Advertisement
E-Paper

চিনিহীন নলেন গুড়ের সন্ধানে শরিক হল খাদি

নলেন গুড় বিশারদদের আক্ষেপ, সস্তায় ও সহজে বেশি গুড়ের লোভে যা কাণ্ড চলছে, তাতে খেজুর গাছের ভবিষ্যৎই ক্রমশ বিপন্ন।

ঋজু বসু 

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ ০৬:০৮
এল নলেন গুড়ের দিন। হাঁসখালির ইটাবেড়িয়াতে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

এল নলেন গুড়ের দিন। হাঁসখালির ইটাবেড়িয়াতে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

মানুষের মতো খেজুর গাছও জিরেন চায়। তবেই সে প্রাণ ভরে উজাড় করে দেবে রসের সেরা উৎকর্ষ। শীতের নলেন গুড় প্রসঙ্গে খানিক দার্শনিক ঢঙে উপমা দেবেন পলাশিপ্রান্তরের কাছে দেবগ্রামের নলেন গুড় কারবারি মাহি ওরফে মাহফুজুর রহমান। তাঁর কড়া নজর, “আমার বাগানে কোনও গাছে একবেলা খোঁচালে চার দিনের বিশ্রাম। এর পরের জিরেনকাটের গুড়ই সর্বশ্রেষ্ঠ।”

ছাতনা ব্লকে পুরুলিয়ার গা-ঘেঁষা গ্রামের গুড় চাষি সনাতন হেমব্রমের হাহুতাশ, “বাঁকুড়ার পাইকারি হাটে গুড়ের গদি শুধু রং দেখে গুড় নেয়।” গাছের বুকের রস বিস্তর চিনিতে জ্বাল দিয়ে ভাল-খারাপ-মাঝারি গুড় পাইলিং করে বাজারে বিকোয় সেখানে। “এক ফোঁটা চিনিও সেরা গুড়ের শত্রু”, বলছিলেন নলেন গুড় রক্ষায় সক্রিয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তা সৌরভ ঘোষ। নলেন গুড় নিয়ে কলকাতাকে ঠকাতে বহু দিনই লালবাজার পাড়ার দোকানে চলে এসেছে নকল গুড়ের ‘এসেন্স’!

নলেন গুড় বিশারদদের আক্ষেপ, সস্তায় ও সহজে বেশি গুড়ের লোভে যা কাণ্ড চলছে, তাতে খেজুর গাছের ভবিষ্যৎই ক্রমশ বিপন্ন। নির্বিচার খোঁচাখুঁচিতে দ্রুত ফুরোচ্ছে গাছের রসের ভাঁড়ার। এমন চললে বাঙালির সাধের নলেন গুড় শুকিয়ে যেতে সময় লাগবে না। এই সঙ্কটের মোকাবিলাতেই রাজ্যের নলেন গুড় সম্ভারের একাংশ এক ছাতার নীচে টেনে আনতে আসরে নামছে কেন্দ্রীয় খাদি গ্রামীণ শিল্প পর্ষদ। তাদের রাজ্য অধিকর্তা প্রশান্তকুমার শতপথী বলছেন, “সাবেক গ্রামীণ শিল্পের ঐতিহ্য বাঁচাতে কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্র শিল্প মন্ত্রকের ‘স্কিম অব ফান্ড ফর রিজেনারেশন অব ট্র্যাডিশনাল ইন্ডাস্ট্রিজ’ বা স্ফুর্তি-র আওতায় বাঁকুড়ার বাছাই নলেন গুড় ক্ষেত্রে দু’বছরের প্রকল্প শুরু হয়েছে। গুড়ের মান রক্ষায় এলাকার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রারও উন্নতি হবে।” সরকারি সূত্রের খবর, বাঁকুড়া-১, ওন্দা, ছাতনা, ইন্দাস ব্লকে মূলত চলবে গুড় রক্ষার কাজ। শীতে মুর্শিদাবাদ থেকেও গুড় চাষিরা এ তল্লাটে ঘাঁটি গাড়েন। এই সব অঞ্চলে খেজুর ও তাল গুড়, দু’টোই জীবিকার অঙ্গ।

করোনাকালের লকডাউনে তাল নিয়ে কাজের দফারফা হয়েছে। এর পরে খেজুর গুড় নিয়ে সরকারি প্রকল্প চাষিদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে। এই প্রকল্পটিতে খাদির সহযোগী সংস্থার আধিকারিক সৌরভবাবু বলছিলেন, “নতুন প্রকল্পে গুড় সংগ্রাহকদের গাছে ওঠার মইয়ের বন্দোবস্ত, সুরক্ষা বিমা থাকবে। সেই সঙ্গে গুড় জ্বাল দেওয়ায় আধুনিক সরঞ্জাম আসবে। স্থানীয় পরিবেশ বাঁচাতে উনুনের বদলে গ্যাসের বন্দোবস্তও হচ্ছে।” বাঁকুড়ার এই কয়েকটি ব্লকে দীর্ঘদিন ধরেই গাছ কাটা থেকে গুড় জ্বাল দেওয়ার কসরতে একটা শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা চলছে। খাদির প্রকল্পে সেটাই জোরদার হবে।

এর আগে রাজ্য খাদি বোর্ডও নদিয়ার মাজদিয়ায় গুড় প্যাকেজিং প্রকল্প শুরু করে। তাদের সিইও মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, “ওই প্রকল্পটিতে চিনিবিহীন গুড় নিয়ে কাজ করে চাষিদের অর্থনৈতিক বিকাশের চেষ্টা চলছে।” খাদি ও বিশ্ব বাংলার বিপণিতে মাজদিয়ায় তৈরি নলেন গুড়ের টিউব এই শীতেও বিকোচ্ছে বলে জানাচ্ছেন রাজ্যের ক্ষুদ্র শিল্প মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। খাদির কেন্দ্রীয় প্রকল্পের ঢঙে নলেন গুড় রক্ষার কাজ রাজ্যের অন্যত্র বিস্তার নিয়েও চলছে আলোচনা।

Nalen Gur Khadi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy