Advertisement
E-Paper

আইনের ছাত্রছাত্রী, প্রাক্তনীদের মিছিল কসবায়, নিরাপত্তা চেয়ে বিক্ষোভ বর্তমান পড়ুয়াদেরও, কলেজ আপাতত বন্ধই

সোমবার সকাল থেকে কসবায় ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ জারি। ১০ থেকে ১২টি আইন কলেজের ছাত্রছাত্রী এবং প্রাক্তনী জড়ো হয়েছেন। মিছিল করেছেন কসবা থানা থেকে কলেজ পর্যন্ত।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২৫ ১৫:১১
কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের বাইরে মোতায়েন পুলিশ। সোমবার।

কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের বাইরে মোতায়েন পুলিশ। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র।

আইনের ছাত্রছাত্রী এবং প্রাক্তনীদের বিক্ষোভ মিছিল চলছে কসবায়। সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজ আপাতত অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। রবিবারই সেই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজের বর্তমান ছাত্রছাত্রীরাও বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করেছেন। দাবি একটাই— ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীদের অবিলম্বে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে নিরাপত্তা। কলেজের পড়ুয়ারা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে ক্যাম্পাসে জমায়েত করেছেন। কিন্তু উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি বলে অভিযোগ। তাঁরা উপাচার্যকে দেওয়ার জন্য একটি ডেপুটেশন তৈরি করেছেন।

সোমবার সকাল থেকে কলকাতায় বৃষ্টি হচ্ছে। কখনও মুষলধারে কখনও ঝিরঝিরে বৃষ্টি হয়েই চলেছে। সেই বৃষ্টির মধ্যেই কসবায় ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ জারি। কলেজের সামনে প্রচুর পরিমাণে পুলিশ মোতায়েত করা রয়েছে। রয়েছেন মহিলা পুলিশকর্মীরাও। ঘটনাস্থলে অর্থাৎ, কলেজের ইউনিয়ন রুম এবং রক্ষীর ঘরের দিকে কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এর মাঝেই কলকাতার ১০ থেকে ১২টি আইন কলেজের ছাত্রছাত্রী এবং প্রাক্তনী সোমবার সকালে কসবায় জড়ো হয়েছিলেন। দুষ্কৃতীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে কসবা থানা থেকে সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজ পর্যন্ত হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে মিছিল করেন তাঁরা। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অনেকেই বর্তমানে পেশায় আইনজীবী। তাঁদের বক্তব্য, আইনের ছাত্রছাত্রী, যাঁরা ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষের হয়ে আদালতে লড়বেন, তাঁদেরই কলেজে নির্যাতিত হতে হচ্ছে। তাহলে নিরাপত্তা কোথায়!

সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা ধর্ষণের ঘটনায় মূল অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। দাবি, অতীতেও একাধিক মহিলার সঙ্গে তিনি দুর্ব্যবহার করেছেন। কলেজের পিকনিকে গিয়ে মেয়েদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করেছেন। তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের সেক্রেটারি পদের লোভ দেখিয়ে অনেক মেয়েকেই ‘টোপ’ দিতেন অভিযুক্ত। এ ক্ষেত্রেই সেটাই করেছিলেন। অভিযোগ, প্রথম এবং দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীদেরই ‘টার্গেট’ করা হত। কসবাকাণ্ডের নির্যাতিতা জানিয়েছেন, গত ২৫ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১০টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যে ধর্ষণ করা হয়েছে তাঁকে। পড়ুয়াদের দাবি, নানা কারণে কলেজের ক্লাসের নির্ধারিত সময়ের পরেও তাঁদের কলেজে থেকে যেতে হয়। সে ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন অনেকেই। অভিযোগ, ক্যাম্পাসের ভিতরে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা নেই। নিরাপত্তারক্ষীর ভূমিকাও সন্তোষজনক নয়। অভিযোগ, কলেজে যে কেউ ঢুকে পড়েন। রক্ষী পরিচয়পত্র দেখেন না অনেক ক্ষেত্রেই। কলেজ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে প্রথম থেকেই উদাসীন বলে দাবি করেছেন ছাত্রছাত্রীদের একাংশ। ক্যাম্পাস থেকেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিক্ষোভকারীরা। বর্তমান পড়ুয়া দেবদ্যুতি সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘প্রথম বর্ষ থেকে পঞ্চম বর্ষ পর্যন্ত আমরা সকলেই এখানে জড়ো হয়েছি। কলেজে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কর্তৃপক্ষের কাছে তাই ডেপুটেশন জমা দিতে চাই। কিন্তু উপাচার্য জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি আসতে পারবেন না।’’ ওই কলেজের চতুর্থ বর্ষের আর এক ছাত্রী জ়োয়া আলম বলেন, ‘‘আমাদের কলেজের নিরাপত্তারক্ষী কারও কার্ড দেখেন না। দীর্ঘ দিন কলেজে সেমিনার হয়নি।’’ রোকেয়া দাশগুপ্তের কথায়, ‘‘আমরা চাই, এই কলেজের নিরাপত্তা জোরদার হোক, পড়াশোনা ঠিকমতো চলুক। কারণ, কলেজটা পড়াশোনা করারই জায়গা। আমরা সেটাই করতে এসেছি।’’

কসবার রাস্তায় আইনের ছাত্রছাত্রী ও প্রাক্তনীদের মিছিল।

কসবার রাস্তায় আইনের ছাত্রছাত্রী ও প্রাক্তনীদের মিছিল। —নিজস্ব চিত্র।

সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে গণধর্ষণের ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মূল অভিযুক্ত, যিনি প্রাক্তনী এবং ওই কলেজেরই অস্থায়ী কর্মী। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা ওই অভিযুক্ত। এ ছাড়া, নির্যাতিতা লিখিত ভাবে আরও যে দু’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলেন, তাঁরাও পুলিশি হেফাজতে। ঘটনার দিন দায়িত্বে থাকা কলেজের রক্ষীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ, প্রথমে ইউনিয়ন রুমে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। পরে রক্ষীর ঘরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয় তাঁকে। রক্ষীকে সে সময়ে বাইরে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। এই ঘটনার তদন্তে ইতিমধ্যে ন’জন সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করেছে কলকাতা পুলিশ। নেতৃত্বে রয়েছেন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার (দক্ষিণ শহরতলি) প্রদীপকুমার ঘোষাল। ঘটনাস্থলে গিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ করছেন তাঁরা। সংগ্রহ করা হয়েছে সাড়ে সাত ঘণ্টার সিসিটিভি ফুটেজ। কসবার ঘটনা খতিয়ে দেখতে শহরে চার সদস্যের তথ্যানুসন্ধানী দল পাঠিয়েছে বিজেপি। সোমবার বিকেলে তাঁদের ওই কলেজে যাওয়ার কথা। কিন্তু পুলিশের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি মেলেনি।

kasba Kasba Rape Case Gangrape Case Kolkata Crime
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy