Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
New Corona Strain

নয়া স্ট্রেনের আতঙ্ক-জটে দিল্লিতে তিন দিন আটকে পিতৃহারা যুবক

দিল্লি বিমানবন্দরের একটি সূত্র জানিয়েছে, এই উড়ান চালু নিয়ে দিল্লির কেজরিওয়াল সরকারের আপত্তি ছিল।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:৫০
Share: Save:

বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে তড়িঘড়ি মায়ের কাছে ফিরতে চেয়েছিলেন যুবক। কিন্তু ব্রিটেন থেকে দিল্লি নামার পরে তাঁকে প্রথমে আসতে দেওয়া হয়নি কলকাতায়। বাবার ডেথ সার্টিফিকেট দেখিয়েও লাভ হয়নি। ক্রমাগত অনুরোধ করার পরে রবিবার রাতে বাড়ি ফিরলেন শোকার্ত সেই ছেলে। বাবার মৃত্যুর পরে যেমন মুখাগ্নি করতে পারেননি, তেমনই ১৩ দিনের মাথায় আগামী ১৪ জানুয়ারি বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানেও থাকতে পারবেন না তিনি। সৌরভন রায় নামে সেই যুবক রবিবার দিল্লি বিমানবন্দর থেকে ফোনে বলেন, ‘‘আমার জেঠতুতো দাদা বাবার মূল সৎকার করেছিলেন। উনিই সব কাজ করবেন। আমি অনুষ্ঠানের ধারেকাছে থাকতে পারব না। আমাকে কোয়রান্টিনে থাকতে হবে।’’

এর আগে বিদেশ থেকে দিল্লি অথবা মুম্বই এসে যাঁরা প্রয়োজনে অন্য শহরে যেতে চাইছিলেন, ঠিক প্রমাণপত্র দেখালে তাঁদের পরের উড়ান ধরতে দেওয়া হচ্ছিল। শুধু শর্ত দেওয়া হচ্ছিল যে, সেই গন্তব্যে পৌঁছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেন ১৪ দিনের জন্য গৃহ পর্যবেক্ষণে থাকেন। কিন্তু ব্রিটেনে করোনার নতুন স্ট্রেন ধরা পড়ার পরে পরিস্থিতি এখন বদলে গিয়েছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ব্রিটেন থেকে এ দেশে আসার সব উড়ান বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। বেশ কিছু দিন বন্ধ থাকার পরে গত ৮ জানুয়ারি থেকে আবার তা চালু হয়েছে।

দিল্লি বিমানবন্দরের একটি সূত্র জানিয়েছে, এই উড়ান চালু নিয়ে দিল্লির কেজরিওয়াল সরকারের আপত্তি ছিল। কেন্দ্র সেই আপত্তি না মেনেই উড়ান চালু করে দেয়। তখন দিল্লি সরকার জানিয়ে দেয়, যাঁরাই ব্রিটেন থেকে আসবেন, তাঁদের ১৪ দিনের জন্য দিল্লিতে কোয়রান্টিনে থাকতে হবে। তার পরেই তিনি অন্য শহরে যেতে পারবেন। তা সেই যাত্রীর যত জরুরি কাজই থাকুক না কেন।

আরও পড়ুন: দূরত্ব-বিধি ভুলে ছবির উৎসবে ভিড়ের দাপট পরতে পরতে

তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সৌরভন ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে কলকাতা থেকে ব্রিটেন যান। বর্তমানে সাউদাম্পটনে থাকেন। পাটুলিতে থাকেন বাবা সুব্রতবাবু ও অসুস্থ মা ডলিদেবী। সৌরভন বলেন, ‘‘আমি একমাত্র সন্তান। আমি চলে যাওয়ার পর থেকে বাবাই মায়ের দেখভাল করতেন। গত ২ জানুয়ারি ঘুমের মধ্যেই ৭০ বছর বয়সে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে বাবা চলে যান। মা এখন একা। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়েও অসহায় হয়ে বসেছিলাম। কারণ, তখন সে দেশ থেকে ভারতে কোনও উড়ানই আসছিল না। ব্রিটেন থেকে অন্য দেশের উড়ান বন্ধ থাকায় আমি ঘুরেও আসতে পারতাম না। ৭ জানুয়ারি লন্ডন থেকে দিল্লি আসার বিশেষ বিমান চালু হতেই ৮ তারিখ চলে আসি।’’

নিয়ম মেনে, আসার ৭২ ঘণ্টা আগে পরীক্ষা করিয়ে ব্রিটেন থেকে কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে দিল্লি নামেন সৌরভন। নামার পরে ১৬ ঘণ্টা দিল্লি বিমানবন্দরে অপেক্ষা করে আবার তাঁর কোভিড পরীক্ষা হয় এবং আবার তাঁর রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তখন তিনি পরের উড়ান ধরে কলকাতায় আসতে চাইলে দিল্লি সরকারের নতুন নিয়মের কথা বলা হয়। সৌরভনের কথায়, ‘‘বাবার ডেথ সার্টিফিকেটের কপি আমাকে পাঠানো হয়েছিল। তা দেখিয়ে অনুরোধ করেও লাভ হয়নি। তবু ক্রমাগত অনুরোধ করে গিয়েছি। অসুস্থ মায়ের কথা বলেছি। জানিয়েছি, আমার কলকাতা পৌঁছনো কতটা জরুরি।’’

আরও পড়ুন: করোনায় প্রথম মৃত্যু ঠিক এক বছর আগে

এ বিষয়ে রবিবার এয়ার ইন্ডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলা হয়, এটা দিল্লি সরকারের নিয়ম। ফলে তাদের কিছু করার নেই। দিল্লি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষও একই কথা বলেছেন। তবে, সৌরভনের মতো যাঁরা এ রকম বিশেষ কারণ নিয়ে দিল্লিতে আটকে পড়েছিলেন, তাঁদের বিশেষ ছাড় দেওয়ার জন্য দিল্লি সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছিল। অবশেষে সরকার এ দিন বিকেলে তা মেনে নেওয়ায় সৌরভন রাতেই শহরে পৌঁছন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

New Corona Strain Coronavirus COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE