Advertisement
E-Paper

মাথা নেড়া করে বামেদের হটানোর হুমকি বালুর

পুরভোটের আবহ আরও উত্তপ্ত হল বিরোধী সিপিএমের প্রতি শাসক তৃণমূলের কড়া হুঁশিয়ারিতে! কামারহাটির মানুষ সিপিএমকে সমর্থন না জানালে তাদের মাথা নেড়া করে বিদায় নিতে হবে বলে মন্তব্য করলেন তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালু। সিপিএম নেতা মানস মুখোপাধ্যায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়দের উপরে হামলার প্রতিবাদে বুধবার বেলঘরিয়ার বাদামতলায় বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর নেতৃত্বে সভা করেছিল বামেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৮

পুরভোটের আবহ আরও উত্তপ্ত হল বিরোধী সিপিএমের প্রতি শাসক তৃণমূলের কড়া হুঁশিয়ারিতে! কামারহাটির মানুষ সিপিএমকে সমর্থন না জানালে তাদের মাথা নেড়া করে বিদায় নিতে হবে বলে মন্তব্য করলেন তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালু।

সিপিএম নেতা মানস মুখোপাধ্যায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়দের উপরে হামলার প্রতিবাদে বুধবার বেলঘরিয়ার বাদামতলায় বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর নেতৃত্বে সভা করেছিল বামেরা। তার ২৪ ঘণ্টা পরে বৃহস্পতিবার একই জায়গায় পাল্টা সভা করে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়বাবু সিপিএম নেতাদের নাম করে বলেন, ‘‘এই মঞ্চে আসার জন্য মানসবাবু, সুভাষবাবুকেও ডাকছি। আমরাও থাকব। মানুষ সুভাষবাবুদের চাইলে আমরা মাথা নিচু করে তা মেনে নেব। আর মানুষ আমাদের চাইলে মানসবাবুদের মাথা নেড়া করে চলে যেতে হবে!’’ মানসবাবুদের উপরে হামলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছিল। সেই অভিযোগ এড়াতে জ্যোতিপ্রিয়বাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘আমরা ওঁদের মারিনি। এটা মানস-সুভাষের মধ্যে নিজেদের লড়াই!’’

পুরভোটে সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করতেই জ্যোতিপ্রিয়বাবুর এই হুঁশিয়ারি বলে মনে করছে সিপিএম। কারণ, উত্তর ২৪ পরগনার যে ২৩টি পুরসভায় ভোট, তার প্রতিটিই তৃণমূল দখল করবে বলে এ দিন জ্যোতিপ্রিয়বাবু দাবি করেছেন। যা প্রকারান্তরে বিরোধীদের ভোট-ময়দান থেকে বিচ্ছিন্ন করার মরিয়া চেষ্টা বলেই জেলা সিপিএমের আশঙ্কা। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ও এ দিন ওই মঞ্চ থেকেই মানসবাবুকে ‘ব্যারাকপুরে গুন্ডা সরবরাহের ঠিকাদার’ বলে আক্রমণ করেছেন। তৃণমূল নেতাদের এই মন্তব্য শুনে সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নেপালদেব ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘এটা ছাড়া ওদের সামনে আর কোনও পথ খোলা নেই! মানুষ ভোট দিতে পারলে ওদের হারতে হবে, এটা বুঝেছে তৃণমূল।’’ ভোটে শাসক দল হামলা করলে জনগণকে প্রতিরোধে রুখে দাঁড়ানোর আবেদন জানিয়েছেন নেপালদেববাবু। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার বিরোধীদের ‘ঘরে ঢুকিয়ে’ দেওয়ার কথা বলার পরেই শাসক দলের নেতারা আরও উৎসাহী হয়ে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন বলে সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ। নেপালদেবের কথায়, ‘‘আমাদের ঘরে ঢুকিয়ে না দিলে এবং গলা কেটে কণ্ঠরোধ না করতে পারলে ওঁরা জানেন ওঁদের বিপদ আছে!’’

ভোটে শাসক দল যে ‘সন্ত্রাসে’র পথই নেবে, কোচবিহারে তৃণমূলের সহ-সভাপতি আব্দুল জলিল আহমেদের কথাতেও তার ইঙ্গিত ধরা পড়েছে বলে মনে করছে বিরোধীরা। এক কর্মিসভায় এ দিন তিনি কর্মীদের নির্দেশ দেন, ‘‘প্রতি দিন বুথে বুথে পাহারা দিতে হবে। এত দিন ওরা (বামফ্রন্ট) আমাদের ঢুকতে দেয়নি। পাহারা দিয়েছে। নির্বাচনের আগের দিন সকাল পর্যন্ত পাহারা দিতে হবে। লোককে ধরে এনে ভোট দিতে হবে!” জলিলের বক্তব্য শুনে ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহের কটাক্ষ, “প্রকৃত ভোটারদের ধরে আনলে ক্ষতি নেই। তবে ওঁরা ভুয়ো ভোটারদের যেন ধরে না আনেন! বাম আমলে সন্ত্রাস হলে যিনি ওই বক্তব্য রেখেছেন, তাঁর স্ত্রী গত পুরভোটে তৃণমূলের টিকিটে জিতলেন কী করে?”

শুধু নির্দেশ-হুঁশিয়ারিতেই শেষ নয়। ব্যারাকপুর পুরসভার সিপিএম প্রার্থীকে এ দিনই মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বাইক-বাহিনীর বিরুদ্ধে। শ্যামনগরে কংগ্রেসের একটি কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগও এসেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সকালে প্রচারে বেরোনোর সময় তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই তাঁর উপর হামলা চালিয়েছে বলে টিটাগড় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ব্যারাকপুরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী পুলকেশ ঘোষ। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ওই ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী ব্যারাকপুর পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান উত্তম দাস।

কলকাতার ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে আবার বিরোধীদের বিরুদ্ধে দলীয় পতাকা-ফেস্টুন ছেঁড়ার অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। পঞ্চসায়র থানায় তৃণমূলের তরফে প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তিনি ওই ওয়ার্ডে রাত পাহারার সময় সমর্থকদের নিয়ে তৃণমূল প্রার্থী অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পোস্টার ছিঁড়ে এবং আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ। কান্তিবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘শনিবার রাতে আমি যখন এলাকায় ঘুরেছি, তখন পঞ্চসায়র থানার পুলিশের গাড়ির নজরদারি ছিল। শনিবারের পরে আমি এলাকায় যাইনি। সমর্থকরা রাত পাহারা দিচ্ছে কি না, পঞ্চসায়র থানা তদন্ত করুক।’’ বিরোধীদের সন্ত্রাস নিয়ে ধারাবাহিক অভিযোগ উড়িয়ে পাইকপাড়ায় দলের নির্বাচনী সভায় মমতার সাংসদ-ভাইপো তথা তৃণমূল যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা বলেছেন, ‘‘এখানে আসতে আসতে দেখলাম আমাদের অনেক ফ্লেক্স, ব্যানার ব্লেড দিয়ে কাটা। কিন্তু বিরোধীরা মানুষের হৃদয়ে ব্লেড চালাতে পারবে না। মানুষের হৃদয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বসে আছেন!’’

Jyotipriyo mullick Biman Basu cpm municipal election TMC trinamool chief minister Mamata bandopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy