বিহারের নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে ‘বিহারিবাবু’ শত্রুঘ্ন সিন্হার কাণ্ডে অস্বস্তিতে তৃণমূল। আসানসোলের তৃণমূল সাংসদ শত্রুঘ্নের একটি এক্স পোস্ট ঘিরে তৃণমূলের অন্দরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। বিজেপির জোট শরিক নীতীশ কুমারের জয়ের পরে তাঁকে অভিনন্দন জানাতে গিয়ে শত্রুঘ্ন যা লিখেছেন, তাতে বিড়ম্বনায় তৃণমূল। গোটা ঘটনা সম্পর্কে অবগত লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একান্ত আলোচনায় তৃণমূলের একাধিক লোকসভার সাংসদ বলছেন, সংসদীয় দলের পক্ষ থেকে এখনই পদক্ষেপ করা উচিত।
শুক্রবারই বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা হয়েছে। বিরাট জয় পেয়ে প্রত্যাবর্তন হয়েছে বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের দল জেডিইউয়ের। নীতীশ সেখানে বিজেপির জোট শরিক। তাঁকে বিভিন্ন বিশেষণে ভূষিত করেছেন শত্রুঘ্ন। এক্স হ্যান্ডলে আসানসোলের সাংসদ লেখেন, যে সরকার বিহারবাসীর পাওয়ার কথা ছিল, যাকে ভোট দিয়েছে, সেই সরকারই পেয়েছে বিহারবাসী। এর জন্য বিহারবাসীকে অভিনন্দন। বিহারের ‘সবচেয়ে প্রশংসিত’ এবং ‘ভদ্র রাজনীতিক’ বলে নীতীশকে ভূষিত করেন শত্রুঘ্ন। এর পরেই নীতীশের প্রশংসায় তিনি লেখেন, সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের, বিশ্বস্ত, পরীক্ষিত এবং সফল মুখ্যমন্ত্রী। পোস্টের একেবারে শেষে সাংসদ লিখেছেন, ‘জয় বিহার, জয় হিন্দ’।
সমাজমাধ্যমের ওই পোস্টটিতে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্য রাজনীতিকদেরও ‘ট্যাগ’ করেছেন তিনি। আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল এবং কংগ্রেস নেতা শশী তারুরকেও ‘ট্যাগ’ করা হয়েছে পোস্টটিতে। ওই লেখাটির সঙ্গে তিনি নীতীশের সঙ্গে নিজের কিছু পুরনো ছবিও পোস্ট করেছেন।
শত্রুঘ্ন এক দিকে যেমন রাজনীতিক, তেমন অভিনেতাও। গত ৬ নভেম্বরে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শত্রুঘ্নকে রাজ্য সরকারের তরফে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মানে সম্মানিত করা হয়। এ হেন শত্রুঘ্ন এ বার বিবিধ বিশেষণে ভূষিত করলেন বিজেপির শরিক দলের নেতাকে। বস্তুত, শত্রুঘ্ন অতীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অতীতে বাজপেয়ী জমানায় তিনি বিজেপির সাংসদ ছিলেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও ছিলেন। পরে কংগ্রেসে যোগ দেন এবং বর্তমানে তৃণমূলের সাংসদ।
নীতীশকে এ ভাবে বিভিন্ন বিশেষণে শত্রুঘ্ন ভূষিত করায় কিছুটা বিড়ম্বনায় প়ড়েছে রাজ্যের শাসক দল। এ ঘটনা প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে লোকসভায় তৃণমূলের উপদলনেতা (ডেপুটি লিডার) শতাব্দী রায় বলেন, “উনি হয়তো বিহার এবং বিহারি গরিমার প্রশ্ন থেকে ব্যক্তিগত ভাবে এই টুইটটি করেছেন। কিন্তু এটি কোনও রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তার পরিচয় হয়নি।”
শত্রুঘ্নকে নিয়ে তৃণমূলের বিড়ম্বনা নতুন নয়। তৃণমূলনেত্রী মমতা বার বার স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কে কী খাবেন, কে কী পরবেন— তা কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। প্রায়শই নিজের এই অবস্থান নিয়ে মন্তব্য করে থাকেন তিনি। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই ‘আমিষ-নিরামিষ’ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন শত্রুঘ্ন। উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকারের অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (ইউসিসি)-র প্রশংসা করে ওই তৃণমূল সাংসদ বলেছিলেন, ‘‘শুধু গোমাংসই নয়, দেশে সমস্ত আমিষ পদ নিষিদ্ধ করা উচিত। সরকার বিভিন্ন জায়গায় গোমাংস বিক্রি বন্ধ করেছে। তবে এখনও অনেক জায়গায় গোমাংস বিক্রি বা খাওয়ায় কোনও আইনি বাধা নেই। উত্তর-পূর্বের মানুষ প্রকাশ্যে এগুলো খেতে পারেন। কিন্তু উত্তর ভারত পারে না।’’
আরও পড়ুন:
ওই সময়ে শত্রুঘ্ন আরও বলেছিলেন, ‘‘উত্তর-পূর্বে গোমাংস খেলে ইয়াম্মি, আর উত্তর ভারতে খেলে মাম্মি! এ তো হতে পারে না।’’ তৃণমূল সাংসদ সওয়াল করেন, যে আইন উত্তর ভারতের জন্য রয়েছে, একই আইন চালু হওয়া উচিত উত্তর-পূর্বে। দেশ একটাই। তাই নিয়মও এক হওয়া উচিত। তবে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির কিছু ফাঁকফোকর রয়েছে বলে মত ছিল তাঁর।
আরও পড়ুন:
ওই মন্তব্যের পরে দলের তরফে তাঁকে সতর্ক করে বার্তাও দেওয়া হয়েছিল। যদিও ওই সময়ে সাংসদের ‘সাফাই’ ছিল, তাঁর মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এ বার সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের আগে ফের বিতর্কে জড়ালেন আসানসোলের তৃণমূল সাংসদ। এ বিষয়ে তৃণমূল কোনও পদক্ষেপ করে কি না, সে দিকে নজর থাকবে।