Advertisement
E-Paper

‘অপহৃত’ পঞ্চায়েত সদস্য পালিয়ে আশ্রয় নিলেন সেনাঘাঁটিতে, বিজেপির তোপে তৃণমূল

বুধবার সাঁতুড়ি ব্লক থেকেই অপহরণ করা হয়েছিল সৌমেন মণ্ডলকে। রাতে রানিগঞ্জের কোনও লজে তাঁকে আটকে রাখা হয়েছিল এবং বৃহস্পতিবার সকাল হতেই তাঁকে নিয়ে কলকাতার দিকে রওনা দেওয়া হয়েছিল বলে তাঁর দাবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৮ ২২:৩৬
'উদ্ধার' হওয়ার পরে  বিজেপির রাজ্য দফতরে 'অপহৃত' পঞ্চায়েত সমিতি সদস্য সৌমেন মণ্ডল(মাঝে)| নিজস্ব চিত্র|

'উদ্ধার' হওয়ার পরে বিজেপির রাজ্য দফতরে 'অপহৃত' পঞ্চায়েত সমিতি সদস্য সৌমেন মণ্ডল(মাঝে)| নিজস্ব চিত্র|

পঞ্চায়েত সমিতির দখল নেওয়ার জন্য সদস্যকে অপহরণের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পুরুলিয়া থেকে পানাগড় সামরিক ঘাঁটি হয়ে কলকাতা পর্যন্ত পৌঁছল সে নাটক। রাজ্য সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে বিজেপি জানাল, কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারস্থ হয়ে উদ্ধার করতে হয়েছে সাঁতুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সৌমেন মণ্ডলকে। জেলা সম্পূর্ণ নস্যাৎ করল অভিযোগ। বলল, নাটক করছে বিজেপি।

পুরুলিয়ার সাঁতুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির আসনসংখ্যা ১৩। ৬টি আসন পেয়েছে তৃণমূল, ৬টি পেয়েছে বিজেপি। ১টি আসনে সিপিএম প্রার্থী জিতেছিলেন। পরে তিনি বিজেপি যোগ দেন। ফলে সাঁতুড়িতে বিজেপি গরিষ্ঠতা পেয়ে যায়। কিন্তু সাঁতুড়ি ব্লকের দখল নিজেদের হাতে ধরে রাখতে তৃণমূল মরিয়া এবং সেই কারণেই সৌমেন মণ্ডলকে অপহরণ করা হয়— রাজ্য বিজেপির দাবি এই রকমই।

বিজেপির তরফে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সায়ন্তন বসু সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্য দফতরে। ততক্ষণে ‘অপহৃত’ পঞ্চায়েত সমিতি সদস্য সৌমেন মণ্ডল ‘উদ্ধার’ হয়েছেন এবং বিজেপি দফতরে হাজিরও হয়ে গিয়েছেন। সায়ন্তনের অভিযোগ, বুধবার সাঁতুড়ি ব্লক থেকেই অপহরণ করা হয়েছিল সৌমেন মণ্ডলকে। রাতে রানিগঞ্জের কোনও লজে তাঁকে আটকে রাখা হয়েছিল এবং বৃহস্পতিবার সকাল হতেই তাঁকে নিয়ে কলকাতার দিকে রওনা দেওয়া হয়েছিল বলে তাঁর দাবি। পানাগড়ে সৌমেন গাড়ি থেকে নামেন এবং দৌড়ে ঢুকে পড়েন সামরিক ঘাঁটিতে, জানিয়েছেন সায়ন্তন।

কী ভাবে নামলেন, পানাগড়ে? সৌমেন মণ্ডল জানালেন, ‘‘প্রস্রাব করার জন্য গাড়ি থামাতে বলেছিলাম। নীচে নামার পরে হাত ছাড়িয়ে সেনাঘাঁটির দিকে দৌড়তে শুরু করি। আমার পিছন পিছন কিছু দূর ওরা দৌড়েছিল। কিন্তু তার পরে থেমে যায়, আর্মির এলাকার ভিতরে ওরা ঢোকেনি।’’

বিজেপির অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে সৌমেন মণ্ডলকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ছক কষা হয়েছিল। সৌমেন নিখোঁজ হওয়ার পরে পুলিশে অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে রাজ্য বিজেপির দাবি। ‘‘কিন্তু সৌমেন মণ্ডল পানাগড় সামরিক ঘাঁটিতে গিয়ে আশ্রয় চাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে পুলিশ পৌঁছয় এবং সৌমেনকে তাদের হাতে তুলে দিতে বলে।’’ বলেছেন সায়ন্তন। সেনা ঘাঁটি সরক্ষিত এলাকা এবং অনুমতি ছাড়াই সেখানে ঢুকে পড়ার অপরাধে সৌমেনকে গ্রেফতার করা হবে— পুলিশ এমনই জানিয়েছিল সেনাকে। দাবি সায়ন্তনের।

পানাগড় সেনা ঘাঁটির তরফ থেকে অবশ্য সৌমেনকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। সায়ন্তন বললেন, ‘‘আমাদের দুটো জেলা কমিটি একসঙ্গে সক্রিয় হয়েছিল। পুরুলিয়ার সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী এবং পশ্চিম বর্ধমানের সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুই একসঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেন। তাঁরা নেতৃত্বকে দ্রুত পুরো ঘটনার কথা জানান। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কেন্দ্র থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ যেখানে পৌঁছনোর পৌঁছয়। তার পরে আমাদের লোকজনরা পানাগড়ে গিয়ে সৌমেনকে উদ্ধার করেন এবং কলকাতায় নিয়ে আসেন।’’

আরও পড়ুন: দিলীপ, রাহুল, শমীক, লকেট, সায়ন্তন... লোকসভার প্রার্থী তালিকা নিয়ে জল্পনা শুরু

আরও পড়ুন: ছাউনি নয়, মেদিনীপুরে খোলা মঞ্চেই পাল্টা সভা তৃণমূলের

সৌমেন জানিয়েছেন, গাড়িতে তুলেই তাঁকে শুইয়ে দেওয়া হয়েছিল। ‘অপহরণ’ করে নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তাঘাট দেখতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু তাঁকে যে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হবে এবং তৃণমূলে যোগদান করানো হবে, সে কথা তাঁকে গাড়িতেই বলা হয়েছিল বলে সৌমেন জানিয়েছেন। রাতে যে তাঁকে রানিগঞ্জের কোনও লজে রাখা হয়েছিল, তাও সৌমেন আন্দাজ করেছেন, নিশ্চিত নন।

তৃণমূল অবশ্য সব অভিযোগ নস্যাৎ করেছে। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাত বিজেপির অভিযোগকে একেবারেই গুরুত্ব দিলেন না। বললেন, ‘‘ওরা নাটক করছে। আমাদের জেলায় এই ধরনের রাজনীতি হয় না, সেটা সকলেই ভাল ভাবে জানেন। বিজেপি-ও জানে।’’ কিন্তু যে ব্লকে বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, সেই ব্লকে এমন নাটক কেন সাজাতে যাবে বিজেপি? শান্তিরাম বললেন, ‘‘তৃণমূলকে কালিমালিপ্ত করতে চাইছে। আর কিছুই নয়।’’

Kidnap TMC BJP Cantonment Panchayat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy