অপেক্ষায়: দেগঙ্গায় ভাগাড়ের মাংস কাটার সেই কারখানায় কুকুর ও কাকের আনাগোনা। বৃহস্পতিবার। (ইনসেটে) ধৃত সফিয়ার। নিজস্ব চিত্র
জ্যান্ত পশু কাটতে হত? ইতস্তত করে ১৯ বছরের ছেলেটি বলে, ‘জ্যান্ত নয়, মরা পশু।’’
দেগঙ্গার মণ্ডলগাঁতিতে সোমবার সন্ধ্যায় ভাগাড়ের মৃত পশুর মাংস বোঝাই ছোট মালবাহী গাড়ি ধরেন স্থানীয় মানুষ। তার পরেই প্রশাসনের নজরে এসেছে যে মৃত পশুর মাংস পাচারের চক্র বজবজের ভাগাড়-কাণ্ডের পরেও সক্রিয় ছিল মণ্ডলগাঁতিতে। ওই ঘটনায় বমাল ধরা পড়ে কসাইয়ের কাজ করা সফিয়ার রহমান। যে জায়গায় ওই চক্রের হদিস মিলেছে সেখানে দিন কয়েক আগেই সফিয়ার মাংস কাটার কাজে যোগ দিয়েছিল বলে বুধবার নিজের মুখেই সে স্বীকার করে।
শাসনের গোলাবাড়ির বাসিন্দা সফিয়ারের কথায়, ‘‘মন্টু নামে এক জন আমাকে ওদের কাছে নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি, মরা পশু কাটতে হবে। ওরা টাকার লোভ দেখায়। ভয়ও দেখায়। না করার উপায় ছিল না। তার পরে আমি মরা পশু কাটার কাজ শুরু করি।’’
সফিয়ার বলে, ‘‘আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। আমি জানতাম না যে এই মাংস বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হত। আর কখনও এই কাজ করব না।’’ ওই কাজে সে নতুন বলেই সফিয়ার দাবি করেছে।
বুধবারই সফিয়ারকে জামিনযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ বারাসত আদালতে পাঠিয়েছিল। ফলে বুধবারই সে জামিন পায়। এর আগে ভাগাড়কাণ্ড সামনে আসার পরে নবান্ন থেকে শুরু করে বহু সরকারি জায়গায় খাবারের তালিকায় মাংসের পদ বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। ফলে দেগঙ্গায় সেই ভাগাড়ের মাংসের হদিস পাওয়ার পরেও কেন ধৃত কসাই সফিয়ারের বিরুদ্ধে পুলিশ জামিনযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ওই ঘটনায় পুলিশ এখনও পর্যন্ত কেবল সফিয়ারকেই ধরতে পেরেছে। কিন্তু জামিনযোগ্য ধারায় মামলা করায় সেও এখন হেফাজতের বাইরে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, কেন সফিয়ারের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারা প্রথমে দেওয়া হয়নি তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ফের সফিয়ারের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় বারাসত আদালতে মামলা রুজু করেছে। সফিয়ারের ফের খোঁজও করছে পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তদন্তের গতিপ্রকৃতির ভিত্তিতেই মামলাটিতে আরও কিছু ধারা যোগ করা হয়েছে।’’
পুলিশ জানায়, বিদ্যাধরী-পাড়ে নির্জন জায়গা বেছে নিয়েছিল কারবারিরা। বারাসত, দত্তপুকুর, দেগঙ্গার মতো তিনটি থানার সংযোগস্থলে প্রায় ১ কিলোমিটার জনবসতিহীন কৃষিজমির পাশে তৈরি হয়েছিল কারখানা। রাতে চলত কাজ। উঁচু পাঁচিলের ভিতরে সাধারণের প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ।
এ দিকে জেলাশাসক অন্তরা আচার্য এ দিন জানান, এত দিন মাংস কাটার বিষয়টির উপরে পঞ্চায়েত নজর রাখলেও এ বার থেকে জেলা প্রশাসন নজরদারি চালাবে। তিনি বলেন, ‘‘আমি ঘটনাস্থলে যাইনি। তবে এখন থেকে ডেটাবেস তৈরি করে মাংস কাটার কাজে প্রশাসনের তরফে নজরদারি চলবে।’’
বৃহস্পতিবার স্থানীয় বাসিন্দা আলমগির মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা এক বছর আগে পঞ্চায়েত, মহকুমা শাসক ও দেগঙ্গা পুলিশকে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। পুলিশ তৎপর হলে এতটা বাড়বাড়ন্ত হত না।’’ স্থানীয় মানুষ এ দিন ক্ষোভ দেখান পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধেও। পঞ্চায়েত থেকে ‘হাইব্রিড ফিশফিড ম্যানুফ্যাকচারার’ ইকবাল আনসারিকে দেওয়া ট্রেড লাইসেন্সে দেখা যায়, মৎস্য ও প্রাণী দফতরের অনুমতি নেই।
তৃণমূলের তৎকালীন প্রধান মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমি ইকবালকে চিনি না। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য শামসুর আলমের হাত দিয়ে আসা ওই আবেদনে আমি সম্মতি দিয়েছি।’’
প্রাক্তন সিপিএম সদস্য শামসুর আলম আবার বলেন, ‘‘প্রধান নিজেকে বাঁচাতে আমার উপরে দোষ চাপাচ্ছেন। নিজে টাকার বিনিময়ে লাইসেন্স দিয়েছেন।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ওই লাইসেন্স নিতে সদস্যের স্বাক্ষর লাগে। আবেদনে আমার স্বাক্ষর আছে কি না যাচাই করলেই পরিষ্কার হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy