ছোট ভাই আবদার করেছিল মোটরবাইকে বসিয়ে ঘুরিয়ে আনার জন্য। তাই ভাইকে বাইকের পিছনে বসিয়ে রাতের শহরে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন দাদা। কিছু ক্ষণ পরে দাদা বাবাকে ফোন করে জানালেন, পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ভাইয়ের।
বৃহস্পতিবার রাতে দক্ষিণ বন্দর থানা এলাকার দইঘাটের কাছে পণ্যবাহী গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় আট বছরের ওই বালকের। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম মহম্মদ লাবিব রাজা। তার বাড়ি একবালপুরের ডেন্ট মিশন রোডে। বৃহস্পতিবার রাতে লাবিবকে পিছনে বসিয়ে বাইক চালাচ্ছিলেন তার ১৯ বছরের দাদা মহম্মদ সফি। নেপিয়ার রোডে পণ্যবাহী গাড়ির ধাক্কায় দুই ভাই বাইক থেকে দু’দিকে ছিটকে পড়েন। সেই সময়ে একটি লরির চাকা লাবিবের মাথার উপর দিয়ে চলে যায়। এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা লাবিবকে মৃত ঘোষণা করেন। সে হেলমেট পরে ছিল না বলে জানিয়েছে পুলিশ। দুর্ঘটনার পরেই লরিচালক গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়। লাবিবের বাবা মহম্মদ সামসুদ্দিন জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় জখম হয়েছেন সফিও। তাঁর পায়ে আঘাত লেগেছে। এসএসকেএমে চিকিৎসার পরে সফিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার সামসুদ্দিন দাবি করেন, সফি জানিয়েছেন, লাবিব যখন রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল, তখন এক সিভিক ভলান্টিয়ার বাইক নিয়ে ঘটনাস্থলে এসেছিলেন। কিন্তু লাবিব রাস্তায় পড়ে আছে দেখেও তিনি বাইক ঘুরিয়ে চলে যান। এর প্রায় ১০ মিনিট পরে অন্য পুলিশকর্মী এসে দু’জনকে হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে এ দিন লালবাজার জানিয়েছে, ঘটনার ঠিক পরে সেখান দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ট্র্যাফিক পুলিশের দুই অফিসার। তাঁরাই লালবাজার এবং ট্র্যাফিক গার্ডে খবর দেওয়ার পাশাপাশি জখমদের ট্যাক্সিতে এসএসকেএমে নিয়ে যান।
সামসুদ্দিন জানান, তাঁর স্ত্রী এবং তিন ছেলে রয়েছেন। সফি বড় এবং লাবিব ছোট। মহম্মদ শামি নামে তাঁর আর একটি ছেলে রয়েছে। লাবিব স্থানীয় পুরসভার স্কুলে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল। শামিও পড়াশোনা করে। সফি র্যাপিডো বাইক চালান। সামসুদ্দিন বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাতে সফি কাজ থেকে আসার পরে লাবিব ওকে ঘুরিয়ে আনতে বলে। রাত ৯টা নাগাদ দুই ভাই বাইক নিয়ে বেরোয়। আর রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ সফি আমাকে ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘ভাই মারা গেল। আমি ওকে বাঁচাতে পারলাম না’।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)