Advertisement
০৮ মে ২০২৪

আড্ডায় ফিরল পাঁচ দশক আগের ছাত্রজীবন

গড়িয়াহাটের একটি হোটেলের ব্যাঙ্কোয়েট ভাড়া করে এ দিন মিলিত হন শিবপুরের তৎকালীন বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রাক্তনীরা।

পুনর্মিলন: আড্ডায়-গল্পে একসঙ্গে। রবিবার, গড়িয়াহাটে। ছবি: সুমন বল্লভ

পুনর্মিলন: আড্ডায়-গল্পে একসঙ্গে। রবিবার, গড়িয়াহাটে। ছবি: সুমন বল্লভ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৯ ০২:১৫
Share: Save:

বছর কুড়ির তরুণেরা আজ সত্তর পেরিয়েছেন। কারও কারও শরীরে রোগ থাবা বসিয়েছে। কিন্তু কে বলবে ওঁরা সত্তরোর্ধ্ব? গল্পে আড্ডায় সুকুমার রায়ের ‘হযবরল’-এর হিসেব মতো রবিবারের বৃষ্টিমুখর দুপুরে ফের তা কুড়িতে ঠেকেছিল। স্মৃতিচারণেই ওঁরা হেঁটে গেলেন বটানিক্যাল গার্ডেনে। কেউ মানস-ভ্রমণ করে এলেন বঙ্গবাসী সিনেমা হলে। অলকা সিনেমায় চার বন্ধু মিলে টিকিট কেটে দেব আনন্দকে দেখার উত্তেজনাও ফিরে এল আড্ডায়।

গড়িয়াহাটের একটি হোটেলের ব্যাঙ্কোয়েট ভাড়া করে এ দিন মিলিত হন শিবপুরের তৎকালীন বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রাক্তনীরা। ১৯৭০ সালের ওই ব্যাচটি কর্মসূত্রে ছড়িয়ে গিয়েছে দেশে-বিদেশে। তাঁদের এখন অনেকেই অবসর জীবন কাটাচ্ছেন। প্রাক্তনীদের স্মৃতিচারণে ধরা পড়ল সেই সময়ের টুকরো ছবি। তখন রাজ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছিল হাতে গোনা। জয়েন্ট এন্ট্রান্স পাশ করে শিবপুর বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন ওঁরা।

সেই সময়ে হাতে গোনা কয়েক জন মেয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তেন। তাঁদের ব্যাচে মেয়ে পড়ুয়া ছিলেন মাত্র তিন জন। তাই মহিলা বন্ধু বলতে ছিলেন হাওড়া গার্লস কলেজের মেয়েরা। তাঁদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতানোর জায়গা ছিল বটানিক্যাল গার্ডেন। ১৯৬৬ সালে তখন মুক্তি পেয়েছে জয় মুখোপাধ্যায় অভিনীত ‘লাভ ইন টোকিও’। প্রতিটি গানই সুপারহিট। বটানিক্যাল গার্ডেনে হাওড়া গার্লস কলেজের বান্ধবীদের সেই সব গান শুনিয়ে তাঁরা তখন নায়ক।

পঞ্চাশ বছর পরেও সহপাঠী শঙ্করবরণ দাসকে দেখে চিনতে একটুও ভুল করলেন না সুবলচন্দ্র ভৌমিক। শঙ্করের হাতে এখন লাঠি। তাতে কী? পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হতেই খুনসুটি শুরু করলেন তিনি। পুরনো কথায় ফিরে ফিরে এল বটানিক্যাল গার্ডেন, শিবপুরের অলকা, বঙ্গবাসী, ঝর্না সিনেমা এবং শিবপুর গঙ্গার জেটি, ধর্মতলা-শিবপুর রুটের ৫৫ নম্বর বাসের কথা। এ সব কথার মাঝেই গুন গুন করে গান ধরেছিলেন সোমনাথ ভট্টাচার্য, ‘রহে না রহে হাম...’। পাশ থেকে ধীমান ভট্টাচার্য বলে ওঠেন, ‘‘এই গান শুনলেই আমার মনে পড়ে যায় বটানিক্যাল গার্ডেনের কথা। ‘মমতা’ সিনেমার এই গানের শুটিং করতে ওখানেই গিয়েছিলেন সুচিত্রা সেন ও অশোক কুমার। ক্লাস কেটে আমরা বন্ধুরা গিয়েছিলাম শুটিং দেখতে। শুটিংয়ের ফাঁকে গাছের নীচে মোড়ায় বসেছিলেন সুচিত্রা সেন। এখনও সে দৃশ্য চোখে ভাসে।’’

এত হাসিঠাট্টার মাঝেও লেখাপড়া নিয়ে হস্টেলে রীতিমতো রাত জেগে চর্চা করতেন বন্ধুরা। রাতের পর রাত জেগে পড়াশোনা, নোটস লেখা— সে সবও এ দিন ফিরে ফিরে এল আড্ডায়। ঘুরে এল শিক্ষকদের কথা। তুহিন দে, রথীন বন্দ্যোপাধ্যায়রা জানান, মাস্টারমশাইদের জন্যেই তাঁরা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছেন। অথচ এক সময়ে তাঁদের বেশির ভাগেরই আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে দ্রুত পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তোলার চিন্তাই মুখ্য ছিল তাঁদের ্নেকের কাছে। তাই হাসি-মজার ফাঁকেও জোরকদমে চলত পড়াশোনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Reunion IIEST Alumnus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE