পোশাকে কালিঝুলি মাখা। গোড়ালি ডুবে যাওয়া জলে দাঁড়িয়ে পোড়া বাগড়ি মার্কেট থেকে মালপত্র টেনে-হিঁচড়ে বার করার প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। তার মধ্যেই সঙ্গী মামাতো ভাইকে চেঁচিয়ে বলছেন, ‘‘যা পারিস তুলে নিয়ে আয়। আগে উদ্ধার কর। পরে সব শুকিয়ে নেওয়া যাবে।’’ চোখে-মুখে পুরনো অভিজ্ঞতার ছাপ স্পষ্ট।
নন্দরাম মার্কেটের ব্যবসায়ী রতন চক্রবর্তী। সোমবার বাগড়ি মার্কেটে ছুটে এসেছিলেন বৃদ্ধ মামার পাশে দাঁড়াতে। বাগড়ি মার্কেটেই ছিল রতনবাবুর মামা সুব্রত সরকারের চিরুনির ব্যবসা। শনিবার রাতের আগুনের পরে যা এখন ভগ্নস্তূপ। পুড়ে গিয়েছে তিনতলার গুদাম ঘরেরসমস্ত জিনিসপত্র।
এ দিন আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসতেই মামাতো ভাইকে সঙ্গে নিয়ে জিনিস উদ্ধার করতে রতনবাবু ঢুকে পড়েছেন বাজারে। তাঁর আশঙ্কা, পুজোর আগে মামার প্রায় চার-পাঁচ লক্ষ টাকার জিনিস পুড়ে গিয়েছে। বৃদ্ধকে সে কথা এখনও জানানো হয়নি। অন্ধকারের মধ্যেই রতনবাবু বলছিলেন, ‘‘নন্দরাম মার্কেট যখন পুড়ল, তখন চোখের সামনে দেখেছিলাম সব শেষ হতে। জানি এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে কাজ করতে হয়। কিছু জিনিস বার করে নিয়ে যাওয়া গেলে পরে সব শুকিয়ে নেওয়া যাবে।’’
আরও পড়ুন: বিপজ্জনক, তবু ৩৭ বিল্ডিংকে ফি ছাড় পুরসভার
২০০৮ সালের ১৩ জানুয়ারি আগুন লাগে বড়বাজারের নন্দরাম মার্কেটে। ওই বাজারেই ব্যাগের ব্যবসা রতনবাবুর। জানালেন, ১০ বছর আগে ঘটনার দিন বাড়িতেই ছিলেন তিনি। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে নন্দরাম মার্কেটে ছুটে গিয়ে দেখেন, চোখের সামনে সব জ্বলছে। ছাই হয়ে গিয়েছিল তাঁর ব্যবসার যাবতীয় সামগ্রী। একতলার দোকানের পাশাপাশি ১১ তলার গুদামঘরও ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সে বারও পোড়া গুদাম থেকে সমস্ত জিনিস বার করতে হয়েছিল রতনবাবুকে। বললেন, ‘‘পাঁচ দিন রাস্তায় কেটেছিল। সব মাল বার করে শুকনোর চেষ্টা করছিলাম। নাওয়া-খাওয়া ছিল না। অনেক কষ্টে দশ বছরে ব্যবসা দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছি। এই বয়সে মামা পারবে কি না, জানি না।’’
ব্যবসার শেষ সম্বলটুকু উদ্ধারের মধ্যেই রতনবাবুর গলায় শোনা গেল আক্ষেপ। বললেন, ‘‘একের পর এক আগুন লাগে। সব পুড়লেও কিছুই বদলায় না। নন্দরাম মার্কেটও পুরনো ঘটনা থেকে কিছুই শেখেনি। আসলে আমরা কিছুই শিখি না।’’ তাঁর মামাতো ভাইয়ের অবশ্য দাবি, ব্যবসায়ী-বাড়িওয়ালার ঝামেলাতেই আজ পথে বসতে চলেছেন তাঁরা।