Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Panihati

Panihati Municipality: গাফিলতি ঢাকতেই কি এখন অতিরিক্ত তৎপরতা, উঠছে প্রশ্ন

রবিবার দুপুরে মৃত্যুর ঘটনা ঘটার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই প্রশাসনের তরফে দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়।

নজরদারি: বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মেলা। সেখানেই পুলিশি টহল। সোমবার, পানিহাটিতে। ছবি: সুমন বল্লভ

নজরদারি: বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মেলা। সেখানেই পুলিশি টহল। সোমবার, পানিহাটিতে। ছবি: সুমন বল্লভ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২২ ০৬:৪০
Share: Save:

দুর্ঘটনার পরে মৃতদের পরিবারের সঙ্গে সত্বর যোগাযোগ করা থেকে ক্ষতিপূরণের চেক লিখে দেওয়া— সব কাজই হয়েছে রীতিমতো তড়িৎ গতিতে। রবিবার পানিহাটির দণ্ড মহোৎসবে তিন জনের মৃত্যুর ঘটনার পরে দেহ বাড়িতে পৌঁছনোর আগেই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার যাবতীয় কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেখা গিয়েছে পুলিশকর্তা থেকে প্রশাসনিক আধিকারিকদের মধ্যে। দুর্ঘটনা ঘটার আগে এই প্রশাসনিক তৎপরতা কোথায় ছিল— সেই প্রশ্ন তুলেছেন মৃতদের পরিবার থেকে মেলায় এসে অসুস্থ হয়ে পড়া পুণ্যার্থীরা।

অনেকেরই প্রশ্ন, ‘‘প্রাণহানির পরে তৎপরতা দেখিয়ে কি আসলে নিজেদের গাফিলতি ঢাকার চেষ্টা করা হচ্ছে?’’

রবিবার পানিহাটির দণ্ড মহোৎসবে তিন জনের মৃত্যুর পাশাপাশি অসুস্থের তালিকাও ছিল দীর্ঘ। এক সময়ে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, পানিহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে অসুস্থদের চিকিৎসা করার পাশাপাশি, সেখান থেকে চিকিৎসকদের বিশেষ দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছয়। ঘটনাস্থলে আসেন আশপাশের একাধিক সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালেরচিকিৎসক ও নার্সরাও। অস্থায়ী শিবিরে রেখে কোনও মতে চিকিৎসা চলে অসুস্থদের। প্রশাসনেরতরফে গরমে শরীরে সোডিয়াম-পটাশিয়ামের পরিমাণ কমে যাওয়াকেই অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণ হিসেবে দেখানো হলেও স্থানীয়দের দাবি, এর জন্য আসলে দায়ীমেলায় চূড়ান্ত অব্যবস্থা। অভিযোগ, ওই বিপুল সংখ্যক মানুষের ভিড় সামলানোর জন্য কোনও রকম বন্দোবস্তই ছিল না সেখানে। এমনকি, তিন জনের মৃত্যুর জন্য এই গাফিলতিকেই দায়ী করেছেন অনেকে।

যদিও রবিবার দুপুরে মৃত্যুর ঘটনা ঘটার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই প্রশাসনের তরফে দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়। এমনকি, মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরে মেলাপ্রাঙ্গণে অস্থায়ী শিবিরের সামনেবসেই মৃতদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতেদেখা যায়। কোথায়, কার সঙ্গে দেখা করতে হবে, তাড়াতাড়ি কার সঙ্গে কথা বলতে হবে— সে বিষয়ে ফোনেই প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশ দিতেও শোনা যায় প্রশাসনিক আধিকারিকদের। সোমবার বিকেলে মৃতদেরপরিবারের সদস্যদের পানিহাটি পুর কর্তৃপক্ষ ডেকে পাঠান বলে খবর। তাই দেহগুলির ময়না-তদন্তের রিপোর্ট আসার আগেই তড়িঘড়ি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার এই প্রশাসনিক ‘তৎপরতা’ রীতিমতো চোখ টেনেছে অনেকের। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার এই তৎপরতার লেশমাত্র কেন মৃত্যু আটকাতে দেখা গেল না, কেন প্রশাসনের তরফে সুষ্ঠু ভাবে উৎসব পরিচালনা করা হয় না— সেই প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।

মৃত ছায়া দাসের এক আত্মীয় বলছেন, ‘‘আসলে টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা মাত্র। নিজেদের খামতিগুলো ঢেকে দেওয়ার তৎপরতা। এই তৎপরতাটুকুই যদি আগে দেখাত, তা হলে কাউকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মতো পরিস্থিতিই তৈরি হত না। টাকা দিলে কি আমাদের বাড়ির লোক ফিরে আসবে?’’ উৎসবে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া এক প্রৌঢ়ের আত্মীয় সুমন্ত দেবনাথের কথায়, ‘‘প্রশাসনের গাফিলতি না থাকলে এই অবস্থা কোনও দিন হতে পারে না। ওখানে ভিড় সামলানোর কোনও বন্দোবস্তই ছিল না। এমনকি, প্রথমে অসুস্থদের কী ভাবে বার করে আনা হবে, সেই সিদ্ধান্ত নিতে গিয়েও দিশাহারা অবস্থা ছিল পুলিশ ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের।’’

যদিও এই অভিযোগ মানতে চাননি কোনও প্রশাসনিক আধিকারিকই। মেলার সঙ্গে যুক্ত এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আগে থেকেই সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছিল। ভিড়ের সঙ্গে সঙ্গে গরম বেড়ে যেতেই এই বিপত্তি। প্রশাসনের তরফে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করায় সেটাই দ্রুত পরিবারের হাতে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

কিন্তু সেই অতি-তৎপরতা নিয়ে স্থানীয় এক বাসিন্দার কটাক্ষ— ‘‘এই তৎপরতা আগে দেখালে এই দিন দেখতে হত না!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

Panihati Panihati municipality
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE