একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জন্য শিক্ষক নিয়োগের ইন্টারভিউ তালিকা প্রকাশের পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছেন ‘যোগ্য’ চাকরিহারা শিক্ষকেরা। শুধু তাঁরা নন, প্রশ্ন তুলছেন নতুন পরীক্ষার্থীরাও। কারণ, তাঁদের অনেকেরই নাম নেই স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) প্রকাশিত ইন্টারভিউয়ের তালিকায়!
শনিবার সন্ধ্যায় ইন্টারভিউয়ের তালিকা প্রকাশ করে এসএসসি। উল্লেখ্য, গত ৭ নভেম্বর প্রকাশিত হয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশনের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জন্য শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ফল। শনিবার যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে পরীক্ষার্থী বুঝে নিতে পারবেন ইন্টারভিউয়ের জন্য তিনি যোগ্য কি না। আর সেই তালিকা প্রকাশের পরই চাকরি নিয়ে চিন্তায় পড়েন অনেক চাকরিপ্রার্থীই।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই আবার একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জন্য শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বসেছিলেন চাকরিহারা শিক্ষকেরা। তাঁদের মধ্যে অনেকেই ‘যোগ্য’ ছিলেন। তবে শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, পরীক্ষা দিয়ে তাঁদের চাকরি বজায় রাখতে হবে। সেই মতো পরীক্ষা দেওয়ার পরও ইন্টারভিউয়ের তালিকায় নাম থাকেন ভেঙে পড়েছেন অনেকে। চাকরিহারা শিক্ষক মেহবুব মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির কারণে আমাদের এই পরীক্ষায় বসতে হয়েছে। অনেকেই আন্দোলনের মধ্যে বহদিন রাস্তায় ছিলেন। সেই কারণে অনেকের পরীক্ষাই ভাল হয়নি। ডাক পাননি ইন্টারভিউতে।’’ তাঁর দাবি, ইন্টারভিউতে ডাক না-পাওয়া ‘যোগ্য’ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চাকরি সুনিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।
আরও পড়ুন:
সঙ্গীতা সাহা নামে আরও ‘যোগ্য’ শিক্ষিকাও একই দাবি তুলেছেন। যদিও তাঁর নাম ইন্টারভিউয়ের তালিকায় আছে। নেই তাঁর চেনা-পরিচিত কয়েক জনের নাম। সঙ্গীতার কথায়, ‘‘আমার পাঁচ-ছ’জন বন্ধু ইন্টারভিউতে ডাক পাননি। তাঁরা শুধুমাত্র একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় বসেছিলেন।’’ অর্থাৎ, ৩১ ডিসেম্বরের পরে আর চাকরি থাকবে না তাঁদের।
শুধু ‘যোগ্য’ চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাই নন, নতুন অনেকেই পরীক্ষায় বলেছিলেন। তাঁদের একাংশের দাবি, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পাশাপাশি অনেকে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় বসেছিলেন। তাই এখন তাঁরা তাকিয়ে সেই নিয়োগের ইন্টারভিউয়ের তালিকার দিকে। শিক্ষিকা রূপা কর্মকারের কথায়, ‘‘এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়া চাকরিপ্রার্থীদের জন্য সরকার কী ব্যবস্থা করছে সেটা এখন খুব জরুরি। তা না হলে এরা অনেকেই সমস্যায় পড়বেন।
অন্য দিকে, নতুন চাকরিপ্রার্থীর একাংশের দাবি, তাঁরা ইতিহাস-ভূগোলের মতো বিষয়গুলিতে লিখিত পরীক্ষায় ৬০ নম্বরের মধ্যে ৫৯ বা ৫৮ পেয়েছেন। তাঁদেরও নাম আসেনি ইন্টারভিউয়ের তালিকায়। তাঁদের কথায়, তাঁদের এই পরীক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করে দ্বিচারিতা করল সরকার ও স্কুল সার্ভিস কমিশন। দাবি, যাঁরা ‘যোগ্য’ চাকরিহারা তাঁদের প্রাপ্ত নম্বরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অভিজ্ঞতার জন্য আরও দশ নম্বর। পাশাপাশি, শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য আরও ১০ নম্বর। আর এখানেই পিছিয়ে পড়েছে তাঁরা।
১৮ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে তালিকায় ডাক পাওয়া চাকরিপ্রার্থীদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া, যা চলবে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। ২০ হাজারেরও বেশি চাকরিপ্রার্থী এই প্রক্রিয়ায় জুড়বেন বলে জানিয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে, প্রতিটি বিষয়ের লিঙ্গ ও জাতিগত ভিত্তিক কত জন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যোগ্যতা অর্জন করেছেন তার তালিকা প্রকাশ করেছে তারা।