Advertisement
E-Paper

কওসরকে ঘরভাড়া পেতে সাহায্য করার আক্ষেপ যায়নি কাশেমের

বাড়ি ভাড়া পাওয়ার জন্য সাহায্য চেয়েছিল এক জন। ইমাম হিসেবে বিভিন্ন লোকের আবেদনে সাড়া দেওয়াটাই অভ্যাস। এই আবেদনও সে ভাবেই দেখেছিলেন কাশেম মোল্লা। কিন্তু মাস তিনেক আগে ওই ব্যক্তিকে সাহায্য করার জন্য এখন আক্ষেপের শেষ নেই বর্ধমান সদরের এক মসজিদের এই ইমামের।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:০৬
খাগড়াগড়ের বাড়িতে তদন্তকারীরা। মঙ্গলবার। ছবি: উদিত সিংহ।

খাগড়াগড়ের বাড়িতে তদন্তকারীরা। মঙ্গলবার। ছবি: উদিত সিংহ।

বাড়ি ভাড়া পাওয়ার জন্য সাহায্য চেয়েছিল এক জন। ইমাম হিসেবে বিভিন্ন লোকের আবেদনে সাড়া দেওয়াটাই অভ্যাস। এই আবেদনও সে ভাবেই দেখেছিলেন কাশেম মোল্লা। কিন্তু মাস তিনেক আগে ওই ব্যক্তিকে সাহায্য করার জন্য এখন আক্ষেপের শেষ নেই বর্ধমান সদরের এক মসজিদের এই ইমামের।

গোয়েন্দারা ইতিমধ্যেই জেনেছেন, বর্ধমানের বাবুরবাগে যে বাড়ির দোতলায় ডেরা বেঁধেছিল খাগড়াগড়-বিস্ফোরণের অন্যতম পাণ্ডা কওসর, সেটি ভাড়া পাওয়ার ব্যাপারে মধ্যস্থতা করেছিলেন কাশেম। এই ইমাম থাকেন বাহির সর্বমঙ্গলা এলাকায়। পরিচয়ের সুবাদে বাবুরবাগে আব্দুর রেজ্জাকের বাড়ির দোতলা ফাঁকা আছে বলে জানা ছিল কাশেমের। তাঁর দাবি, নমাজ পড়তে এসে তার সঙ্গে দেখা করে কওসর জানিয়েছিল, তার ও ভায়রাভাইয়ের পরিবারের থাকার জন্য বাড়িভাড়া দরকার। তাই তিনি রেজ্জাকের কাছে পাঠান কওসরকে।

বাড়িতে গিয়ে মঙ্গলবার কাশেমের দেখা মেলেনি। তবে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “কওসর কেমন দেখতে, তা ভুলে গিয়েছি। আমরা অনেককেই নানা ভাবে সাহায্য করে থাকি। এ ক্ষেত্রেও সে রকমই করেছিলাম। কিন্তু, এখন আমি লজ্জিত ও দুঃখিত, যে আমার মাধ্যমে এ রকম একটি লোক ঘরভাড়া পেয়েছিল। ওদের উপযুক্ত সাজা হোক, এটাই চাইছি।”

কাশেমের সঙ্গে কথা বলেছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের ঘারণা, বাবুরবাগ বা খাগড়াগড়ের আগেও কওসর ও তার সঙ্গীরা বর্ধমান শহরের অন্দরে ঘাঁটি গেড়েছিল। বার বার এলাকা ঘুরে তারা বেশ কিছু জায়গা চিহ্নিত করেছিল, যেখানে নিরাপদে ঘাঁটি গাড়তে পারবে তাদের মনে হয়েছিল।

খাগড়াগড় ও বাবুরবাগদু’টি এলাকা জুড়েই মেস-বাড়ির ছড়াছড়ি। বিশ্ববিদ্যালয়-সহ নানা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা থেকে শুরু করে, কাজের সূত্রে আসা বহু মানুষজন থাকেন সেই সব বাড়িতে। তাই এ সব এলাকায় অপরিচিত কাউকে দেখলে এলাকাবাসী চট করে সন্দেহ করেন না। এই কারণেই ডেরা বাঁধার জন্য এই এলাকাকে কওসরেরা বেছেছিল বলে ধারণা গোয়েন্দাদের।

