বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে হুল্লোড় পার্টিতে দরকার বিদেশি পানীয়। মোবাইলে জানালেই গোটা পেটি হাজির হবে একেবারে বাড়ির দরজায়। এমনকী মিলবে বাজারের চেয়ে কম দামেও। বাজারে সিঙ্গল মল্ট সেই হুইস্কির এক লিটারের দাম ৪৭০০ টাকা হলেও আপনার কাছে সেই বোতল পৌঁছে যাবে ৩৫০০ টাকায়। এক লপ্তে ১০ বোতল কিনলে ১২ হাজার টাকা সাশ্রয়!
এমন একটি সক্রিয় চক্র বেআইনি ভাবে বিদেশি পানীয় সংগ্রহ করে বলে অভিযোগ। তার পরে বাজারের থেকে অনেক কম দামে ওই পানীয় পৌঁছে দেয় ক্রেতার দোরগোড়ায়। আর বিক্রেতাও মুনাফা করেন মোটা অঙ্কের। শুধু নির্দিষ্ট শুল্ক না পেয়ে লোকসান হয় সরকারের।
সম্প্রতি একটি সূত্র মারফত রাজ্য আবগারি দফতরের কাছে চক্রটির খবর পেয়ে ফাঁদ পাতেন দফতরের অফিসারেরা। ক্রেতা সেজে ফোনে যোগাযোগ করা হয় বিক্রেতার সঙ্গে। বলা হয়, বড় পার্টির জন্য বিদেশি পানীয়ের প্রয়োজন। মধ্য কলকাতার এক হোটেলে ডাকা হয় দুই বিক্রেতাকে। বেঙ্গল এক্সাইজ অ্যাক্ট ৪৬এ ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে ওই দু’জনকে। বাজেয়াপ্ত হয়েছে ২৫ বোতল বিদেশি পানীয়।
ধৃতদের নাম নারায়ণ গায়েন ওরফে রনি এবং রবি বাল্মীকি। কালিকাপুরের বাসিন্দা নারায়ণ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ করেন। রবি ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক জওয়ানের ছেলে। সেই সুবাদে থাকতেন ফোর্ট উইলিয়ামের ভিতরেই।
রবি বাল্মীকি ও নারায়ণ গায়েন
আবগারি দফতর সূত্রে খবর, কম দামে এই ধরনের বিদেশি পানীয় একমাত্র মেলে বিমানবন্দরে ডিউটি ফ্রি শপে। বাজারে যে পানীয়ের দাম ৪৭০০ টাকা, ডিউটি ফ্রি শপে তা মেলে ২৪০০ টাকায়। বিদেশ থেকে যাঁরা শহরে আসেন, শুধু তাঁরাই পাসপোর্ট দেখিয়ে জনপ্রতি ২টি করে বোতল কিনতে পারেন। এখন বেশিরভাগ বিদেশি পানীয়ই সরকারকে প্রদেয় কর দিয়ে কলকাতার দোকানে, শপিং মলে কিনতে পাওয়া যায়। তাই যে পানীয়ের দাম বিমানবন্দরে ২০০০ টাকা, তা-ই কলকাতার দোকানে ৩৫০০ টাকা।
এর মাঝেই চোরাগোপ্তা কাজ করতে শুরু করেছে একটি চক্র। অভিযোগ, তারা কোনও উপায়ে ডিউটি ফ্রি শপের দামে বাজার থেকে পানীয় জোগাড় করে ও মাঝামাঝি একটি দামে তা বেচে দেয়।
আবগারি দফতরের কলকাতার কালেক্টর সুব্রত বিশ্বাস জানান, পার্ক স্ট্রিটের অভিজাত পাড়ায় রনির নিজের অফিস রয়েছে। বেআইন পানীয় কেনা-বেচার পাশাপাশি বিজ্ঞাপনের ছবিও বানান রনি। এ বিষয়ে তাঁর আত্মবিশ্বাস এতটাই যে আবগারি অফিসার যখন তাঁকে ফোন করে ২৫ বোতল সিঙ্গল মল্ট হুইস্কি কিনতে চান, তিনি সেই ক্রেতার বিস্তারিত পরিচয় খতিয়ে দেখার প্রয়োজনও মনে করেননি। সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘হোটেলে রনি ৪৭০০ টাকার পানীয় ৩৫০০ টাকায় বিক্রি করতে চলে আসেন। কিছু পরে আসেন রবি। তাঁর কাছেই ছিল ২৫ বোতল পানীয়। বমাল গ্রেফতার করা হয় দু’জনকে।’’
সূত্রের খবর, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গিয়েছে খিদিরপুর ডক থেকে ওই পানীয় জোগাড় করেছেন রবি। তিনিই সরবরাহ করেছেন রনিকে। রবি যাঁর কাছ থেকে সেই পানীয় কিনেছিল, তাঁর এখনও হদিস মেলেনি। আবগারি কর্তা সুব্রতবাবুর কথায়, ‘‘বিদেশ থেকে যে পণ্যবাহী জাহাজে বেআইনি ভাবে বিদেশি পানীয় কলকাতায় আসে আনা হয়। তা চোরাপথে ঢুকে পড়ে শহরে ও কম দামে বিক্রি হয়ে যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy