Advertisement
E-Paper

দুর্গাপুজোর মধ্যেই ঈশ্বরপুজো! বিদ্যাসাগরের জন্মদিন বাঙালি গরিমার ‘অস্ত্র’ তৃণমূলের, বাড়তি ‘অক্সিজেন’ জোগাল শাহি সফর

অমিত শাহ কলকাতা সফরে না-এলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিদ্যাসাগর কলেজে যেতেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে। আবার অনেকের বক্তব্য, অভিষেক এমনিতেই যেতেন। কারণ, বাংলা ‘বর্ণপরিচয়’-এর লেখককে সম্মান জানানোর ‘হাতিয়ার’ বাঙালি গরিমাকে তুলে ধরতে হলে অব্যর্থ।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৮:৫৯
Abhishek Banerjee attacks Amit Shah over Bengali sentiments on Ishwar Chandra Vidyasagar\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s birthday

(উপরে) বিদ্যাসাগর কলেজে ঈশ্বরচন্দ্রের ভাঙা মূর্তির খণ্ডে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ইজ়েডসিসি-তে বিদ্যাসাগরের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন অমিত শাহ (নীচে)। ছবি: সংগৃহীত।

দুর্গাপুজোর চতুর্থীতে ঈশ্বরপুজোকে বিজেপির বিরুদ্ধে ‘অস্ত্র’ করল তৃণমূল। তবে এই ঈশ্বর রক্তমাংসের। তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তাঁর জন্মদিবসে বাঙালি গরিমাকে তুলে ধরে বিজেপি-কে বিঁধলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যাতে বাড়তি অক্সিজেন জুগিয়ে দিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কলকাতা সফর। কারণ, সেই সূত্রেই তৃণমূল তাদের প্রচারে ফিরিয়ে আনল ছ’বছর আগে শাহের নির্বাচনী রোড শো চলাকালীন বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনা।

২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে কলকাতায় রোড শো করেছিলেন শাহ। কলেজ স্ট্রিটে সেই কর্মসূচির সময়েই বিদ্যাসাগর কলেজে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা হয়েছিল। পুরো ঘটনার জন্য বিজেপিকে দায়ী করেছিল শাসক তৃণমূল। ঘটনাচক্রে, ওই ভোটে সামগ্রিক ভাবে সারা বাংলায় ভাল ফল করলেও ওই ঘটনার পরে যে আসনগুলিতে ভোট হয়েছিল, তার একটিতেও জিততে পারেনি বিজেপি।

ছ’বছর আগের সেই ঘটনার কথা শাহের স্মরণে রয়েছে কি না জানা নেই। তবে তৃণমূল শাহি সফরের দিন সেই ‘সুযোগ’ হাতছাড়া করেনি। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক স্বয়ং পৌঁছে গিয়েছিলেন বিদ্যাসাগর কলেজে। সেখানে এখনও সংরক্ষিত রাখা আছে বাংলায় নবজাগরণের অন্যতম প্রাণপুরুষের ভাঙা মূর্তির খণ্ড। প্রথমে সেখানে শ্রদ্ধা জানান অভিষেক। তার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে বিদ্যাসাগরের যে পূর্ণাবয়ব মূর্তি বসানো হয়েছে, সেখানে গিয়েও তাতে শ্রদ্ধা জানান।

বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতায় পৌঁছেছিলেন শাহ। শুক্রবার সকালে তিনি তাঁর এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে বিদ্যাসাগরের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। অনেকের বক্তব্য, তৃণমূল যে বিদ্যাসাগরের জন্মদিবসকে ‘রাজনীতির হাতিয়ার’ করবে, তা বুঝেই রাজ্য বিজেপির পরামর্শে ওই পোস্ট করেন শাহ। আবার কারও কারও দাবি, এই ধরনের তারিখ বড় নেতাদের সমাজমাধ্যম নিয়ন্ত্রক দলের কাছে ‘ক্যালেন্ডার’ করা থাকে। তারাই যা করার করেছে। তবে ঘটনাপরম্পরা বলছে, এর আগে যেমন তৃণমূলের কোনও শীর্ষনেতাকে এই দিনটিতে বিদ্যাসাগর কলেজে হাজির হয়ে তাঁকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে দেখা যায়নি, তেমনই শাহকেও এর আগে এই দিনে সমাজমাধ্যমে কোনও বিদ্যাসাগর সংক্রান্ত পোস্ট করতে দেখা যায়নি।

নিউটাউনের হোটেল থেকে প্রথমে শাহ গিয়েছিলেন সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে (লেবুতলা পার্ক) বিজেপি নেতা সজল ঘোষের পুজো উদ্বোধনে। তার পরে কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিয়ে, ইজ়েডসিসি-তে মিনিট সাতেক ঢুঁ মেরে চলে যান বিমানবন্দরে। ইজ়েডসিসি-তেই বিদ্যাসাগরের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান শাহ। আর বিদ্যাসাগর কলেজ প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে শাহের উদ্দেশে অভিষেক প্রশ্ন তোলেন, ‘‘লেবুতলা পার্ক থেকে বিদ্যাসাগর কলেজে পৌঁছোতে গাড়িতে মেরেকেটে ১০ মিনিট লাগে। উনি এখানে আসতে পারলেন না? এই জন্যই বলি, বিজেপি বাংলা-বিরোধী। ওরা উত্তর ভারতের সংস্কৃতি চাপিয়ে দিতে চায়। কিন্তু ওরা জানে না, এই বাংলা ব্রিটিশদের সামনেও মাথা নত করেনি। এরা তো কোন ছার!’’ প্রত্যাশিত ভাবেই ২০১৯ সালের প্রসঙ্গও মনে করিয়ে দেন অভিষেক। খতিয়ান দেন, বিদ্যাসাগরের গ্রামের ভিটে থেকে তাঁর কলকাতার বাড়ি সংস্কারে মমতার সরকার কী কী পদক্ষেপ করেছে, কত অর্থ খরচ করেছে।

শাহ কলকাতা সফরে না-এলে অভিষেক বিদ্যাসাগর কলেজে যেতেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে। সেই সূত্রেই অনেকের বক্তব্য, শাহের সফর তৃণমূলের ‘ঈশ্বরবন্দনায়’ ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। ঘটনাচক্রে, অভিষেক বিদ্যাসাগর কলেজে পৌঁছোনোর খানিক ক্ষণ আগেই কলকাতা হাই কোর্ট রায় দেয়, বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’ করা বীরভূমের অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বিবি, তাঁর স্বামী ও পুত্রকে চার সপ্তাহের মধ্যে ভারতে ফেরাতে পদক্ষেপ করতে হবে কেন্দ্রকে। তৃণমূল ধারাবাহিক ভাবে বলে আসছে, বিজেপিশাসিত বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষীদের ‘বাংলাদেশি’ বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সোনালি বিবি এবং তাঁর পরিবারের ক্ষেত্রেও একই কথা বলেছিল শাসকদল। আবার এই ‘পুশব্যাক’ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে শাহের অধীনস্থ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সেই প্রসঙ্গও টেনেছেন অভিষেক। বাংলাভাষা, বাংলাভাষীদের বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’, বিদ্যাসাগরের জন্মদিন, ছ’বছর আগের মূর্তিভাঙা— সব এক সুতোয় গেঁথে নিয়ে শাহকে বিঁধেছেন তৃণমূলের ‘সেনাপতি’।

বিদ্যাসাগরের জন্মদিনে তৃণমূলের শাসনে শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতির প্রসঙ্গকে জুড়ে শুক্রবার সকাল থেকে সমাজমাধ্যমে প্রচার শুরু করেছিল বিজেপি। কিন্তু বেলা গড়াতেই বিজেপির সেই প্রচারকে শুধু সমাজমাধ্যমে ভোঁতা করা নয়, সশরীরে বিদ্যাসাগর কলেজে পৌঁছে যান অভিষেক। যা বুধবার রাতেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল। যে কর্মসূচির মধ্যে কাছাকাছি পৌঁছে ‘পাল্টা’ দেওয়ার ছাপ রয়েছে। কারণ, শাহের প্রথম পুজো উদ্বোধন ছিল উত্তর কলকাতাতেই। পিঠোপিঠি সময়ে তার কাছাকাছি বিদ্যাসাগর কলেজে পৌঁছোন অভিষেক। বিজেপির কর্মসূচিতে স্পষ্ট হয়েছে যে, তাদের কাছে শুক্রবার ছিল দুর্গাপুজোর চতুর্থী। পক্ষান্তরে, তৃণমূল সেই দিনটিকেই রূপ দিয়েছিল ঈশ্বরচন্দ্রের জন্মদিবস উদ্‌যাপনের। যা থেকে আরও এক বার স্পষ্ট হল, ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের ‘বর্ণপরিচয়’ হতে চলেছে বাংলা ও বাঙালির ‘গরিমা’।

Abhishek Banerjee Amit Shah
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy