Advertisement
E-Paper

বাবার মৃত্যুশোক সামলে টেট দিলেন অন্তঃসত্ত্বা

সাবিনা জানান, তাঁর বিয়ে হয়েছে গত বছর জুন মাসে। বিয়ের পরেই তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৫১
টেট দিয়ে বেরিয়ে আসছেন সাবিনা খাতুন (বাঁ দিকে)। রবিবার, হিন্দু স্কুলে।

টেট দিয়ে বেরিয়ে আসছেন সাবিনা খাতুন (বাঁ দিকে)। রবিবার, হিন্দু স্কুলে। নিজস্ব চিত্র।

পরীক্ষা শেষে রবিবার বিকেলে হিন্দু স্কুলের গেটের বাইরে সিঁড়ির ধাপ দিয়ে আস্তে আস্তে নামছিলেন এক তরুণী। সিঁড়ি দিয়ে নামতে তাঁকে সাহায্য করার জন্য পাশে ছিলেন এক বয়স্ক মহিলা। নামতে কিছুটা অসুবিধা হলেও তরুণীর মুখে তৃপ্তির হাসি। শেষ পর্যন্ত তিনি বহু প্রতীক্ষিত টেট পরীক্ষাটা দিয়েই ফেললেন।

সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা সাবিনা খাতুন নামে ওই পরীক্ষার্থী হিন্দু স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে ‘যুদ্ধ’ জয়ের হাসি হেসে বললেন, ‘‘আজ বাবা যদি জানতে পারতেন টেট পরীক্ষা দিতে পেরেছি, তা হলে খুব খুশি হতেন। বাবার খুব ইচ্ছে ছিল, আমি শিক্ষিকা হব। কিন্তু গত সেপ্টেম্বর মাসে করোনায় উনি মারা যান। বাবার ইচ্ছে পূরণ করার জন্যই আমি সব বাধা পেরিয়ে টেট পরীক্ষায় বসেছি।’’

সাবিনা জানান, তাঁর বিয়ে হয়েছে গত বছর জুন মাসে। বিয়ের পরেই তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসে করোনায় মৃত্যু হয় বাবা হাসান আলমের। সাবিনা বলেন, ‘‘বাবার মৃত্যুতে খুবই ভেঙে পড়েছিলাম। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পরে কিছু শারীরিক অসুবিধা তো ছিলই। কিন্তু টেটের লিখিত পরীক্ষা হবে জানতে পেরে ঠিক করি, যতই অসুবিধা হোক না কেন, কোনও ভাবেই এই পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ ছাড়া যাবে না। কারণ, তিন বছর
পরে টেটের লিখিত পরীক্ষা হচ্ছে। তাই সব অসুবিধা দূরে সরিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছি।’’

পার্ক সার্কাসের আদি বাসিন্দা সাবিনার বিয়ে হয়েছে কল্যাণীতে। এ দিন অবশ্য বাবা-মায়ের কাছ থেকেই তিনি পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন। সিট পড়েছিল ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনে। ভূগোলে স্নাতক সাবিনার সঙ্গে এসেছিলেন মা অঞ্জু বেগম। সাবিনা জানান, সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তিনি পরীক্ষা দিতে পারবেন কি না, জিজ্ঞাসা করেছিলেন প্রতিবেশীদের অনেকেই। তিনি বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে আমার পরিবার, বিশেষ করে আমার মা এবং স্বামী সব সময়ে পাশে ছিলেন। পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ওঁরা সব সময়ে উৎসাহ জুগিয়েছেন।’’

পরীক্ষায় পাশ করে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা হতে পারলে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পাঠ্যক্রমের বিষয়বস্তু ছাড়াও তাদের নৈতিক শিক্ষার উপরে জোর দিতে চান সাবিনা। তাঁর কথায়, ‘‘চার দিকে নীতিবোধের অভাব দেখে খুব খারাপ লাগে। এত হানাহানি, মারামারি, হিংসা, একে অপরকে কাদা ছোড়াছুড়ি— সব দেখে মন খারাপ হয়। ছোট বয়স থেকেই তাই নৈতিক শিক্ষার পাঠ খুব জরুরি।’’

Pregnant Woman TET Examinations
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy