টাকা ছিনতাই করে পালানোর সময়ে দুষ্কৃতীদের বাধা দেওয়ায় তাদের ছোড়া গুলিতে মৃত্যু হল এক যুবকের। রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর থানার পানাকুয়া এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম গোবিন্দ পাঁজা (৩৭)। তিনি ছিলেন পেশায় অটোচালক। এই ঘটনায় এক অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়েছে। তাকে জেরা করে বাকিদের খোঁজ চলছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, রবিবার রাত ৯টা নাগাদ পানাকুয়ার ধাড়াপাড়ায় মুরগির মাংসের ব্যবসায়ী শঙ্কর ধাড়ার বাড়িতে টাকা দিতে আসছিলেন তাঁর কর্মচারী দেবাশিস প্রামাণিক। ওই সময়ে বাড়ির পিছনে কলাবাগানে লুকিয়ে ছিল চার দুষ্কৃতী। দেবাশিস বাড়ির কাছে আসতেই তাঁর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে নগদ টাকা ও মোবাইল ছিনতাই করে দু’টি মোটরবাইকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। যা দেখে এক জনের বাইক নিয়ে তাদের ধাওয়া করেন অটোচালক গোবিন্দ। সঙ্গে যোগ দেন পাড়ার আরও অনেকে। পালাতে গিয়ে দু’টি বাইকই রাস্তায় পড়ে যায়। তখনই পিস্তল থেকে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। গোবিন্দের শরীরে দু’টি গুলি লাগে, একটি বুকে ও একটি গলায়। তাতে এলাকার লোকজন ঘাবড়ে গিয়ে একটু সরে যেতেই দৌড়ে পালিয়ে যায় চার দুষ্কৃতী। গুরুতর জখম গোবিন্দকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
দেবাশিস বলেন, ‘‘মালিকের বাড়িতে প্রতিদিনই বিভিন্ন দোকান থেকে সংগ্রহ করা ও সারা দিনের ব্যবসার টাকা দিতে আসি। দোতলা থেকে একটি ব্যাগ দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সেই ব্যাগে টাকা ভরে দিলে তা তুলে নেওয়া হয়। এ দিন প্রায় দু’লক্ষ ৭০ হাজার টাকা নিয়ে
এসেছিলাম। ব্যাগে ভরার সময়েই দুষ্কৃতীরা এসে হাজির হয়। সকলেরই মুখ ঢাকা ছিল। শূন্যে একটি গুলি চালায় ওরা। তার পরে আমার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে নগদ টাকা ও মোবাইল ছিনতাই করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে শুনতে পাই, এলাকার লোকজন ওদের ধরার চেষ্টা করেছিলেন। তাতেই এক জন গুলিবিদ্ধ হন।’’
মুরগির মাংসের ব্যবসায়ী শঙ্কর বলেন, ‘‘মাসকয়েক আগে দুষ্কৃতীরা আমার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে সোনার চেন, মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনতাই করে পালিয়ে গিয়েছিল। পুলিশে অভিযোগও দায়ের করা হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেউ ধরা পড়েনি।’’
আর এক স্থানীয় ব্যবসায়ী জয়দেব পাত্র বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীরা টাকা ছিনতাই করে পালিয়ে যাওয়ার সময়ে আমরা অনেকে মিলে ওদের আটকানোর চেষ্টা করি। দুষ্কৃতীরা বাইক থেকে পড়ে যায়। তার পরেই গুলি চালায়। গোবিন্দের গায়ে গুলি লাগে।’’
ওই ব্যবসায়ীর দাবি, ‘‘এলাকায় একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। নগদ টাকা নিয়ে চলাফেরা করলেই ছিনতাইকারীরা হানা দিচ্ছে। গত কয়েক মাসে ওই এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসায়ীর আট থেকে দশ লক্ষ টাকা ছিনতাই হয়েছে। পুলিশে অভিযোগ করা সত্ত্বেও কোনও প্রতিকার হয়নি। আমরা আতঙ্কিত।’’ এই ঘটনার পরে অবশ্য দুষ্কৃতীদের বাইক দু’টি আটক করা হয়েছে। সেগুলির নম্বরের সূত্র ধরেই ঘটনার পরে আসিফ মণ্ডল নামে এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে
বিষ্ণুপুর থানা সূত্রের খবর। ধৃতের কাছ থেকে একটি ৭ এমএম পিস্তল ও কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। ধৃতকে জেরা করে বাকি দুষ্কৃতীদের খোঁজ করা হচ্ছে।
ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা গিয়েছে। তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ গোবিন্দের মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। তাঁর এক আত্মীয় বলেন, ‘‘কিছু দিন ধরে গোবিন্দ পানাকুয়ায় শ্বশুরবাড়িতে থাকছিল। ওর স্ত্রী অসুস্থ, শয্যাশায়ী। ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরে বৃদ্ধা মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তবে, গোবিন্দের স্ত্রীকে এখনও মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়নি।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)