Advertisement
০৪ মে ২০২৪
SSKM

Body Donate: ছোট্ট শ্রীতমা রয়ে গেল পিজির অ্যানাটমি বিভাগে

শিক্ষক দম্পতি নারায়ণ মণ্ডল এবং মঞ্জুশ্রী বাজানির বছর দশেকের ছোট মেয়েটির নাম এ দিন শোনা গেল অনেকের মুখে মুখেই।

মেয়ে শ্রীতমার দেহদান করতে এসএসকেএমে বাবা নারায়ণ মণ্ডল (বাঁ দিকে)। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ

মেয়ে শ্রীতমার দেহদান করতে এসএসকেএমে বাবা নারায়ণ মণ্ডল (বাঁ দিকে)। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২২ ০৭:৪৪
Share: Save:

পৌঁছনোর কথা ছিল সোমবার বেলা ১১টায়। তার ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পরে অবশেষে সে যখন এসে পৌঁছল, তত ক্ষণে এসএসকেএম হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগের বাইরে ছোটখাটো ভিড় জমে গিয়েছে, তাকে একবার দেখার আশায়। বাবা, মামা-সহ পরিচিত কয়েক জনের সঙ্গেই এ দিন এসেছিল সে— মুখ খোলা, সাদা চাদরে ঢাকা চিরনিদ্রায় শায়িত শ্রীতমা মণ্ডল (১০)।

হাওড়ার বাসিন্দা, শিক্ষক দম্পতি নারায়ণ মণ্ডল এবং মঞ্জুশ্রী বাজানির বছর দশেকের ছোট মেয়েটির নাম এ দিন শোনা গেল অনেকের মুখে মুখেই। যার অন্যতম কারণ, তার বাবা-মায়ের দৃষ্টান্তমূলক সিদ্ধান্ত। মাত্র সাড়ে তিন বছর বয়সে ‘ব্রেন স্টেম গ্লায়োমা’য় আক্রান্ত হয় শ্রীতমা। মেয়েকে নিয়ে সারা দেশে চিকিৎসার জন্য ঘুরেও সুস্থ করা যাবে না বুঝেই তার দেহদান করার সিদ্ধান্ত নেন ওই দম্পতি।

এসএসকেএমের অ্যানাটমি বিভাগে থেকে ডাক্তারি পড়ুয়াদের সাহায্যে লাগবে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী শ্রীতমা। এ দিন ওই বিভাগ থেকেই নারায়ণবাবুর হাতে তুলে দেওয়া হয় ‘বডি ইউটিলাইজেশন’ শংসাপত্র। যে পুর এলাকার বাসিন্দা তাঁরা, এটি সেই পুরসভায় জমা দিলে মিলবে মৃত্যুর শংসাপত্র।

হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক রাজীব কুণ্ডুর মতে, “বাচ্চার দেহদানের এই সিদ্ধান্ত সচরাচর শোনা যায় না। এত যন্ত্রণা সত্ত্বেও ওঁরা যা করলেন, তার কোনও তুলনা নেই। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসাশাস্ত্রের কাজে লাগাতে শব ব্যবচ্ছেদ করা হবে। আমরা দেহ সংরক্ষণের প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছি।”

দেহদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সংগঠন ‘গণদর্পণ’-এর সম্পাদক শ্যামল চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “যতই আন্দোলন করি, বাস্তবটা কঠিন। এখনও অঙ্গদান এবং দেহদান নিয়ে সমাজে নানা কুসংস্কার রয়েছে। নারায়ণ এবং মঞ্জুশ্রী সেই পাঁচিলটাকেই ভেঙেছেন, যা আগামী দিনে দেহদান আন্দোলনে গতি আনবে বলেই বিশ্বাস করি।”

আর নারায়ণবাবু? সংবাদমাধ্যমের ভিড়ে ইতস্তত ভগ্নহৃদয় এক পিতা, হাতজোড় করে কেঁদে ফেললেন। অ্যানাটমি বিভাগ থেকে দেহদানের জরুরি কাজ সেরে, ছোট মেয়েকে নতুন ঠিকানায় রেখেই ধীর পায়ে বেরিয়ে গেলেন নিজের ঠিকানার উদ্দেশে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

SSKM Body Donation Brain Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE