Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
baby

Blood Transfusion: গর্ভস্থ শিশুর প্রাণরক্ষায় রক্ত বদল, বেনজির চিকিৎসা শহরের বেসরকারি হাসপাতালে

এই চিকিৎসার জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি নেওয়া হয়েছে। আগামী দুই থেকে আড়াই মাস ধীরে ধীরে চলবে গর্ভস্থ ওই শিশুর রক্ত বদলের প্রক্রিয়া।

প্রতীকী ছবি

সারমিন বেগম
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২১ ১৮:১২
Share: Save:

গর্ভে থাকা অবস্থায় মায়ের রক্তের কারণে এক শিশুর প্রাণ সংশয় দেখা দিয়েছে। তার হাত-পা-পেট ফুলে যাচ্ছে। এখন প্রসব করিয়েও তাকে বাঁচানো যাবে না বলে মত চিকিৎসকদের। বাঁচাতে হলে একমাত্র গর্ভের ভিতরেই তার রক্ত বদলের প্রয়োজন। তাই গর্ভস্থ ওই শিশুর রক্ত বদলের বেনজির চিকিৎসা শুরু হয়েছে অ্যাপোলো হাসপাতালে। পাশাপাশি চলছে গর্ভবতী মায়ের চিকিৎসাও। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, পূর্ব ভারতে এমন চিকিৎসার কোনও নজির নেই। সে কারণে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতিও নেওয়া হয়েছে। আগামী দুই থেকে আড়াই মাস ধীরে ধীরে চলবে গর্ভস্থ ওই শিশুর রক্ত বদলের প্রক্রিয়া।

বছর আঠাশের রমা পাল (নাম পরিবর্তিত) কলকাতার বাসিন্দা। তিনি ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তাঁর আগের একটি সন্তান রয়েছে। তার বয়স বছর তিনেক। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, রমার রক্তের গ্রুপ এ নেগেটিভ। কিন্তু তাঁর স্বামী সায়ন (নাম পরিবর্তিত)-এর রক্তের গ্রুপ বি পজিটিভ। এ ক্ষেত্রে ওই দম্পতির সন্তানদের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ বা পজিটিভ দুটোর যে কোনও একটা হতে পারে। শিশু গর্ভে থাকাকালীন নাড়ির মাধ্যমে মায়ের শরীর থেকে তার দেহে রক্ত সঞ্চারিত হয়। একই রকম ভাবে মায়ের শরীরেও কয়েক ফোঁটা করে রক্ত গর্ভস্থ শিশুর শরীর থেকে যায়। চিকিৎসকদের মতে, যে হেতু মায়ের রক্ত নেগেটিভ, তাই সন্তানের রক্ত যদি পজিটিভ হয় সে ক্ষেত্রে মায়ের শরীরে তা গেলে বহিরাগত হিসাবে চিহ্নিত হয়। ফলে সেটা থেকে বাঁচতে তৈরি হয় অ্যান্টিবডিও। রমার প্রথম সন্তানের রক্ত পজিটিভ গ্রুপের। ফলে প্রথম বার গর্ভবতী থাকাকালীনই তাঁর শরীরে ওই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছিল। এখন দ্বিতীয় সন্তানের সময় রমার শরীরের সেই অ্যান্টিবডিই গর্ভস্থ শিশুর জন্য মারাত্মক হয়ে উঠেছে। কারণ, ওই অ্যান্টিবডি গর্ভস্থ শিশুর রক্তকে ‘শত্রু’ ঠাওরে বসেছে। আর সে কারণেই প্রাণ সংশয় দেখা দিয়েছে তার।

রমা এবং তাঁর গর্ভস্থ শিশুর চিকিৎসার দায়িত্বে রয়েছেন ইউরো গায়নোকোলজিস্ট মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘বাচ্চার শরীর থেকে মায়ের দেহে যে রক্ত আসে, সেটা বহিরাগত বলে চিহ্নিত করে শরীর। সে কারণে প্রথম সন্তান জন্মানোর সময় রমার শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছিল। সেই অ্যান্টিবডিই দ্বিতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে মারণ হয়ে উঠেছে। নষ্ট করে দিচ্ছে শিশুর রক্তের স্বাভাবিক কোষগুলিকে। মায়ের জন্য যা ভাল ছিল, সেটাই শিশুর ক্ষেত্রে ক্ষতিকর। চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় মায়ের ‘রিসার্স আইসো ইমিউনাইজেশন’ আর বাচ্চার ‘হাইড্রপ ফিটালিস’।’’

চিকিৎসকদের মতে গর্ভস্থ ওই শিশুকে বাঁচানোর একমাত্র রাস্তা রক্ত বদল। কারণ, ৬ মাসের গর্ভস্থ শিশুকে প্রসব করিয়েও বিপদ এড়ানো যাবে না। জীবন-মরণ সমস্যা হতে পারে। রমার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা অন্য চিকিৎসক সীতা রামমূর্তি পাল বলেন, ‘‘মা ও শিশুর পেটের ভিতরের অংশ সর্ব ক্ষণ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। সপ্তাহে দু’বার ১৫ থেকে ২০ মিলিলিটার করে রক্ত দিতে হচ্ছে। রক্ত দেওয়ার আগে তা রেডিয়েশনের মাধ্যমে পরিশুদ্ধ করা হয়। যাতে কোনও জীবাণু বা অ্যান্টিবডি না থাকে।’’ এই রক্ত দেওয়ার পদ্ধতিও খুব জটিল। ওই চিকিৎসকের কথায়, ‘‘মায়ের পেটে যে পদ্ধতিতে রক্ত দেওয়া হচ্ছে তার নাম ইন্ট্রা ইউটেরিয়ান ফিটাল ব্লাড ট্রান্সফিউশন। প্রথমে মায়ের পেটের আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করা হয়। বাচ্চার নাড়ি যেখানে মায়ের শরীরের সঙ্গে জুড়েছে সেখানে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় দেওয়া হয় ওই রক্ত।’’

গর্ভস্থ শিশু ৬ মাসের। চিকিৎসকেরা আরও দুই থেকে আড়াই মাস এ ভাবেই তার শরীরে রক্ত দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন। এমনকি জন্মের পরেও তাঁর দু’এক বার রক্ত বদল প্রয়োজন বলে মনে করছেন মল্লিনাথ। তাঁর কথায়, ‘‘আপাতত ঠিক হয়েছে গর্ভস্থ থাকাকালীন সাড়ে ৮ মাস পর্যন্ত ওই শিশুকে এ ভাবে রক্ত দেওয়া হবে। যত দিন পর্যন্ত বাচ্চা প্রসবের উপযুক্ত না হচ্ছে, তত দিন। জন্মানোর পরেও বেশ কয়েক বার রক্ত দিতে হতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

baby Womb Blood Transfusion Mother
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE