Advertisement
E-Paper

স্মৃতির আলোয় সত্যেন্দ্রনাথ-প্রশান্তচন্দ্র স্মরণ

অক্সফোর্ড স্ট্রিটের দোকানি কিছুতেই ‘মহলানবীশ’ উচ্চারণ করতে পারছেন না। ঋজু চেহারার দীর্ঘকায় বাঙালি প্রশান্তচন্দ্রও তাঁকে নিজের পদবিটা উচ্চারণ না-করিয়ে ছাড়বেন না। এই নিয়েই বিলেতের মাটিতে চলেছিল দীর্ঘ লড়াই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:১৪
প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ এবং সত্যেন্দ্রনাথ বসু।

প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ এবং সত্যেন্দ্রনাথ বসু।

তিনি খাটে থাকলে বেড়াল মেঝেতে। আর তিনি মেঝেতে থাকলে পোষ্য বেড়াল খাটে। পদার্থবিদ্যার জটিল কোয়ান্টাম তত্ত্বের এটাই বোধ হয় সরলতম রূপ! উত্তর কলকাতার ঈশ্বর মিল লেনে বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর বাড়িতে এই সরল ব্যাখ্যা চাক্ষুষ করেছেন তাঁর অনেক ছাত্র-বন্ধুই।

অক্সফোর্ড স্ট্রিটের দোকানি কিছুতেই ‘মহলানবীশ’ উচ্চারণ করতে পারছেন না। ঋজু চেহারার দীর্ঘকায় বাঙালি প্রশান্তচন্দ্রও তাঁকে নিজের পদবিটা উচ্চারণ না-করিয়ে ছাড়বেন না। এই নিয়েই বিলেতের মাটিতে চলেছিল দীর্ঘ লড়াই।

বিজ্ঞানচর্চায় সত্যেন্দ্রনাথ ও প্রশান্তচন্দ্রের অবদান নিয়ে নানান গুরুগম্ভীর কথাবার্তা শোনা যায়। তবে সোমবার বরাহনগরে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠা দিবসে পদার্থবিজ্ঞানী বিকাশ সিংহের বক্তৃতায় উঠে এল এমনই কিছু ব্যক্তিগত কথা। বর্তমানে রাজ্যের শিক্ষার হাল যে ক্রমশ নিম্নগামী, সেই অভিযোগ বারে বারেই করে চলেছেন শিক্ষাবিদেরা। বিকাশবাবু জানালেন, পরাধীন ভারতে বাঙালির গরিমা বিশ্বের দরবারে পৌঁছেছিল এমন সব মনীষীর হাত ধরেই। স্বাধীনোত্তর কালেও রাজ্যের শিক্ষা-মানচিত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত প্রশান্তচন্দ্র প্রতিষ্ঠিত স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট। অনেকেই বলেন, আজও রাজ্যের শিক্ষা-মানচিত্রের ধারার থেকে স্বতন্ত্র বিন্দুতে অবস্থান করছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কলকাতায় প্রথম কম্পিউটার আনেন প্রশান্তচন্দ্রই। ‘‘অথচ এই রাজ্যের নেতারাই পরে কাজ হারানোর অজুহাতে কম্পিউটারের বিরোধিতা করেছেন,’’ মন্তব্য বিকাশবাবুর।

প্রশান্তচন্দ্রের সঙ্গে বিকাশবাবুর আলাপ গবেষক অবস্থায়। তবে আচার্য সত্যেন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর পরিচয় স্কুলবেলাতেই। বিকাশবাবুদের কান্দির স্কুলে বিজ্ঞান পাঠাগারের উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন তিনি। উঠেছিলেন বিকাশবাবুদের বাড়িতেই। বৃদ্ধ বয়সেও বিকাশবাবু মনে করতে পারেন, সাদা চুলের বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী সে-দিনের শিশুটির সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন সহজ ভাবেই। স্কুল-কলেজের পাট চুকিয়ে বিলেতে পড়তে গিয়েছিলেন বিকাশবাবু। সেই সময়ে এক বার দেশে ফিরে প্রশান্তচন্দ্রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলেন। ফোনে আলাপের পরেই মধ্যাহ্নভোজের ডাক পান তিনি। ‘‘ফোনেই বুঝেছিলাম, আদ্যোপান্ত বাঙালি রাশিবিজ্ঞানী বাংলায় কথা বললে একটিও ইংরেজি শব্দ উচ্চারণ করেন না। বিলেতে ফিরেও আচার্য ও তাঁর স্ত্রীর আতিথেয়তা মনে থেকে গিয়েছিল,’’ বললেন বিকাশবাবু।

প্রশান্তচন্দ্রের কদর বুঝেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। পঞ্চবার্ষিকী যোজনায় তাঁর অবদান অনেকেরই জানা। কিন্তু অনেক বাঙালিরই আক্ষেপ, বোস-আইনস্টাইন সংখ্যায়ন এবং কোয়ান্টাম তত্ত্ব নিয়ে গবেষণার জন্য সত্যেন্দ্রনাথের তো দু’বার নোবেল পাওয়ার কথা! সেটা হয়নি। বিকাশবাবুর বক্তব্য, প্রতি বছরই তো পদার্থবিদ্যায় কেউ-না-কেউ নোবেল পুরস্কার পান। তাঁদের ক’জনকে মানুষ মনে রাখে!? কিন্তু সত্যেন্দ্রনাথ যে-গবেষণা করে গিয়েছেন, তার জন্য সভ্যতার শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞানের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন তিনি।

প্রথিতযশা বিজ্ঞানীর উক্তি ধার করেই বলা চলে, বিজ্ঞানে আবিষ্কারটাই আসল কথা। কে করলেন, তাতে কী বা যায়-আসে!

Satyendra Nath Bose Prasanta Chandra Mahalanobis Indian Statistical Institute ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy