অভিষেক নস্করের জন্মদিন ছিল বুধবার। বাড়িতে তার ছবি নিয়ে বসে শোকার্ত মা-বাবা ও পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র
আশা ছিল, জন্মদিনের আগেই ফিরে আসবে ছেলে। কিন্তু ছেলের আর ফেরা হয়নি। বরং জন্মদিনের ঠিক আগের রাতেই তার শেষকৃত্য করে ফিরেছেন বাবা।
পুলিশ বলেছিল, রহস্যের আশি শতাংশ সমাধান হয়ে গিয়েছে। তাই বাবা ধরে নিয়েছিলেন, দু’-এক দিনের মধ্যেই নিখোঁজ ছেলে বাড়ি ফিরবে। ভেবেছিলেন, ছেলে ফিরে এলে তার জন্মদিনে বাড়ির পাশের মাঠে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করা হবে।
একমাত্র সেই ছেলে অভিষেকের জন্মদিন ছিল বুধবার। কিন্তু দিনটা শুধু চোখের জল ফেলেই কেটে গেল হরি নস্কর ও কমলা নস্করের। মঙ্গলবার গভীর রাতে অভিষেকের শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছেন হরি। বুকে পেসমেকার বসানো। শারীরিক ধকল নেওয়া বারণ। তা সত্ত্বেও মঙ্গলবার সকাল থেকে সারা দিন চলেছে প্রচুর দৌড়ঝাঁপ। পুলিশের কাছ থেকে ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে দেহ শনাক্ত করতে মঙ্গলবার সাতসকালেই বাগুইআটির শিবতলা থেকে ছুটেছিলেন বসিরহাট মর্গে। সোমবার রাতে বাগুইআটি থানার পুলিশ যখন তিনটি দেহের ছবি তাঁকে দেখিয়েছিল, তখন তার মধ্যে এক জনের সঙ্গে অভিষেকের চেহারার মিল পেয়েছিলেন হরি। কিন্তু স্থূলকায় দেহটি দেখে ভেবেছিলেন, সেটা নিশ্চয়ই তাঁর ছেলের নয়। তিনি বুঝতে পারেননি, ফুলে যাওয়ার ফলেই অভিষেকের দেহ ওই আকার ধারণ করেছিল।
এ দিন বাড়ির বৈঠকখানার সোফায় বসে, পাশে রাখা ছেলের ছবির দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে হরি বললেন, ‘‘মর্গে গিয়ে দেখি, স্কুলের পোশাক পরা একটা শরীর। মুখটা আমার ছেলের সঙ্গে মিলছে। গায়ে পোকা ধরে গিয়েছে। কত কষ্ট পেয়েছিল ছেলেটা! ভেবেছিলাম, ফিরে এলে ওর বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে পাশের মাঠে ফিস্ট করব। ওরা ওদের পছন্দের পদ রান্না করবে। আমরা সাহায্য করব। পুলিশ বলেছিল, আশি শতাংশ রহস্যভেদ করে দিয়েছে। সব উল্টোপাল্টা হয়ে গেল পুলিশের মিথ্যা বলার জন্য।’’
ময়না-তদন্তের পরে মঙ্গলবার রাত দেড়টা নাগাদ যখন অভিষেকের দেহ শিবতলায় তার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়, তখনও গোটা পাড়া জেগে। বাড়ির সামনে ভেঙে পড়ে ভিড়। প্রতিবেশীরা ক্ষোভ উগরে দেন পুলিশের বিরুদ্ধে। অভিষেকের মা কমলা বলেন, ‘‘২২ তারিখ রাতে শেষ বার যখন কথা হয়, তখন ছেলে বলেছিল, অতনুর সঙ্গে বাইক কিনতে গিয়েছে। ওই দিন ছেলে স্কুলে যাবে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। তার পরে কখন যে জগৎপুর চলে গেল, তা জানায়নি। আমি সারা রাত জেগে। সকালেও কয়েক বার ফোন বেজে গেল। কিন্তু কেউ কথা বলল না।’’
কমলা জানান, অভিষেকের তেমন কোনও চাহিদা ছিল না। তিনি বলেন, ‘‘এক বার খুব বড় করে ওর জন্মদিন পালন করেছিলাম। তার পর থেকে প্রতি বার পায়েস করে দিতাম, আর একটু-আধটু ওর পছন্দের পদ রান্না করে দিতাম। ছেলে তাতেই খুশি ছিল। কোথা থেকে কার নজর পড়ল, ছেলেটা বেঘোরে মারা গেল। কেউ কিছু করল না।’’
এ দিন সকালেই হিন্দু বিদ্যাপীঠ স্কুল থেকে শিক্ষকেরা এসে হরির সঙ্গে দেখা করে যান। ওই স্কুলেরই দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল অভিষেক। সকাল থেকে প্রতিবেশীরাও এসে সমবেদনা জানিয়ে যান হরিকে। তাঁদের একটি বড় অংশেরই ক্ষোভ রয়েছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। এ দিন হরির বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পড়শিদের চিৎকার করে বলতে শোনা গেল, ‘‘পনেরো দিন কেটে গেল, দুটো ছেলেকে কারা এত নৃশংস ভাবে খুন করল, পুলিশ বুঝতেই পারল না। এই পুলিশের তদন্তের প্রয়োজন নেই। আমরা সিবিআই তদন্ত চাই।’’
যদিও বেলা গড়ানোর পরেই স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, বিধাননগরের পুলিশ নয়, জোড়া খুনের তদন্ত করবে সিআইডি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy