Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ল্যাপটপ কেনা স্থগিত, হস্তক্ষেপ যাদবপুরেও

কলকাতার পর এ বার যাদবপুর। ফের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠল শিক্ষা দফতরের বিরুদ্ধে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্তক্ষেপের পিছনে ছিল ফিনান্স অফিসারের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ এবং ওই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে কলকাতা বিশ্বদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষকদের উপরে টিএমসিপি-র হামলা।

শিক্ষা দফতরের যুগ্মসচিবের সেই চিঠি। —নিজস্ব চিত্র।

শিক্ষা দফতরের যুগ্মসচিবের সেই চিঠি। —নিজস্ব চিত্র।

সু্প্রিয় তরফদার
শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৫ ০৩:৫৪
Share: Save:

কলকাতার পর এ বার যাদবপুর। ফের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠল শিক্ষা দফতরের বিরুদ্ধে।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্তক্ষেপের পিছনে ছিল ফিনান্স অফিসারের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ এবং ওই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে কলকাতা বিশ্বদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষকদের উপরে টিএমসিপি-র হামলা। আর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষেত্রটি প্রস্তুত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০০ জন শিক্ষককে ল্যাপটপ দেওয়ার সিদ্ধান্তকে ঘিরে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, গত বছর ৬০০ জন শিক্ষককে ল্যাপটপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০১৫-এর ৩ মার্চ কর্মসমিতির বৈঠকে সেই সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়ে। ল্যাপটপ কেনার প্রক্রিয়াও শুরু করে দেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ২২ মে শিক্ষা দফতরের যুগ্মসচিবের চিঠির পরে সেই সিদ্ধান্ত আটকে যায়। ওই চিঠিতে বলা হয়, ল্যাপটপ কেনার প্রক্রিয়া নিয়ে নানা রকমের অভিযোগ উঠেছে। তাই বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের সবিস্তার রিপোর্ট চাইছে শিক্ষা দফতর।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনাতেও শিক্ষামন্ত্রী রিপোর্ট তলব করেছিলেন উপাচার্যের কাছে। উপাচার্য সুরঞ্জন দাস নিজে গিয়ে সেই রিপোর্ট জমা দিয়ে আসেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার ভঙ্গ হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। উপাচার্যের নিয়োগ-কর্তা আচার্য রাজ্যপাল। সে ক্ষেত্রে উপাচার্য কেন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট দেবেন এবং কেনই বা শিক্ষামন্ত্রী রিপোর্ট চাইবেন তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যও কিন্তু যুগ্মসচিবের চিঠির জবাব দিয়েছেন প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। কেন তিনি যুগ্ম সচিবকে চিঠি দেবেন, সেই প্রশ্ন তোলেননি।
শুধু তাই নয়, শিক্ষা দফতর তাঁর দেওয়া রিপোর্টের জবাব কেন দিচ্ছে না, তা নিয়ে খোঁজখবরও নেন তিনি। আচার্য রাজ্যপালকে কিন্তু এ সব ব্যাপারে কিছুই জানানো হয়নি বলে রাজভবন সূত্রের খবর। শিক্ষা দফতরের চিঠির ভিত্তিতেই ল্যাপটপ দেওয়ার প্রক্রিয়াটি স্থগিত করে রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ।

কেন শিক্ষা দফতরের হস্তক্ষেপে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির সিদ্ধান্ত স্থগিত করলেন?

হস্তক্ষেপের প্রশ্নটি এড়িয়ে যাদবপুরের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য আশিস ভার্মা বলেন, ‘‘সরকারের তরফ থেকে কোনও রিপোর্ট চাওয়া হয়নি। কিছু প্রশ্ন করা হয়েছিল। তার উত্তর দেওয়া হয়েছে।’’

কিন্তু আদৌ কি তিনি উত্তর দিতে বাধ্য? আশিসবাবু বলেন, ‘‘হ্যাঁ, বাধ্য।’’

বিশ্ববিদ্যালয় স্বশাসিত সংস্থা। উপাচার্যের নিয়োগ কর্তা আচার্য রাজ্যপাল। তা হলে রাজ্য সরকারের নির্দেশ তিনি কেন মানবেন?

আশিসবাবু বলেন, ‘‘সরকার জানতে চেয়েছে, আমি জানিয়েছি। ব্যস এটুকুই।’’

কিন্তু কর্মসমিতির সিদ্ধান্ত আটকে রাখা হয়েছে কেন?

আশিসবাবুর জবাব, ‘‘সরকারের থেকে ইতিবাচক বার্তা পেলেই প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।’’

বিশ্ববিদ্যালয় কী করবে, তা নিয়ে রাজ্য সরকার কথা বলার কে?

ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য আর কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

তিনি কি আচার্য রাজ্যপালকে এ বিষয়ে কিছু জানিয়েছিলেন? আশিসবাবুর সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘‘না।’’

শিক্ষক সংগঠন অল বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের (আবুটা) যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কিন্তু মনে করে, শিক্ষা দফতর এ ভাবে রিপোর্ট তলব করার মানেই হল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারে সরাসরি হস্তক্ষেপ। ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দিক থেকেও সেই চিঠির জবাব দিয়ে স্বশাসন ভাঙা হয়েছে বলে মনে করেন তাঁরা। আবুটা-র যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক গৌতম মাইতি বলেন, ‘‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় রাজ্য সরকারের টাকায় চলে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজের টাকা থেকেই ল্যাপটপ
কেনার প্রক্রিয়া চালু হয়েছিল। কোন অধিকারে সরকার রিপোর্টে চেয়ে পাঠাল, আর কীসের ভিত্তিতেই উপাচার্য সেই রিপোর্টের জবাব দিলেন?’’

তিনি জানান, বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরে মে মাস থেকে এ পর্যন্ত ৮টি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। কোনওটিরই উত্তর পাওয়া যায়নি। প্রতিবাদে ১০ জুলাই কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৬০০ জন শিক্ষক।

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় কী বলছেন?

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘ল্যাপটপ কেনার ঘটনায় নানা অভিযোগ সংবাদমাধ্যমেই প্রথম উঠেছিল। তার ভিত্তিতেই সরকার খোঁজ নিয়েছে। জনগণের টাকার প্রশ্ন যেখানে রয়েছে, সরকার তো জানতে চাইবেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE