মৃত অনুষ্কা কর।
মায়ের হাত ধরে যে বাস থেকে সে স্কুলের সামনে নেমেছিল, রাস্তা পেরোতে গিয়ে সেই বাসের চাকাতেই পিষে মারা গেল পাঁচ বছরের এক শিশু। দমদমের ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের ওই ছাত্রীর নাম অনুষ্কা কর। মঙ্গলবার যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে অভিভাবকদের ক্ষোভ আছড়ে পড়ল রাস্তায়। ছোট্ট শিশুটির এই পরিণতির জন্য পুলিশ, প্রশাসন, পুরসভা, এমনকি স্কুলও যে দায় এড়াতে পারে না, সেই অভিযোগ তুলে প্রায় তিন ঘণ্টা রাস্তা আটকে রাখলেন তাঁরা। স্কুলের ভিতরেও উত্তেজনা ছড়াল। অবরোধের জেরে দীর্ঘ যানজট হয় ওই এলাকায়।
পুলিশ সূত্রের খবর, প্রতিদিনের মতো এ দিনও কালিন্দীর প্রগতিপল্লির বাড়ি থেকে বেরিয়ে মেয়েকে নিয়ে ২২৩ নম্বর রুটের একটি বাসে ওঠেন মা সুস্মিতা কর। সকাল পৌনে ১০টা নাগাদ বাস থেকে মেয়েকে নিয়ে নামেন তিনি। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, সিঁথির বাসিন্দা কার্তিক কবি বলেন, ‘‘বাসের পিছনে একটি অটোয় আমি মেয়েকে নিয়ে ছিলাম। বাস থেকে যাত্রীরা তাড়াহুড়ো করে নামলেন। অনুষ্কা ওর মায়ের হাত ধরে বাসের সামনে দিয়েই রাস্তা পেরোচ্ছিল। রাস্তা পেরিয়ে ওর মা যখন ব্রিজের নীচে, তখন অনুষ্কা বাসের সামনে ছিল। সেই সময়ে চালক আচমকা বাস চালিয়ে দিলে সামনের চাকা মেয়েটিকে পিষে দিয়ে চলে যায়।’’ তড়িঘড়ি কাছের বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন বাবা দেবব্রত কর। মেয়ের দেহ দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েন মা। দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য রওনা হলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন অন্য অভিভাবকেরা।
তাঁদের বক্তব্য, নাগেরবাজারের দিক থেকে বিমানবন্দরমুখী যশোর রোড ধরে স্কুল যাওয়ার পথ যেন বিভীষিকা। নাগেরবাজার উড়ালপুলের নীচে যত্রতত্র বেআইনি পার্কিং। তার উপরে সেখানে একটি বাসগুমটিও রয়েছে। ফুটপাত থাকলেও তাতে হাঁটার উপায় নেই। পরিত্যক্ত কেব্ল, আবর্জনার স্তূপ আর দখলদারদের দাপটে স্কুল পর্যন্ত নিরাপদে পৌঁছনোই দায়। অঞ্জলি বিশ্বাস নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘‘স্কুটার নিয়ে যাওয়ার সময়ে আমার পা ফেলে রাখা কেব্লে জড়িয়ে গিয়েছিল। দু’দিন স্কুটার থেকে পড়ে যেতে যেতে বেঁচে গিয়েছি।’’ সোহিনী দাস নামে আর এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘পড়ুয়াদের রাস্তা পার করার জন্য এক জন সিভিক ভলান্টিয়ার থাকলে শিশুটিকে হয়তো মরতে হত না।’’
হাসপাতাল চত্বরে মৃত অনুষ্কা করের মা সুস্মিতা কর। মঙ্গলবার নাগেরবাজারে। —নিজস্ব চিত্র।
এই ক্ষোভেই বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হয় অবরোধ। অভিভাবকেরা দাবি জানান, ওই জায়গায় ট্র্যাফিক সিগন্যাল বসাতে হবে, স্কুলের সময়ে পুলিশ মোতায়েন করতে হবে, উড়ালপুলের তলা থেকে বেআইনি পার্কিং সরাতে হবে, রাস্তা সারাতে হবে, ফুটপাত পুনরুদ্ধার করতে হবে এবং ২১৯ নম্বর রুটের বাসগুমটি ওঠাতে হবে। দমদম পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেবিকা রায় দাবি মেটানোর লিখিত আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে। এর পরে স্কুলের ভিতরে যান কাউন্সিলর।
সেখানে অভিভাবকদের তিনি বলেন, ‘‘বেআইনি পার্কিং সরানোর দায় দক্ষিণ দমদমের জনপ্রতিনিধিরও রয়েছে। আমি প্রধান শিক্ষিকাকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, এই সমস্যাগুলি নিয়ে যৌথ ভাবে প্রশাসনের সর্বস্তরে জানানো হোক। উনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলেছিলেন। পরে আর কিছু জানাননি।’’ কাউন্সিলরের এই বক্তব্যের উত্তরে স্কুলের অধ্যক্ষা হেলেন সরকার জানান, তিনি চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু লাভ হয়নি। তখন দেবিকা জানান, ২০১২ সালে যখন চিঠি দেওয়া হয়েছিল, তখন তিনি কাউন্সিলর ছিলেন না।’’ সমস্যার সমাধানে প্রশাসনের কাছে আর্জি জানানো হবে বলে জানান স্কুল কর্তৃপক্ষ। দক্ষিণ দমদমের কাউন্সিলর অভিজিৎ মিত্র বলেন, ‘‘দমদমের সার্বিক যান ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের সুষ্ঠু পরিকল্পনা করা উচিত।’’
পুলিশ জানিয়েছে, বাসের চালক পলাতক। ব্যারাকপুরের এসিপি (ট্র্যাফিক) বিদ্যাসাগর চৌবে বলেন, ‘‘অভিভাবকদের প্রস্তাবগুলি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। আপাতত ওই জায়গায় ট্র্যাফিক পুলিশ থাকবে। বাসগুমটি ও অবৈধ পার্কিং সরানো হবে। স্পিড ব্রেকার বসাতে পূর্ত দফতরকে বলেছি। ফুটপাত দখলমুক্ত করতে পুরসভা ও পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে আর এক বার অভিযানের কথা ভাবা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy