বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ব্যবসায়ীকে খুন করা হল পার্ক সার্কাস এলাকার মল্লিকবাজারে। শুক্রবার রাত সওয়া ১টা নাগাদ বেনিয়াপুকুর থানা এলাকার মল্লিকবাজারের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ব্যক্তির নাম নূর মহম্মদ (৫৫)। বা়ড়ি মল্লিকবাজারেরই নর্থ রেঞ্জ রো়ডে।
ঠিক কী ঘটেছিল? পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, এলাকায় ১০-১২ বছর ধরে ইট বালি সিমেন্ট সরবরাহ এবং পার্কিংয়ের ব্যবসা করতেন নূর মহম্মদ। এ ছাড়াও এলাকায় সক্রিয় তৃণমূলকর্মী হিসাবে পরিচিত ছিলেন। স্থানীয় সূত্রে দাবি, ৬১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মনজর ইকবাল এবং পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যথেষ্ট ঘনিষ্ঠতা ছিল নূর মহম্মদের।
শুক্রবার রাতে কাজ সেরে এসে বাড়িতে বিশ্রাম করছিলেন তিনি। পরিবারের লোকজন জানান, রাত ১টা নাগাদ তাঁকে বারংবার ফোন করতে থাকেন তাঁরই এক অংশীদার। ফোনে তাঁকে জানানো হয়, ইট নামানোর জন্য লরি এসেছে। তাই তাঁকে রাস্তায় আসতে হবে। তখন তিনি রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন।
গরমে ওই রাস্তায় ফুটপাথের ওপরে থাকা বিভিন্ন টেবিল-চেয়ারের ওপরে বসেছিলেন স্থানীয়দের অনেকেই। তার মধ্যে ছিলেন ওই ব্যবসায়ীর ভাই মহম্মদ নিজামুদ্দিনও। তিনি বলেন, ‘‘রাতে প্রচণ্ড গরম থাকায় আমি বাড়ি থেকে রাস্তাতেই বসেছিলাম। দাদা যাওয়ার সময়ে ঘরে চলে যেতে বলে। বেশ কিছু ক্ষণ বাদেই শুনি পরপর গুলির শব্দ।’’
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, দুই অংশদারীর সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ইট নামানো দেখছিলেন নূর। হঠাৎই পার্ক সার্কাসের দিক থেকে দু’টি মোটরবাইকে চার জন যুবক ওই ঘটনাস্থলে আসে। এর পর পিছনের বাইকে বসা এক যুবক শূন্যে গুলি চালায়। অন্য দিকে, সামনে বসা মোটরবাইকের লোকজন নূর মহম্মদের ঘা়ড়ে এবং পেটে গুলি চালায়। তারপর তারা মোটরবাইক চালিয়ে মল্লিকবাজার ক্রসিংয়ের দিকে পালিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন নূর। তবে ঘটনার পরেও তাঁর দুই অংশীদার ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাননি। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। শনিবার সকালে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন: চলছে টিভি, পাশের ঘরে পড়ে স্বামীর দগ্ধ দেহ, অচেতন স্ত্রী
রাতেই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে বেনিয়াপুকুর থানার পুলিশ এবং কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড শাখা। আনা হয় পুলিশ কুকুর। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে দু’টি কার্তুজ। ঘটনাস্থলের উল্টো দিক থেকে মল্লিকবাজার মোড়ের কাছের একটি সিসিটিভির ফুটেজও সংগ্রহ করেছে পুলিশ। হামলাকারীদের সন্ধান পেতে ওই সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হবে। পুলিশের দাবি, ব্যবসায়িক কারণ নাকি ব্যক্তিগত আক্রোশ, তা এখনও স্পষ্ট নয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই ব্যবসায়ীর দুই অংশীদারকে আটক করা হয়েছে। মৃত ব্যবসায়ীর নামেও থানায় পুরনো অপরাধের নজির রয়েছে দাবি পুলিশের। অ়জ্ঞাতপরিচয় আততায়ীদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (ইএসডি) দেবস্মিতা দাস বলেন, ‘‘এখনও অপরাধীদের সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে কিছু পাওয়া যায়নি। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত করা হচ্ছে।’’
কিন্তু কেন খুন হতে হল ওই ব্যবসায়ীকে? বাসিন্দাদের দাবি, এলাকায় নেতৃত্ব সামলানোর পাশাপাশি সমাজকর্মী হিসেবে যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন নূর মহম্মদ। ব্যবসার পাশাপাশি রাতবিরেতে লোকের প্রয়োজনে ছুটে গিয়ে সাহায্য করতেন। ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মনজর ইকবাল বলেন, ‘‘ওর কোনও শত্রু ছিল না বলেই জানতাম। এখন পারিবারিক বা ব্যবসায়িক কিছু হলে বলা সম্ভব নয়। বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে হবে।’’ অন্য দিকে, সাধারণ ঘটনার পাশাপাশি দলীয় অন্তর্ঘাতের তত্ত্ব উড়িয়ে দিচ্ছেন না পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী তথা তৃণমূল বিধায়ক সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘ওই এলাকায় আমাদের দল ছাড়া আর কোনও দল নেই। খুব দুর্দিনেও ওই এলাকায় আমরাই জিতেছি। তাই বিষয়টা আমাদের কাছেও ধোঁয়াশার মতো। পুলিশের তদন্তের পাশাপাশি আমরাও দলীয় ভাবে তদন্ত করে দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy