দুর্ঘটনার পরে জ্বলছে লরি।
মাসির বিয়ে উপলক্ষে উত্তরপ্রদেশ যাওয়ার কথা ছিল। সেই জন্য ছুটির বিষয়ে কথা বলতে এ দিন স্কুলগাড়ির বদলে মা-ই তাকে সঙ্গে নিয়ে রওনা হয়েছিলেন। তখনই রাস্তা পার হওয়ার সময়ে লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হল সাত বছরের স্নিধি পাণ্ডের। শুক্রবার সকাল সাতটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে চিৎপুর থানা এলাকার চিড়িয়া মোড়ে। ঘটনার পরেই উত্তেজিত জনতা আগুন লাগিয়ে দেয় লরিটিতে। গ্রেফতার করা হয়েছে লরিচালক সঞ্জয় যাদবকে।
পুলিশ সূত্রে খবর, পার্ক সার্কাসের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী স্নিধি কাশীপুরের নিউ ঝিল রোডের বাসিন্দা। এ দিন সকালে স্কুলে যাওয়ার সময়ে চিড়িয়া মোড়ের কাছে মায়ের হাত ধরেই রাস্তা পার হচ্ছিল সে। তখন খগেন্দ্র চ্যাটার্জি রোড থেকে বিটি রোডের দিকে ঘুরছিল একটি লরি। স্থানীয়দের অভিযোগ, তীব্র গতিতে লরিটি সামনে চলে এলে টাল সামলাতে না পেরে রাস্তায় পড়ে যায় স্নিধি। লরির সামনের চাকায় পিষ্ট হয়ে যায় তার মাথা। আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় স্নিধিকে। সেখানেই চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
স্নিধি।
পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পরেই উত্তেজিত জনতা লরিটি ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়। এমনকী, ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়া আরও কয়েকটি লরিতে ভাঙচুর চালানো হয়। আগুনে পুড়ে গিয়েছে একটি গাছও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে যায় চিৎপুর থানার পুলিশবাহিনী। আসে দমকলের দু’টি ইঞ্জিনও। দমকলের একটি গাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
এই দুর্ঘটনায় অবশ্য পরোক্ষ ভাবে পুলিশকেই দায়ী করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, ঘটনাস্থলের কাছেই ছিল পুলিশ। কিন্তু কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ না করে রাস্তার প্রায় সমস্ত গাড়ি থেকেই বেআইনি ভাবে টাকা তুলছিলেন। পুলিশকে ফাঁকি দিতেই খুব দ্রুত গতিতে বি টি রোড দিয়ে বেরোতে গিয়েছিল লরিটি। তখনই ওই দুর্ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। যদিও এ কথা মানতে চাননি পুলিশকর্তারা।
ডিসি (নর্থ) বাস্তব বৈদ্য বলেন, ‘‘পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, প্রাথমিক তদন্তে তার কোনও রকম প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।’’
মৃত শিশুর পরিবার সূত্রে খবর, রোজ স্কুলগাড়িতেই যেত স্নিধি। সামনে মাসির বিয়ে। তাই উত্তরপ্রদেশে মামার বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল তাদের। সেই ছুটির কথা বলতেই এ দিন মা সরোজদেবীর সঙ্গে স্কুলে যাচ্ছিল সে। এ দিন শিশুটির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে চলে এসেছেন স্নিধির পরিজন ও পড়শিরা। চোখের সামনে মেয়েকে লরিতে পিষ্ট হতে দেখেছেন সরোজদেবী। হাসপাতালে মেয়ে কেমন আছে, জানতে চাইছেন বারবার। মৃত্যুর খবর দুপুর পর্যন্তও তাঁকে জানানোর সাহস হয়নি কারও।
— নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy