Advertisement
E-Paper

বাঘ আছে, বাঘের ভয়ও, কিন্তু সংঘাত নেই! জ়িনতদের আসা-যাওয়ায় নজিরের পথে জঙ্গলমহল

পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডের দলমা থেকে দলে দলে হাতির আসা-যাওয়া তো লেগেই রয়েছে। তবে সম্প্রতি শুধু হাতি নয়, বাঘের মতো হিংস্র জন্তুর আনাগোনাও শুরু হয়েছে জঙ্গলমহলে।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৫ ১৯:২০

—প্রতীকী চিত্র।

পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডের দলমা থেকে দলে দলে হাতির আসা-যাওয়া তো লেগেই রয়েছে। তবে সম্প্রতি শুধু হাতি নয়, বাঘের মতো হিংস্র জন্তুর আনাগোনাও শুরু হয়েছে জঙ্গলমহলে। বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা, ধীরে ধীরে জঙ্গলমহলকে নিজেদের পছন্দের জায়গা হিসাবে ভাবতে শুরু করেছে বাঘেরা। সে ক্ষেত্রে আগামী দিনে জঙ্গলমহলে বাঘ ও মানুষের স্থায়ী সহাবস্থানের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিতে পারছেন তাঁরা।

পশ্চিমের জেলা পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের সীমানাবর্তী একটা বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে বনাঞ্চল। মূলত মিশ্র পর্ণমোচী গোত্রের এই জঙ্গলের বিভিন্ন জায়গায় ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়, ছোট নদী ও ঝর্না রয়েছে। পাহাড়ি বন্ধুর এই এলাকার জায়গায় জায়গায় রয়েছে ছোট ছোট জনপদ। চার জেলার সীমানাবর্তী এই জঙ্গল এবং পার্শ্ববর্তী ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডের একাংশকে নিয়ে এক সময় ময়ূরঝর্ণা প্রকল্প তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বন দফতর। কিন্তু সংরক্ষিত সেই প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে মূল বাধা হয়ে দাঁড়ায় জঙ্গলের মাঝে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা অসংখ্য গ্রাম ও জনপদ। তিন রাজ্যের সীমানাবর্তী সেই জঙ্গলই এ বার ধীরে ধীরে বাঘের মতো হিংস্র শিকারি প্রাণীর পছন্দের জায়গা হয়ে উঠছে।

ডিসেম্বরের শেষে ওড়িশার সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে এ রাজ্যে পালিয়ে আসা বাঘিনি জ়িনত আশ্রয় নিয়েছিল এই বনাঞ্চলেই। বেশ কিছু দিন স্বাধীন ভাবে ঘোরাফেরা করার পর শেষ পর্যন্ত ২৮ ডিসেম্বর বন দফতর জ়িনতকে খাঁচাবন্দি করে সিমলিপালে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু তার পর থেকেই ঝাড়খণ্ড থেকে দফায় দফায় বাঘের আনাগোনা শুরু হয় জঙ্গলমহলে। কখনও জ়িনতের পথ ধরে, আবার কখনও স্বাধীন ভাবে বাঘ ঘুরে বেড়াচ্ছে জঙ্গলমহলের বিভিন্ন বনাঞ্চলে।

বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, জঙ্গলমহলের বনাঞ্চলের চরিত্র বাঘ-সহ অন্যান্য হিংস্র বন্যপ্রাণীর বসবাসের উপযুক্ত। জঙ্গলে খরগোশ ও বুনো শূকরের মতো প্রাণীর সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটায় বাঘের খাবারের অভাব নেই। এই পরিস্থিতিতে জঙ্গলমহলে শুধু বাঘের আনাগোনা নয়, ভবিষ্যতে বাঘের পাকাপাকি ভাবে বসবাস করার সম্ভাবনাও প্রবল হয়ে উঠছে। বাঁকুড়া সম্মিলনী কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিষয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক বিশ্বরঞ্জন ধুয়া বলেন, ‘‘জ়িনতের পথ ধরে একটি পুরুষ বাঘ বার বার জঙ্গলমহলে আসছে। কয়েক দিন থেকে আবার ফিরেও যাচ্ছে ঝাড়খণ্ডে। এই পুরুষ বাঘের টানে আবার কোনও বাঘিনির জঙ্গলমহলে আসার সম্ভাবনা প্রবল। আর তেমনটা হলে জঙ্গলমহল পাকাপাকি ভাবে বাঘের বাসস্থান হয়ে উঠবে।’’

তাঁর মত, ‘‘জঙ্গলে যথেষ্ট খাবার থাকায় এখনও পর্যন্ত বাঘ লোকালয় এড়িয়েই চলছে । তা ছাড়া শুষ্ক আবহাওয়ায় অভ্যস্ত এই বাঘগুলি সাধারণত মানুষের রক্তের স্বাদ জানে না। সে ক্ষেত্রে মানুষকে আক্রমণ করার সম্ভাবনাও প্রায় নেই বললেই চলে। মানুষ বাঘকে বিরক্ত না করলে বাঘের সঙ্গে মানুষের সরাসরি সংঘাত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশ কম। সে ক্ষেত্রে আগামী দিনে জঙ্গলমহল বাঘ-মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ঠিকানা হয়ে উঠলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।’’

একই কথা বললেন বন দফতরের এক কর্তাও। তাঁর কথায়, ‘‘জানুয়ারি মাসের গোড়া থেকেই বিভিন্ন সময়ে জঙ্গলমহলে বাঘ এসেছে। বিভিন্ন জায়গায় তার পায়ের ছাপও মিলেছে। বিভিন্ন সময়ে বাঘটি নিরাপদে বেশ কয়েক দিন এ রাজ্যে কাটিয়ে ফের ফিরে গিয়েছে ঝাড়খণ্ডে। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ যেমন বাঘকে বিরক্ত করেনি, তেমনই বাঘও সাধারণ মানুষের কোনও ক্ষতি করেনি।’’

Junglemahal Tigers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy