E-Paper

টিকিট না করিয়ে চিকিৎসা নয়! আর জি করে মৃত্যু জখম যুবকের

অভিযোগ, গোপাল বণিক নামে যুবকের মুখ, বুকের ক্ষত দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে দেখেও তাঁর চিকিৎসা শুরু করা হয়নি। বরং, আগে জরুরি বিভাগের টিকিট করিয়ে আনতে বলা হয়। এর প্রায় মিনিট কুড়ি পরে ওই যুবককে পরীক্ষা করে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৫ ০৮:৪৩
গোপাল বণিক।

গোপাল বণিক।

ট্রেনের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন বছর একুশের এক যুবক। তড়িঘড়ি মোটরবাইকে চাপিয়ে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন পরিজনেরা। অভিযোগ, গোপাল বণিক নামে ওই যুবকের মুখ, বুকের ক্ষত দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে দেখেও তাঁর চিকিৎসা শুরু করা হয়নি। বরং, আগে জরুরি বিভাগেরটিকিট করিয়ে আনতে বলা হয়। এর প্রায় মিনিট কুড়ি পরে ওই যুবককে পরীক্ষা করে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। সোমবার রাতে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই ঘটনার পরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন রোগীর পরিজনেরা।

শহরের এক মেডিক্যাল কলেজে এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, যে রোগীর রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তাঁকে আগে চিকিৎসা দিয়ে স্থিতিশীল করাটা কি জরুরি ছিল না? টিকিট করিয়ে না-আনাপর্যন্ত কেন চিকিৎসা শুরু হবে না? আর জি করের উপাধ্যক্ষ সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, রাত সওয়া ১০টা নাগাদ ওই রোগীকে নিয়ে আসা হয়। টিকিট করতে গেলে যুবকের বয়স জানতে চাওয়ায় তাঁর এক আত্মীয় জানান, আধার কার্ড আনা হয়নি। তখন জরুরি বিভাগ থেকে জানানো হয়েছিল, আধার কার্ডের প্রয়োজন আছে। সপ্তর্ষি বলেন, ‘‘আধার কার্ড পরে আনলেও হবে বলে ওঁদের জানানো হয়েছিল।দশ-পনেরো মিনিটের মধ্যে চিকিৎসক এসে পরীক্ষা করে দেখেন, হাসপাতালে আসার পথেই ওই রোগীর মৃত্যু হয়েছে।’’ দক্ষিণদাঁড়ির ঋষি অরবিন্দ কলোনির বাসিন্দা গোপালের পরিজনদেরঅভিযোগ, এক সিভিক ভলান্টিয়ার তাঁদের স্পষ্ট জানান, আগে টিকিট করতে হবে। সেই বিষয়ে উপাধ্যক্ষ বলেন, ‘‘কোনও সিভিক ভলান্টিয়ার আর জি করে নেই। তা-ও ওঁদের অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

গোপালের মামা দিলীপ সিংহ জানাচ্ছেন, ওই রাতে বিধাননগর ও দমদম স্টেশনের মাঝেরেললাইনের অদূরে একটি মাঠের পাশের মন্দিরের সামনে বন্ধুদের সঙ্গে বসে ছিলেন গোপাল। তিনি প্রস্রাব করতে রেললাইনের ধারে যান। সেই সময়ে আচমকাই শিয়ালদহমুখী একটি ট্রেন চলে আসে। ট্রেনের ধাক্কায়ছিটকে পড়েন গোপাল। তৎক্ষণাৎ তাঁকে মোটরবাইকে বসিয়েইআর জি করে নিয়ে আসেন তাঁর বন্ধু ও পরিজনেরা।

কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, হাসপাতালের ট্রমা কেয়ারের নীচে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল গোপালকে। রক্তাক্ত অবস্থায় স্ট্রেচারে রাখা থাকলেও কোনও চিকিৎসক তাঁকে এসে দেখেননি।দিলীপের দাবি, তার বদলে সেখানে কর্তব্যরত এক সিভিক ভলান্টিয়ার তাঁদের আগে টিকিট করে আনতে বলেন। তিনি আরও বলেন, ‘‘টিকিট করাতে গেলে যে নথির প্রয়োজন, সেগুলি বাড়ি থেকে আনতে কিছুটা সময় লাগবে বলেও জানানো হয়। তত ক্ষণ প্রাথমিক চিকিৎসা শুরুর জন্য বার বার আবেদন করলেও কেউ সাড়া দেননি।’’ এমন ভাবেই কিছুটা সময় কেটে যায়। এর পরে জরুরি বিভাগেরই এক চিকিৎসক এসে পরীক্ষা করে জানান, গোপালের মৃত্যু হয়েছে।

তখন ক্ষোভে ফেটে পড়েন গোপালের পরিজনেরা। কেন প্রায় ২০ মিনিট চিকিৎসা না করে ফেলে রাখা হল, তা নিয়ে তাঁরা প্রশ্ন তোলেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে আর জি করে মোতায়েন সিআরপিএফ জওয়ানেরা ঘটনাস্থলে আসেন। কিছু ক্ষণগোলমাল চলার পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে কোনও অভিযোগ করেননি গোপালের পরিজনেরা। অন্য দিকে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, রোগীকে নিয়ে চারটি মোটরবাইকে দিলীপ-সহ যে আট জন এসেছিলেন, তাঁরা কোনও ঝামেলা করেননি। পরে ওই ঘটনার সূত্র ধরে আসা এবং হাসপাতাল চত্বরে থাকা অন্য লোকজন চেঁচামেচি শুরু করেন। কিন্তু কোনও কিছু ভাঙচুর করা হয়নি। তাই হাসপাতালের তরফেও কোনও অভিযোগ করা হয়নি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Death Case Train accident

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy