সহযোগিতা চান আমাদের বলুন। যে ধরনের সহযোগিতা আমাদের তরফ থেকে সম্ভব, তা অবশ্যই আমরা করব।’’
আরও পড়ুন:
বিরোধী দলনেতার এমন মন্তব্যেই অনেকে তীব্র আন্দোলনের গন্ধ পেতে শুরু করেছেন। ৯ জুন বিধানসভার অধিবেশনের প্রথম দিন সোমবার শোকপ্রস্তাব পেশের পর শেষ হয়ে যাবে। মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন। বিজেপি পরিষদীয় দল সূত্রের খবর, সে দিন থেকেই চাকরিহারা শিক্ষকদের দাবি-দাওয়ার পাশাপাশি তাঁদের ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে জঙ্গি আন্দোলন চালাবেন শুভেন্দুরা। এক বিজেপি বিধায়কের কথায়, ‘‘এই সমাজ গঠন করেন শিক্ষকরা। আগামী প্রজন্মকে পথ দেখান তাঁরাই। তাঁরাই যখন শাসকদলের পুলিশ এবং শাসকদলের নেতার গুন্ডাবাহিনীর কাছে মার খান, তখন প্রধান বিরোধীদল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব কয়েক গুণ বেড়ে যায়। দায়িত্ববোধ থেকেই আগামী বিধানসভা অধিবেশনে এই সংক্রান্ত বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর জবাব চাইব। তেমনই নানা কৌশলে প্রতিবাদের ঝড়ও তুলব।’’ ওই বিধায়ক আরও বলেন, ‘‘শুধু শিক্ষকেরাই নন, গত বছর আরজি কর আন্দোলনের সময় চিকিৎসকদের সঙ্গে কী ব্যবহার করা হয়েছিল, তা-ও সারা বাংলা দেখেছে। তখনও আমরা বিধানসভায় প্রতিবাদ করেছিলাম। সেই প্রতিবাদের সুর এ বার আরও তীব্র ভাবে টের পাবে শাসকদল।’’
বিজেপি পরিষদীয় দল যে শিক্ষক আন্দোলন এবং তাদের উপর ‘হামলার’ ঘটনা তুলে বিধানসভা উত্তাল করবে, তা ইতিমধ্যে আঁচ করতে পেরেছে তৃণমূল পরিষদীয় দল। তাই অধিবেশনের শুরুর দিকেই পাকিস্তানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন সিঁদুর’-কে কুর্নিশ জানিয়ে একটি প্রস্তাব আনার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করছে তারা। কেন্দ্রের শাসক বিজেপি ‘অপারেশন সিঁদুর’-কে নিজেদের সাফল্য হিসেবে তুলে ধরতে চায়। ফলে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির পরিষদীয় দল বিধানসভার অধিবেশনে তার বিরোধিতা করতে পারবে না। বরং তৃণমূলের সঙ্গে সুর মিলিয়েই তাতে সমর্থন দিতে হবে। অধিবেশনের রূপরেখা ঠিক করতে সাবধানী পদক্ষেপ নিতে চায় তৃণমূল পরিষদীয় দলও।