বাবুরবাগের বাড়িটি মাস তিনেক আগে ভাড়া নিয়েছিল কওসর। তার সঙ্গে এসে উঠেছিল হবিবুর। থাকত দুই মহিলাও, যাদের বোরখা ছাড়া কখনও দেখেননি এলাকাবাসী। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অনেক ভাড়াটেই স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে মেলামেশা করেন। কিন্তু ওই বাড়ির দোতলার ভাড়াটেরা তেমন ছিল না। বাড়ির কাছেই রয়েছে একটি ক্লাব। তার সদস্য শেখ নাসিম, আব্দুল রহমানেরা বলেন, “বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা আফগানিস্তানের তিন ছাত্র গত বছর বাড়িটির নীচের তলায় থাকতেন। তাঁরা তো আমাদের ক্লাবের টিভি-তে খেলা দেখতে আসতেন। ভলিবল, ক্রিকেটও খেলতেন আমাদের সঙ্গে।”

ওই বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যেই একটি চালাঘরে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে থাকেন আব্দুর রেজ্জাকের ভাগ্নে ওমর হোসেন। তাঁরা জানান, কওসর সব সময়েই হেলমেট পরে থাকত। দোতলা থেকে হেলমেট পরে নেমে মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে যেত। আবার ফিরে এসে মোটরবাইক রেখে হেলমেট পরেই সিঁড়ি দিয়ে উঠে যেত।

ওমর পেশায় ধোপা। তিনি বলেন, “জামকাপড় শুকোতে দেওয়ার জন্য আমাকে ওই বাড়ির ছাদ ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু ওরা আসার পরে আমাকে ছাদে উঠতে দিতে বাধা দেয়। জোরাজোরি করায় ছাদে যেতে দিত। তবে গলা খাঁকারি দিয়ে উপরে উঠতে বলেছিল।” তাঁর স্ত্রী সালমা বলেন, “এরা আমাদের সঙ্গে কখনও কথা বলত না। যে দুই মহিলা ছিল, তাদের তো বোরখা ছাড়া দেখিইনি।”

কওসরের সঙ্গী বোরখা পরা দু’জন মহিলা কি না, তা নিয়ে আবার সংশয় রয়েছে বাড়িটির নীচের তলায় থাকা ছাত্রদের। চাকরির নানা পরীক্ষার জন্য প্রশিক্ষণ নিতে বর্ধমানে আসা এই ছাত্রেরা মেস করে ওই বাড়িটিতে রয়েছেন বছরখানেক। ২ অক্টোবর বিস্ফোরণের পরে, বাবুরবাগের বাড়ির দোতলায় আলো জ্বলতে দেখে মালিককে খবর দেন তাঁরাই।

পর দিন সকালে মালিক এসে দেখেন, দু’টি ঘর বন্ধ করে ভাড়াটেরা পালিয়েছে। বাড়িটির সন্ধান মেলার পরে দোতলার পাশাপাশি নীচের তলাও তালাবন্ধ করে দিয়ে দিয়েছে পুলিশ। তাই সেখানে ফিরতে পারছেন না ওই ছাত্রেরা। তাঁদেরই এক জন, মঙ্গলকোটের হাফিজুর রহমান ফোনে বলেন, “হেলমেট পরা লোকটিকে নামতে-উঠতে দেখে কয়েক বার ‘সালাম আলেকুম’ বলেছি। প্রত্যুত্তর দেয়নি। বাকি দু’জন মহিলা না পুরুষ, তা বুঝতেই পারিনি। কারণ, তারা পুরোপুরি বোরখায় ঢাকা থাকত। কখনও সাড়া বা গলার আওয়াজ পাইনি।” আর এক ছাত্র, গলসির সৈয়দ আবু শাহিদ বলেন, “যে লোকটা হেলমেট পরত না, সে দাড়িওয়ালা। পাশ দিয়ে যাতায়াত করলেও কখনও কথা বলেনি।”

পুজো ও ঈদের ছুটি শেষে ৯ অক্টোবর ফেরার কথা ছিল ওই ছাত্রদের। কিন্তু পুলিশ ঘরে তালা দিয়ে যাওয়ায় তাঁরা ফিরতে পারেননি। তাঁরা জানান, ভিতরে বইপত্র রয়ে গিয়েছে। নভেম্বর ও ডিসেম্বরে পরীক্ষা রয়েছে। কী ভাবে সেই পরীক্ষা দেবেন, তা নিয়েই এখন চরম দুশ্চিন্তায় কওসরের ডেরার নীচের তলার ওই ছাত্রেরা।

kausar kashem mollah sunanda ghosh nia khagragarh blast case rental house bomb blast help state news online state news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy