বুধবার সুপ্রিম কোর্টে এসআইআর সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে শুরুতেই উঠে আসে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতির কথা। বুথ স্তরের আধিকারিক (বিএলও)-দের উপর কাজের চাপ বাড়ছে বলে যে অভিযোগ উঠে এসেছে, তা আদালতের নজরে আনা হয়। উঠে আসে পশ্চিমবঙ্গে বিএলও-র আত্মহত্যার অভিযোগের কথাও।
সুপ্রিম কোর্টের নতুন প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্তের এজলাসে বুধবার শুনানির জন্য ওঠে এসআইআর মামলা। তাঁর সঙ্গে বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী। শুনানির শুরুতে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ এজলাসে জানান, যে সময়সীমার মধ্যে এসআইআর করা হচ্ছে, তাতে বিএলও-দের উপর প্রচুর চাপ তৈরি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের একজন বিএলও কাজের চাপ সামলাতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন বলেও জানান তিনি।
‘এসআইআরের কাজের চাপে’ এখনও পর্যন্ত রাজ্যে তিন জন বিএলও-র মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় বিএলও-দের উপর কাজের চাপের প্রসঙ্গ উঠে এল সুপ্রিম কোর্টেও। যদিও বিএলও-দের মৃত্যু প্রসঙ্গে ইতিমধ্যে মুখ খুলেছে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও)-এর দফতর। গত সোমবার সিইও দফতর থেকে জানানো হয়, কী ভাবে বিএলও-দের মৃত্যু হয়েছে, তা নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টও চাওয়া হয়েছে। কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে এই মর্মে কমিশনকে জানানো হবে।
সিইও মনোজ আগরওয়াল ওই সময় আরও জানান, কোনও বিএলও কাজের মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়লে কিংবা শারীরিক সমস্যা থাকলে ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ইআরও) সেই বিএলও-কে পরিবর্তন করতে পারবেন। এর জন্য সিইও-র অনুমতির প্রয়োজন নেই। বুধবার পশ্চিমবঙ্গের মামলায় নির্বাচন কমিশনের কাছে জবাব তলব করছে সুপ্রিম কোর্ট। আগামী ৯ ডিসেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
বুধবারের শুনানিতে নির্বাচন কমিশন আদালতে জানায়, বুথস্তরের আধিকারিক (বিএলও)-রা স্বাক্ষর করে ভোটারদের থেকে এনুমারেশন ফর্ম গ্রহণ করলেই তা জমা হয়েছে বলে ধরা হবে। ডিজিটাইজ়েশনের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই বলে জানায় কমিশন। তাদের বক্তব্য, ডিজিটাইজ়েশন কমিশনের নিজস্ব কাজ। ডিজিটাইজ়েশন না হলেও ফর্ম জমা হয়েছে বলে ধরা হবে।
আরও পড়ুন:
মধ্যাহ্ন বিরতির পরে এসআইআর সংক্রান্ত মূল মামলার শুনানি শুরু হয়। কী ভাবে দু’মাসের মধ্যে এসআইআর হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন করেন আইনজীবী কপিল সিব্বল। যাঁরা নিরক্ষর, লিখতে-পড়তে জানেন না, তাঁরা কী করবেন, সওয়াল করেন সিব্বল। কী ভাবে এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করতে হয়, তা প্রত্যন্ত এলাকার মানুষেরা কী ভাবে বুঝবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন আইনজীবীর। উঠে আসে আধার কার্ডের প্রসঙ্গও।
প্রধান বিচারপতি কান্ত জানান, আধার কার্ড হল এমন একটি বিষয়, যার মাধ্যমে সরকারি সুযোগসুবিধা পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, “ধরুন কেউ প্রতিবেশী দেশের বাসিন্দা। কেউ শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন। আপনারা রেশনের জন্য আধার দিচ্ছেন। এটি আমাদের সাংবিধানিক নীতির অংশ। কিন্তু শুধুমাত্র তাঁকে আধার নথি দেওয়া হয়েছে বলে কি তাঁকে এখন ভোটার হিসেবেও গণ্য করা উচিত?” বৃহস্পতিবার ফের এই মামলাটি শুনবে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।