কাজ থেকে ফিরে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেবেন বলে বেরিয়েছিলেন। ফিরতে একটু রাত হবে বলেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু রাত সাড়ে ১০টার পরেও বাড়ি না ফেরায় তাঁকে ফোন করেন বাড়ির লোকজন। তখনই এক বন্ধু ফোন ধরে জানান, মারপিট করতে গিয়ে ওই যুবক জখম হয়েছেন। তাই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরিজনেরা তড়িঘড়ি হাসপাতালে পৌঁছে জানতে পারেন, মৃত্যু হয়েছে ওই যুবকের। মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বাঁশদ্রোণী থানা এলাকার দীনেশনগরে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম প্রসেনজিৎ দাস (২৫)। তাঁর বাড়ি রিজেন্ট পার্ক থানার আনন্দপল্লি এলাকায়। মৃতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্তে নেমে রাতেই কৌশিক বারুই ওরফে বাচ্চা নামে এক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি দীনেশনগরেরই বাসিন্দা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত কৌশিক একটি কারখানার কর্মী। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দীনেশনগর প্রাথমিক স্কুল সংলগ্ন রাস্তার ধারে বসে তাঁরা মদ্যপান করছিলেন। সেই সময়ে ওই মদের আসরে আরও দু’জন যুবক ছিলেন। মদের আসরে মোবাইলে কোনও ছবি দেখা নিয়ে কৌশিক ও প্রসেনজিতের মধ্যে বচসা বাধে। বচসার মধ্যেই আচমকা কৌশিক ছুরি নিয়ে প্রসেনজিতের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন বলে অভিযোগ। এর পরে এলাকার লোকজন ক্ষতবিক্ষত প্রসেনজিৎকে উদ্ধার করে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরে হাসপাতালের তরফে বাঁশদ্রোণী থানায় ফোন করে গোটা বিষয়টি জানানো হয়। রাতেই ওই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে মৃতের পরিবার। পরিজনদের অবশ্য অভিযোগ, থানায় যাওয়ার পরে পুলিশকর্মীদের সঙ্গে বচসা বেধে যাওয়ায় তাঁদের মারধর করা হয়। যদিও মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছে লালবাজার। খুনের ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে লালবাজারের হোমিসাইড শাখা। ধৃত কৌশিকের বিরুদ্ধে আগেও কোনও অপরাধের অভিযোগ ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
টালিগঞ্জের স্টুডিয়োপাড়ায় ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করতেন প্রসেনজিৎ। আনন্দপল্লিতে বাবা-মা ও দাদার সঙ্গে থাকতেন তিনি। মা ঝর্না দাস বলেন, ‘‘বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গেল। অনেক রাতেও ফিরছে না দেখে ওকে ফোন করা হলে বন্ধুরা ফোন ধরে জানায়, মারপিটে ছেলে জখম হয়েছে। হাসপাতালে পৌঁছে জানা যায়, ছেলে মারা গিয়েছে।’’
এই ঘটনায় খুনের উদ্দেশ্য কী, সেটাই ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। প্রসেনজিৎ ও কৌশিকের মধ্যে পুরনো কোনও শত্রুতা ছিল কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ। খতিয়ে দেখা হচ্ছে ঘটনাস্থলে উপস্থিত অন্য দুই বন্ধুর ভূমিকাও। এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে, পুরনো শত্রুতার জেরেই এই ঘটনা। অন্য বন্ধুদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কয়েক জনের সঙ্গে কথাও বলা হয়েছে।’’ বুধবার মৃতদেহের ময়না তদন্ত করা হয়। যার প্রাথমিক রিপোর্টে ছুরির কোপেই মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)