Advertisement
E-Paper

দুমড়ে যাওয়া কিয়স্কের মধ্যে দুঃস্বপ্নের দেড় ঘণ্টা

ঈশ্বরে বরাবরই তাঁর গভীর বিশ্বাস। মৃত্যুর দোরগোড়া থেকে ফিরে আসার পর তিনি নিশ্চিত, ঈশ্বর ছাড়া আর কেই বা এমন ‘অলৌকিক’ ভাবে বাঁচিয়ে দিল তাঁকে! হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এখনও শিউরে শিউরে উঠছেন বেচারাম পোড়েল। আর থেকে থেকেই দু’হাত তুলে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন পোস্তা থানার এই কনস্টেবল।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৬ ১৩:৪৬
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বেচারাম। —নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বেচারাম। —নিজস্ব চিত্র।

ঈশ্বরে বরাবরই তাঁর গভীর বিশ্বাস। মৃত্যুর দোরগোড়া থেকে ফিরে আসার পর তিনি নিশ্চিত, ঈশ্বর ছাড়া আর কেই বা এমন ‘অলৌকিক’ ভাবে বাঁচিয়ে দিল তাঁকে! হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এখনও শিউরে শিউরে উঠছেন বেচারাম পোড়েল। আর থেকে থেকেই দু’হাত তুলে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন পোস্তা থানার এই কনস্টেবল।

বৃহস্পতিবার দুপুরে যখন হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল উড়ালপুল, তিনি তখন ঠিক নীচে পুলিশ কিয়স্কের মধ্যে। উড়ালপুলের একটা অংশ ভেঙে পড়ে সেই কিয়স্কের মাথায়। খেলনার মতো দুমড়ে মুচড়ে যায় কিয়স্ক। ছাদ প্রায় মেঝেতে মিশে যায়। ভারী কিছু একটার আঘাতে কিয়স্কের মধ্যেই এক ধারে ছিটকে পড়ে যান তিনি। মাথা কাজ করছিল না। কোথা থেকে যে কী হয়ে গেল, কিচ্ছু বুঝে উঠতে পারছিলেন না। কিয়স্কের মধ্যে উড়ালপুলের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে এই ভাবে আটকে ছিলেন টানা দেড় ঘণ্টা। তারপর... এক একটা মুহূর্ত কেটেছে মৃত্যুর প্রহর গুনে। যেন মনে হচ্ছিল জীবনের শেষ কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে।

আরও পড়ুন: নির্মীয়মাণ বহুতল আর উড়ালপুল ছিনিয়ে নিয়েছে ২৬ হাজারেরও বেশি প্রাণ!

হুগলিতে তাঁর ভরা পরিবার। মুখের সামনে শুধু সেই মুখগুলোই ভেসে উঠছিল। তাঁদের সঙ্গে আর কখনও দেখা হল না বোধহয়! হাতের মোবাইল ফোনটা কোথায় যেন ছিটকে গিয়েছে। খুঁজবেন কোথায়? এমন ভাবে চাপা পড়ে ছিলেন যে মাথা ঘোরানোরও উপায় ছিল না। কয়েকবার চিৎকার করে বাইরের লোকজনকে ডাকার চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু বাইরের আর্তনাদ আর হাহাকারে চাপা পড়ে যাচ্ছিল তাঁর মরণপণ আওয়াজ। কে তখন শুনবে তাঁর কথা! বুকে, পিঠে অসহ্য যন্ত্রণা। মৃত্যুভয়ে কাঁপতে কাঁপতেই হঠাত্ শুনতে পেলেন, কোথাও যেন তাঁর ফোনটা বেজে ওঠল। শব্দ অনুসরণ করে হাতড়ে হাতড়ে কোনওক্রমে ফোনটা তোলেন। পোস্তা থানার নম্বর। বুকে আশার তোলপাড়। থানাকে জানান, তিনি কিয়স্কের মধ্যেই চাপা পড়ে রয়েছেন। ব্যস, তারপর আবার সব চুপচাপ। কই, কেউ তো বাঁচাতে এল না! ফোনও আর করছে না কেউ। যে ক্ষীণ আশার আলো দেখতে পেয়েছিলেন, ফের তা হারাতে শুরু করেছিল। চোখ বন্ধ করে মৃত্যুকে আহ্বান করা ছাড়া আর কোনও উপায় দেখছিলেন না তিনি।

তত ক্ষণে অবশ্য উদ্ধারকারীদের নিয়ে কিয়স্কের কাছে পৌঁছে যায় পোস্তা থানার পুলিশ। গ্যাস কাটার দিয়ে ধ্বংসস্তূপ কেটে আস্তে আস্তে তাঁকে উদ্ধার করতে লেগে যায় দেড় ঘণ্টা। ততক্ষণে জ্ঞান হারিয়েছেন বেচারাম। জ্ঞান যখন ফিরল তখন তিনি হাসপাতালের বিছানায়। সারা শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা। ঘিরে রয়েছে পরিবার আর সহকর্মীরা। এখনও পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছেন না তিনি বেঁচে ফিরেছেন। বারবারই তাঁর মনে হচ্ছে, স্বপ্ন নয় তো!

flyover collasp police constable kolkata vivekananda flyover
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy