Advertisement
০৯ অক্টোবর ২০২৪

জনরোষে চুরমার এসি ভলভো বাস

শহরের রাজপথে দামি বাতানুকূল বাসের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সাত দিন আগেই লালবাজারের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সিএসটিসি কর্তৃপক্ষ। পুলিশ নড়েচড়ে বসতে না বসতেই ঘটে গেল দুর্ঘটনা। যার জেরে ভাঙচুর করা হল সদ্য পথে নামা একটি এসি ভলভো বাস। রবিবার দিনে-দুপুরে ঘটনাটি ঘটে শহরের একটি থানা ও ট্রাফিক গার্ডের ঢিলছোড়া দূরত্বে।

আক্রান্ত সেই বাস। রবিবার, কড়েয়া থানা এলাকায়।  নিজস্ব চিত্র

আক্রান্ত সেই বাস। রবিবার, কড়েয়া থানা এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৪ ০২:১৯
Share: Save:

শহরের রাজপথে দামি বাতানুকূল বাসের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সাত দিন আগেই লালবাজারের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সিএসটিসি কর্তৃপক্ষ। পুলিশ নড়েচড়ে বসতে না বসতেই ঘটে গেল দুর্ঘটনা। যার জেরে ভাঙচুর করা হল সদ্য পথে নামা একটি এসি ভলভো বাস।

রবিবার দিনে-দুপুরে ঘটনাটি ঘটে শহরের একটি থানা ও ট্রাফিক গার্ডের ঢিলছোড়া দূরত্বে। বাসটির ধাক্কায় চার নম্বর ব্রিজে মোটরবাইক আরোহী এক যুবকের মৃত্যুর জেরে ‘জনরোষে’ই বাসটির এমন পরিণতি বলে পুলিশ স্বীকার করে নিয়েছে। চুরমার হওয়া বাসটির দাম কোটি টাকা। এর ফলে বিপুল টাকা মাসুল দিতে হবে বলে এখন হা-হুতাশ করছেন সিএসটিসি কর্তৃপক্ষ।

জেএনএনইউআরএম প্রকল্পের টাকায় কয়েক বছর ধরেই দফায় দফায় সুদৃশ্য এসি বাসগুলি শহরের রাস্তায় চালানো শুরু হয়েছে। নীল-সাদা রঙের এসি বাসের পাদানি বা আসনে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যেরও কমতি নেই। এ দিন দুর্ঘটনায় পড়া বাসটি বড়জোর মাসখানেক আগে চলতে শুরু করেছিল। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ মোটরবাইক আরোহী এক যুবক আচমকা সামনে চলে আসার আগে পর্যন্ত তার সফরও ছিল মোটামুটি মসৃণ।

পুলিশ জানায়, শেখ শাকিল ওরফে মুন্না (৩৫) নামে ওই যুবক মোবাইলে কথা বলতে বলতে মোটরবাইক চালাচ্ছিলেন। ই এম বাইপাসের দিকে যাওয়ার পথে চার নম্বর ব্রিজ থেকে নামার সময়ে আচমকাই খানাখন্দের মুখে পড়েন তিনি। কোনও মতে টাল সামলে মোটরবাইক সরাতে গিয়েই রাস্তার মাঝ বরাবর চলে এসেছিলেন মুন্না। তখনই পিছনে থাকা হাওড়া-নিউ টাউন রুটের ওই বাসটির সামনে পড়েন। বাসের ধাক্কায় বাইক থেকে ছিটকে পড়েন মুন্না। তাঁকে চিত্তরঞ্জন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ‘মৃত’ ঘোষণা করা হয়।

দুর্ঘটনাস্থল কড়েয়া থানার এলাকাভুক্ত। তবে তার কাছেই তপসিয়া থানা ও ইস্ট ট্রাফিক গার্ড। স্থানীয় সূত্রের বক্তব্য, বাইক আরোহীকে বাসটি ধাক্কা মারার আধ ঘণ্টা পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ততক্ষণ দামি বাসটির উপরে অবাধে ‘আক্রোশ’ মেটায় জনতার একাংশ। বাসটির কাচ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া ছাড়াও যন্ত্রাংশের ক্ষতি হয়েছে। এ দিন দুপুরে সিএসটিসি-র এক শীর্ষ কর্তার আক্ষেপ, “পুলিশকে হাতে-পায়ে ধরে বলেছি, ভাঙাচোরা বাসের কঙ্কাল সরানোর সময়ে দয়া করে ক্রেন ব্যবহার করবেন না, টানা-হ্যাঁচড়ায় আরও বেশি ক্ষতি হবে।”

এ সব দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে যা হয়, নিয়মমাফিক বাসের চালক সুবীরকুমার দাসকে ধরেছে পুলিশ। তবে ‘জনরোষ’ সামাল দিতে পুলিশ কেন সময় মতো তৎপর হল না, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্র বলেন, “কী ঘটেছে, তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।” সেই সঙ্গে দামি এসি বাসগুলির নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখতে সিএসটিসি কর্তৃপক্ষের চিঠির কথা অবশ্য তিনি মেনে নিচ্ছেন। তাঁর বক্তব্য, “দুর্ঘটনার পরে সব ধরনের যানবাহনকে নিরাপত্তা দিতেই চেষ্টা করে থাকি।’’ তবে এ দিনের দুর্ঘটনার পরে পুলিশের পৌঁছতে কেন আধ ঘণ্টা দেরি হল, পুলিশকর্তাদের কাছে তার সদুত্তর মেলেনি।

পুলিশ জেনেছে, এ দিনের দুর্ঘটনায় মোটরবাইক আরোহীকে মোবাইলে কথা বলতে দেখেছেন কিছু প্রত্যক্ষদর্শী। তিলজলার বাসিন্দা ওই যুবকের মাথায় হেলমেটও ছিল না। ট্রাফিক কর্তাদের একাংশের স্বীকারোক্তি, হয়তো রবিবার ছুটির দিনে রাজপথে পুলিশি নজরদারি কিছুটা ঢিলেঢালা ভেবেই ওই ব্যক্তি বিষয়টি আমল দেননি। এমনিতে মোটরবাইক চালানোর সময়ে হেলমেট না-পরা বা স্টিয়ারিং হাতে কানে ফোন গুঁজে কথা বলা বন্ধে কলকাতা পুলিশ প্রায়ই প্রচার করে থেকে। কিন্তু এই ধরনের ‘অপরাধে’ জরিমানা যৎসামান্য। এ দিনের দুর্ঘটনা ফের পুলিশের ট্রাফিক সচেতনতা সংক্রান্ত প্রচারের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন ছুড়ে দিল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE