Advertisement
E-Paper

হাতের পাঁচ রাজিয়ারা, গায়েব প্রমীলা বাহিনী

মেয়েদের মাথা খেয়েই বাড়ির অন্যদের দলে টানার ছক কষেছিল জামাতুল মুজাহিদিন (বাংলাদেশ) ওরফে জেএমবি।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৫৮
এখন শিমুলিয়ার সেই মাদ্রাসা। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

এখন শিমুলিয়ার সেই মাদ্রাসা। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

মেয়েদের মাথা খেয়েই বাড়ির অন্যদের দলে টানার ছক কষেছিল জামাতুল মুজাহিদিন (বাংলাদেশ) ওরফে জেএমবি।

তথাকথিত মাদ্রাসায় ডেকে এনে কিশোরী-তরুণীদের জেহাদের মন্ত্র দেওয়া হত। তাদের কাছে জেহাদি কথাবার্তা শুনে আকৃষ্ট হতেন বাবা-মা, কখনও স্বামী। ধীরে-ধীরে গোটা পরিবারই জড়িয়ে যেত। এনআইএ-র এক গোয়েন্দার কথায়, “খাগড়াগড় বিস্ফোরণে আহত আব্দুল হাকিম তো তার স্ত্রী আলিমার কাছ থেকেই জেহাদি হওয়ার পাঠ নিয়েছিল!”

এ রকমই এক মাকড়সার জালের কেন্দ্রে ছিল বর্ধমানের একটি অখ্যাত গ্রামের অখ্যাত ‘মাদ্রাসা’— বর্ধমানে মঙ্গলকোটের শিমুলিয়া মাদ্রাসা।

মাঠ ভরা সবুজ ধান, দু’পাশে পুকুর, ফুল বাগান। আর মাঝে খড়ের চাল, মাটির দেওয়ালের বাড়ি। হইচই নেই। গ্রামবাসীর উকিঝুঁকি নেই। থাকার মধ্যে রয়েছেন শুধুমাত্র দুই পুলিশ কনস্টেবল। গত এক বছর ধরে তাঁরাই পাহারা দিয়ে চলেছেন শিমুলিয়ায় জেএমবি-র এক সময়কার ঘাঁটি তথা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।

যেখানে নারীশিক্ষার নামে জেহাদি শিক্ষা, এমনকী অস্ত্রশিক্ষার প্রাথমিক পাঠও দেওয়া হত। বোরখার আড়ালে কী ভাবে বিস্ফোরক পাচার করতে হবে, সেখানে হত তা-ও। যেখানে প্রশিক্ষণ দিতে-দিতেই রাজিয়া আর আলিমা নামে দুই তরুণী গিয়ে পৌঁছয় খাগড়াগড়ের সেই ভাড়াবাড়িতে, কিছু দিন বাদেই যার দোতলায় বিস্ফোরণ ঘটে। আর দু’টো লাশ খাটের তলায় লুকিয়েও ধরা পড়ে গোয়েন্দাদের যারা বলে, জেহাদের জন্য মানুষ কোতল করতেও তাদের হাত কাঁপবে না।

গোয়েন্দাদের দাবি, গত কয়েক বছরে ওই মাদ্রাসা থেকে অন্তত ২২টি মেয়ে জেহাদি হয়ে বেরিয়েছে। তাদের মধ্যে ৫-৭ জন ছাড়া বাকিরা সম্ভবত বাংলাদেশে চলে গিয়েছে। সেখানে আশপাশের জেলা তো বটেই, এমনকী বাংলাদেশ থেকেও মেয়েরা আসত। হ্যারিকেনের আলোয় রাতভর চলত জেহাদি পাঠ। মাদ্রাসাটি হয়েছিল বোরহান শেখের জমিতে। তাঁর স্ত্রী ফরিদা বিবিও বাংলাদেশি নাগরিক বলে ধারণা গোয়েন্দাদের। বোরহানের মা আসুরা বিবি বুধবার বলেন, “ফরিদাও মাদ্রাসায় পড়াতে যেত। ওর বাড়ি কোথায় আমরা জানতাম না। জানতে চাইলেও কিছু বলত না। এই নিয়ে ছেলের সঙ্গে আমাদের অশান্তি চলছিল। গত বার কোরবানির আগে কাউকে কিছু না বলে দুই মেয়ে নিয়ে ওরা যে কোথায় চলে গেল, আর খোঁজ পাইনি।”

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, কী ভাবে মেয়েদের জেহাদি করে তোলা হবে, তার মূল পরিকল্পনা করত কৃষ্ণবাটি গ্রামের ইউসুফের স্ত্রী আয়েষা বিবি। সে-ই বীরভূম ও মুর্শিদাবাদের বেশ কয়েকটি মাদ্রাসা ঘুরে বাছাই করা ‘ছাত্রী’ তুলে এনেছিল। ইউসুফের ভাই বাণী ইসরাইল ও নজরুল শেখ বলেন, “আমরা যা বলার এনআইএ-কে বলেছি। এক বছর ধরে ভাই ও ভাবীর খোঁজ নেই।” বাবা-মা অসুস্থ দাবি করে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে দিতে চান নি ইউসুফের ভাইরা।

ফরিদা এবং আয়েষা ছাড়াও ওই মাদ্রাসায় নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিতে যেত বীরভূমের কীর্ণাহারের নিমড়া গ্রামের জিন্নাতুর। গোয়েন্দাদের ধারণা, ওই মাদ্রাসাতেই জেএমবি চাঁই কওসরের সঙ্গে জিন্নাতুরের বিয়ে হয়। বাংলাদেশে বিএনপি জমানার শেষ দিকে জেএমবি যেমন প্রমীলা বাহিনী গড়ে তুলেছিল (যাতে কিছু আত্মঘাতী জঙ্গিও ছিল) এই রাজ্যেও সেই ধাঁচেই বাহিনী গড়ার চেষ্টা করছিল তারা। খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণস্থল থেকে ধৃত রাজিয়া আর আলিমা বাদে কিন্তু এই মেয়েদের এক জনও ধরা পড়েনি।

soumen dutta mangalkote poor ladies bait capture brainwash muslim male selective madrasa shimulia madrasa jmb bai jmb capture
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy