মাঠ ভরা সবুজ ধান, দু’পাশে পুকুর, ফুল বাগান। আর মাঝে খড়ের চাল, মাটির দেওয়ালের বাড়ি। হইচই নেই। গ্রামবাসীর উকিঝুঁকি নেই। থাকার মধ্যে রয়েছেন শুধুমাত্র দুই পুলিশ কনস্টেবল। গত এক বছর ধরে তাঁরাই পাহারা দিয়ে চলেছেন শিমুলিয়ায় জেএমবি-র এক সময়কার ঘাঁটি তথা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
যেখানে নারীশিক্ষার নামে জেহাদি শিক্ষা, এমনকী অস্ত্রশিক্ষার প্রাথমিক পাঠও দেওয়া হত। বোরখার আড়ালে কী ভাবে বিস্ফোরক পাচার করতে হবে, সেখানে হত তা-ও। যেখানে প্রশিক্ষণ দিতে-দিতেই রাজিয়া আর আলিমা নামে দুই তরুণী গিয়ে পৌঁছয় খাগড়াগড়ের সেই ভাড়াবাড়িতে, কিছু দিন বাদেই যার দোতলায় বিস্ফোরণ ঘটে। আর দু’টো লাশ খাটের তলায় লুকিয়েও ধরা পড়ে গোয়েন্দাদের যারা বলে, জেহাদের জন্য মানুষ কোতল করতেও তাদের হাত কাঁপবে না।
গোয়েন্দাদের দাবি, গত কয়েক বছরে ওই মাদ্রাসা থেকে অন্তত ২২টি মেয়ে জেহাদি হয়ে বেরিয়েছে। তাদের মধ্যে ৫-৭ জন ছাড়া বাকিরা সম্ভবত বাংলাদেশে চলে গিয়েছে। সেখানে আশপাশের জেলা তো বটেই, এমনকী বাংলাদেশ থেকেও মেয়েরা আসত। হ্যারিকেনের আলোয় রাতভর চলত জেহাদি পাঠ। মাদ্রাসাটি হয়েছিল বোরহান শেখের জমিতে। তাঁর স্ত্রী ফরিদা বিবিও বাংলাদেশি নাগরিক বলে ধারণা গোয়েন্দাদের। বোরহানের মা আসুরা বিবি বুধবার বলেন, “ফরিদাও মাদ্রাসায় পড়াতে যেত। ওর বাড়ি কোথায় আমরা জানতাম না। জানতে চাইলেও কিছু বলত না। এই নিয়ে ছেলের সঙ্গে আমাদের অশান্তি চলছিল। গত বার কোরবানির আগে কাউকে কিছু না বলে দুই মেয়ে নিয়ে ওরা যে কোথায় চলে গেল, আর খোঁজ পাইনি।”
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, কী ভাবে মেয়েদের জেহাদি করে তোলা হবে, তার মূল পরিকল্পনা করত কৃষ্ণবাটি গ্রামের ইউসুফের স্ত্রী আয়েষা বিবি। সে-ই বীরভূম ও মুর্শিদাবাদের বেশ কয়েকটি মাদ্রাসা ঘুরে বাছাই করা ‘ছাত্রী’ তুলে এনেছিল। ইউসুফের ভাই বাণী ইসরাইল ও নজরুল শেখ বলেন, “আমরা যা বলার এনআইএ-কে বলেছি। এক বছর ধরে ভাই ও ভাবীর খোঁজ নেই।” বাবা-মা অসুস্থ দাবি করে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে দিতে চান নি ইউসুফের ভাইরা।
ফরিদা এবং আয়েষা ছাড়াও ওই মাদ্রাসায় নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিতে যেত বীরভূমের কীর্ণাহারের নিমড়া গ্রামের জিন্নাতুর। গোয়েন্দাদের ধারণা, ওই মাদ্রাসাতেই জেএমবি চাঁই কওসরের সঙ্গে জিন্নাতুরের বিয়ে হয়। বাংলাদেশে বিএনপি জমানার শেষ দিকে জেএমবি যেমন প্রমীলা বাহিনী গড়ে তুলেছিল (যাতে কিছু আত্মঘাতী জঙ্গিও ছিল) এই রাজ্যেও সেই ধাঁচেই বাহিনী গড়ার চেষ্টা করছিল তারা। খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণস্থল থেকে ধৃত রাজিয়া আর আলিমা বাদে কিন্তু এই মেয়েদের এক জনও ধরা পড়েনি।