Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশ কোথায়, প্রশ্ন অতিষ্ঠ বিধাননগরের

পুলিশ অবশ্য অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের দাবি, সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত তারা যথেষ্ট সক্রিয় ছিল। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই পদক্ষেপ করা হয়েছে।

উল্টোডাঙায় প্রকাশ্যেই ফাটানো হচ্ছে শব্দবাজি। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

উল্টোডাঙায় প্রকাশ্যেই ফাটানো হচ্ছে শব্দবাজি। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

কাজল গুপ্ত
শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৯ ০২:১১
Share: Save:

আশঙ্কা ছিলই। তবে শব্দ-সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে কড়া পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছিল বিধাননগর কমিশনারেট। ২৪ ঘণ্টা অভিযোগ জানানো যাবে, এমন কথাও বলা হয়েছিল। তাই অনেকেই ভেবেছিলেন, ছবিটা এ বার হয়তো একটু বদলাবে। কিন্তু কালীপুজোয় রাত যত গড়িয়েছে, আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণ করে শব্দবাজির তাণ্ডবও ততই বেড়েছে। রাত দেড়টা পর্যন্ত লাগাতার শব্দবাজি ফেটেছে। তার পরে দাপট কিছুটা কমলেও বাজি ফাটানো বন্ধ হয়নি। শুধু বাজি বন্ধ করতে নয়, সচেতনতার প্রসারেও বিধাননগর পুলিশ কার্যত ব্যর্থ। কেষ্টপুর, বাগুইআটি, রাজারহাট, লেক টাউন, দমদম পার্ক, বাঙুর ও সল্টলেকের বহু এলাকায় এমনই অভিযোগ তুলেছেন বাসিন্দারা। তাঁদের প্রশ্ন, পুলিশ কোথায় ছিল? বাসিন্দাদের অভিযোগ, ফোন করেও সাড়া মেলেনি পুলিশের। আতঙ্কে রাত কেটেছে বহু প্রবীণ নাগরিকের। তুলনায় নিউ টাউন এবং সল্টলেকের হাতে গোনা কয়েকটি এলাকায় অভিযোগ কম উঠেছে।

পুলিশ অবশ্য অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের দাবি, সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত তারা যথেষ্ট সক্রিয় ছিল। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই পদক্ষেপ করা হয়েছে। বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ বাজি বাজেয়াপ্তও করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৩১ জনকে। পুলিশের দাবি, নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই ছিল পরিস্থিতি। পুলিশ এমন দাবি করলেও বাসিন্দাদের অভিযোগ, সন্ধ্যা থেকে কান পাতাই দায় হয়ে উঠেছিল তাঁদের পক্ষে। শব্দের দৌরাত্ম্যে সব চেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছিলেন প্রবীণ নাগরিকেরা। শব্দবাজি নিয়ে কালীপুজোর রাতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হন চিত্র পরিচালক শতরূপা স্যান্যাল। তাঁর অভিযোগ, রাত সাড়ে এগারোটা বেজে গেলেও সল্টলেকে লাগাতার বাজি ফেটে চলেছে। তিনি লিখেছেন, ‘পুলিশের ফোন রিং হয়ে যাচ্ছে, কেউ ধরার নেই!’

সল্টলেকের একটি ব্লকের আবাসিক সমিতির কর্মকর্তা কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, ‘‘পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে হবে। এখনও আমরা অনেকেই দায়িত্বজ্ঞানের পরিচয় দিতে পারছি না। আমার এলাকায় শব্দ-সন্ত্রাস তুলনায় কিছুটা কমেছে। কিন্তু আরও আশা করেছিলাম।’’ কালীপুজোর আগে পুলিশ দাবি করেছিল, বিভিন্ন জায়গায় হানা দিয়ে বিপুল পরিমাণ শব্দবাজি উদ্ধার হয়েছে।

সেই প্রসঙ্গ তুলে বাসিন্দাদের প্রশ্ন, তা হলে কালীপুজোর রাতে এত বাজি এল কোথা থেকে? পুলিশের নজরদারি কোথায় ছিল? কংগ্রেস নেতা সোমেশ্বর বাগুইয়ের কথায়, ‘‘বাজি নিশ্চিত ভাবেই এলাকায় ঢুকেছিল। না হলে এত বাজি ফাটল কী ভাবে?’’

পুলিশ জানিয়েছে, কালীপুজোর বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বিধাননগর কমিশনারেটের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় দেড়শো কেজির কাছাকাছি বাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয় ৩১ জনকে। সেখানেই বাসিন্দাদের বক্তব্য, পুলিশ আরও সক্রিয় হলে এবং আরও বেশি ধরপাকড় করলে বাজির দৌরাত্ম্য হয়তো কিছুটা কম হত। এ ক্ষেত্রে পুলিশের সদিচ্ছা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। যদিও অভিযোগ মানতে নারাজ বিধাননগর পুলিশ।

পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনার দাবি, ‘‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। পুলিশ যথেষ্ট সক্রিয় ছিল। অভিযোগ পাওয়া মাত্র পদক্ষেপ করা হয়েছে। গ্রেফতারও করা হয়েছে।’’ পুলিশের এক কর্তা জানান, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্মীরাও নজরদারি চালিয়েছেন। অভিযোগ জানানোর ক্ষেত্রে পুলিশের সাড়া না মেলার অভিযোগ মানতে চাননি পুলিশকর্তারা। তাঁরা জানান, এমন কোনও অভিযোগ এলে নিশ্চিত ভাবে খতিয়ে দেখা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE