E-Paper

ডিজে বক্স থেকে শব্দবাজির তুমুল দাপট বিসর্জনেও

নগরপাল বলেছিলেন, বিসর্জনে ডিজে বরদাস্ত করা হবে না। তা হলে এটা কী? উত্তর নেই সংশ্লিষ্ট পুজোর কর্তাদের কাছে। প্রশ্ন করার মতো কোনও পুলিশকর্মীকেও দেখা গেল না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:২৪
কালীপুজোর প্রতিমা নিরঞ্জনের শোভাযাত্রায় বাজছে ডিজে। হাওড়ার পাওয়ার হাউসের কাছে।

কালীপুজোর প্রতিমা নিরঞ্জনের শোভাযাত্রায় বাজছে ডিজে। হাওড়ার পাওয়ার হাউসের কাছে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

ট্রেলারের চার দিকে লাগানো ১২টি বিশাল সাউন্ড বক্স। উপরে নানা কায়দার আলো। ট্রেলারের মাঝের অংশে তারের জট। সেটির কাছেই একটি যন্ত্রের সামনে মাথা ঝাঁকিয়ে নেচে চলেছেন এক যুবক। মাঝেমধ্যে হেডফোন খুলে হাতে ধরা মাউথপিসে কিছু বলছেন, আর সামনের রাস্তায় ভিড়ের মধ্যে উচ্ছ্বাস বাড়ছে। কেউ রাস্তায় শুয়ে পড়ছেন, কেউ চটুল নাচের ভঙ্গি করছেন। ট্রেলারের গায়ে লাগানো আলো এমন ভাবে রাস্তায় পড়ছে, যেন চলন্ত ‘ডিস্কো থেক’!

নগরপাল বলেছিলেন, বিসর্জনে ডিজে বরদাস্ত করা হবে না। তা হলে এটা কী? উত্তর নেই সংশ্লিষ্ট পুজোর কর্তাদের কাছে। প্রশ্ন করার মতো কোনও পুলিশকর্মীকেও দেখা গেল না। বুক কাঁপানো সেই বিসর্জন যাত্রার জেরে হাসপাতালের নিঃশব্দ এলাকার সমস্ত নিয়ম ভেঙে খান খান। কানে আঙুল দিয়ে ছুটে যাচ্ছেন রোগীর পরিজনেরা। তাঁরা বলছেন, ‘‘বুক কাঁপছে। আর পারছি না।’’

কালীপুজো ও তার পরের দিনের মতো বিধি-ভঙ্গের এমন চিত্রই দেখা গেল বৃহস্পতিবার, বিসর্জনের শেষ দিনেও। শোভাযাত্রার নামে রাস্তা আটকে দেদার বাজি ফাটানো চলল, হেলায় ভাঙা হল ট্র্যাফিক বিধি। সাউন্ড বক্স ও মাইকের দাপট চলল গত ক’দিনের মতোই। দেখা গেল, দেদার ডিজে-র ব্যবহারও। উৎসবের এই ছবিই কি থাকবে ছটপুজোয়?

এ দিনই শহরের বেশির ভাগ বড় প্রতিমার বিসর্জন হয়েছে। বিসর্জনের সব চেয়ে বেশি চাপ ছিল বিবেকানন্দ রোড, বিডন স্ট্রিট, অরবিন্দ সরণি, গ্রে স্ট্রিট ও স্ট্র্যান্ড রোডে। এর জন্য বাড়তি পুলিশি বন্দোবস্ত রাখা হয়েছিল বলে লালবাজারের দাবি। প্রায় সব বড় মোড়ে পুলিশকর্তাদের দেখা গিয়েছে। ঘাটের কাছে ছিল আলাদা নজরদারি। কয়েকটি শোভাযাত্রা থামিয়ে সাউন্ড বক্স খোলাতেও দেখা গিয়েছে পুলিশকে। এ দিন পুলিশ ৫৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে বাজি ফাটানোর জন্য ধৃত আট জন। অন্যান্য বিধি ভাঙায় ধৃত ৪৯ জন। বাজি বাজেয়াপ্ত হয়েছে ৩.৭ কেজি।

অভিযোগ, এই নজরদারি হালকা হতে শুরু করে রাত বাড়তেই। তখন আমহার্স্ট স্ট্রিট, বৌবাজার ও খিদিরপুরের কয়েকটি পুজোর বিসর্জনের শোভাযাত্রা বেরোয়। তৈরি হয় যানজট। গিরিশ পার্কের কাছে ‌এক অটোযাত্রী বললেন, ‘‘২০ মিনিট দাঁড়িয়ে দ্বিগুণ ভাড়ায় অটো পেয়েছি। তা-ও আটকে আছি। শোভাযাত্রা থামিয়ে বাজি ফাটানো হচ্ছে।’’ রবীন্দ্র সরণিতে শব্দবাজি ফাটাতে ব্যস্ত এক যুবক বললেন, ‘‘কিছু বাজি রেখে দেওয়া হয়েছিল বিসর্জনের জন্য। আওয়াজ আর আলো না হলে কি কালীপুজোর বিসর্জন বলে মনে হয়!’’

এত বিতর্কের পরেও বিসর্জনের শেষ দিনে বাজি রোখা গেল না কেন? শোভাবাজার মোড়ে কর্তব্যরত এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘যেখানেই চোখে পড়ছে, কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ অনেকেরই দাবি, বিসর্জনের শব্দ-তাণ্ডবও পুলিশ থামাতে পারেনি। ঘাটের কাছে বসতি এলাকায় রাতভর বক্স বেজেছে। সেই সঙ্গে তাসা পার্টির তীব্র আওয়াজ। শোভাবাজারের একটি আবাসনের এক বাসিন্দার মন্তব্য, ‘‘গঙ্গার ধারে নতুন ফ্ল্যাট নিয়েছি। সারা রাত বাজি ও সাউন্ড বক্সের আওয়াজে মা-বাবা ঘুমোতে পারেননি। দু’জনেরই হৃদ্‌রোগের সমস্যা আছে। পুলিশকে ফোন করেও লাভ হয়নি। বলা হয়েছে, একটু আওয়াজ তো হবেই!’’ গ্রে স্ট্রিটের বয়স্ক দম্পতিরও অভিযোগ, ‘‘রাতভর জেগে কাটিয়েছি।’’

প্রসঙ্গত, সব রকম মাইক, সাউন্ড বক্সে সাউন্ড লিমিটর লাগানোর নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু তা আছে খাতায়-কলমে। প্রথম সারির এক ডেকরেটর্স ব্যবসায়ীর দাবি, ‘‘লিমিটর লাগালে বক্স কেউ ভাড়া নেবে না। বক্স বাজিয়ে গোটা পাড়াকে শোনাতে চায় মানুষ। বিসর্জনে এমন বক্সের দাবি থাকে, যার ডেসিবেল দুশোরও বেশি!’’ এক যুগ্ম নগরপালের দাবি, ‘‘গানবাজনা নিয়ে বিসর্জনে যাওয়াটা বহু দিনের রীতি। হঠাৎ বদল করা যায়?’’ আইন-বিরুদ্ধ রীতিও তার মানে স্বমহিমায় থাকবে? উত্তর মেলে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

DJ kalipuja Diwali deepabali

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy