E-Paper

ভিড় নেই পথে, নিত্য গন্ডগোলের কসবাও আতঙ্কে হঠাৎ থমথমে

একটি শপিং মলকে ঘিরে সব সময়ে জমজমাট থাকা কসবার এই অংশকে যেন চেনাই যাচ্ছে না শুক্রবার সন্ধ্যার ঘটনার পরে। যেখানেই দাঁড়ানো হচ্ছে, কানে আসছে, গলা নামিয়ে পুরপ্রতিনিধিকে খুনের চেষ্টা নিয়ে আলোচনা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৪ ০৬:২০
কসবায় ঘটনাস্থলে পুলিশি পাহারা। শনিবার।

কসবায় ঘটনাস্থলে পুলিশি পাহারা। শনিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

একের পর এক রেস্তরাঁ ও ক্যাফের ঝাঁপ নামানো। যেগুলি খোলা রয়েছে, সেখানেও ক্রেতার দেখা নেই বললেই চলে। একটি শপিং মলকে ঘিরে সব সময়ে জমজমাট থাকা কসবার এই অংশকে যেন চেনাই যাচ্ছে না শুক্রবার সন্ধ্যার ঘটনার পরে। যেখানেই দাঁড়ানো হচ্ছে, কানে আসছে, গলা নামিয়ে পুরপ্রতিনিধিকে খুনের চেষ্টা নিয়ে আলোচনা। এমনই এক আলোচনায় কান পাততেই শোনা গেল, ‘‘বাড়ির সামনেই এ ভাবে হামলার চেষ্টা হবে, ভাবা যায়! শাসকদলের কাউন্সিলরেরই যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?’’ আর এক আলোচনায় শোনা গেল, ‘‘কোথাও জমি-বাড়ি, কোথাও দোকান পাতা নিয়ে কসবায় এখন নিত্যদিন ঝামেলা চলে। হাতাহাতি, মারামারিতে এলাকা উত্তপ্ত হওয়া খুব সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু এমন কিছু আগে কখনও ঘটেনি। তাই চেনা জমজমাট পাড়াও কেমন যেন জনশূন্য দেখাচ্ছে!’’ আতঙ্কের রেশ ছড়িয়েছে কসবার অলিগলিতেও।

কসবার চক্রবর্তী পাড়া হঠাৎই আলোচনায় উঠে এসেছে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে। এখানেই নিজের বাড়ির সামনের ফুটপাতে চেয়ার পেতে বসে দুই সাংবাদিকের সঙ্গে গল্প করছিলেন পার্শ্ববর্তী ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি সুশান্ত ঘোষ। সেখানেই স্কুটারে চেপে এসে এক কিশোর তাঁকে খুব কাছ থেকে গুলি করার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। কিন্তু কোনও কারণে গুলি চলেনি। পালানোর চেষ্টা করলেও কোনও মতে ওই কিশোরের স্কুটারে ওঠা রুখে দেন উপস্থিত এক সাংবাদিক। এর পরে স্থানীয় কয়েক জন ছুটে এসে তাকে ধরে ফেলেন। সুশান্তকে ঘিরে এমন ঘটনা কিন্তুনতুন নয়।

দিনকয়েক আগেই ক্লাব দখলকে কেন্দ্র করে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল কসবায়। আক্রান্ত হয়েছিলেন এক প্রৌঢ় দম্পত্তি। মাস পাঁচেক আগে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে কসবার পি মজুমদার রোডে। দেদার বোমাবাজির পাশাপাশি কয়েক রাউন্ড গুলিও চলে বলে অভিযোগ। এলাকা থেকে উদ্ধার হয় গুলির খোল। সেই ঘটনায় এক মহিলা আহত হন। গত বছরও একই ভাবে বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছিল একটি জমির দখলকে কেন্দ্র করে। সে বারও দুই গোষ্ঠীর বিবাদে দেদার বোমাবাজি হয় বলে অভিযোগ করেছিলেন স্থানীয়েরা। গত কয়েক মাসে একের পর এক ঘটনায় এমনিতেই আতঙ্কে ছিলেন কসবার বাসিন্দারা। শুক্রবার সন্ধ্যার ঘটনা সেই আতঙ্ককে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

শনিবার ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা গেল, স্থানীয় শপিং মল থেকে এক দিকের রাস্তা ধরে খানিকটা এগোলেই সুশান্তের বাড়ি। লম্বা পাঁচিলে ঘেরা। সদর দরজাও পাঁচিলে ঢাকা। গোটা বাড়ি কার্যত সিসি ক্যামেরায় মোড়া। আগের রাতের ঘটনার পরে সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে বাড়তি পুলিশ। বাড়ির নীচে রয়েছে একটি ক্যাফে। কিন্তু সেটি বন্ধ। সেখানে কাজ করা এক যুবক বললেন, ‘‘দাদা অতিথিদের জন্য চা দিতে বলেছিলেন। সেই চা তৈরি করতে বলে বাইরে বেরোতেই দেখি, একটি ছেলে স্কুটার থেকে নেমে গুলি চালানোর চেষ্টা করল। এমনিতে রাত ১২টা পর্যন্ত এই এলাকা জমজমাট থাকে। কিন্তু ওই ঘটনার পরে রাস্তা ফাঁকা হয়ে গেল রাত সাড়ে ৮টাতেই। পর পর ক্যাফে, রেস্তরাঁ সব বন্ধ হয়ে গেল। এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি।’’ এই যুবকের সঙ্গে কথার মাঝেই দেখা গেল, পর পর মোটরবাইক বাহিনী এগিয়ে আসছে। ঘটনাস্থল প্রদক্ষিণ করে ফিরে গেল তারা। কী ব্যাপার? স্থানীয় এক যুবক বললেন, ‘‘এরা দাদার অনুগামী। রাত থেকে এরাই নজর রাখছে।’’

সুশান্তের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই একটি বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে এক বৃদ্ধ। বললেন, ‘‘এখানে এ সব নতুন কিছু নয়। শাসকদলেরই কাউন্সিলরদের মধ্যে সংঘাতের জেরে এখানে মাঝেমধ্যেই ঝামেলা হয়। তা থেকে গুলি-বোমাও চলেছে।’’ একই দাবি পাড়ার বাসিন্দা মধ্যবয়সি এক মহিলার। তিনি বলেন, ‘‘কিছু বললেই বাড়ি এসে শাসিয়ে যাবে। বার, রেস্তরাঁ থেকে হোটেল, সব কিছু নিয়েই এখানে ঝামেলা চলে। আদতে টাকা ওড়ে এই এলাকায়। কারা টাকার ভাগ বেশি পাবে, সেটাই লড়াইয়ের মূল কারণ।’’

সেই লড়াইয়ের জেরেই কি গত রাতের ঘটনা? সুশান্ত বললেন, ‘‘এই এলাকার চরিত্র বদলে যাচ্ছে। দুর্বৃত্তদের প্রভাব বাড়ছে। দলের নেতাদের জানিয়েছি সেটা। কিন্তু তার জেরে এমন হবে, ভাবতে পারিনি।’’ সুশান্ত আগে নিজের পাড়া ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি ছিলেন। কিন্তু তিন বছর আগে সেখান থেকে তাঁকে পাশের ওয়ার্ড ১০৮ নম্বরে সরিয়ে দেওয়া হয়। তখন থেকেই ১০৭ নম্বরের পুরপ্রতিনিধি লিপিকা মান্নার বাহিনীর সঙ্গে সুশান্তের বাহিনীর গন্ডগোলের অভিযোগ সামনে এসেছে বার বার। এ নিয়ে লিপিকা যদিও বললেন, ‘‘স্বরূপদার (সুশান্তের ডাকনাম) সঙ্গে কোনও গন্ডগোল নেই। দলে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও নেই।’’ স্থানীয় বাসিন্দারা কি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন? উত্তরে লিপিকা বলেন, ‘‘এটা তো হতেই পারে। আমি কি সেই জন্য ঘরে বসে থাকব? ভয়ের কোনও ব্যাপার নেই।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

kasba TMC Councillor police

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy