Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Food

মন্দার বাজারে দাপট বাঙালি ছানার কেকের

কেকে নলেন গুড়ের স্বাদ বা সন্দেশে কেকের আদল নিয়ে নিরীক্ষা আগেও শুরু হয়েছিল।

উদ্ভাবন: ছানার কেক (বাঁ দিকে) এবং বেকড কেক সন্দেশের মতো সৃষ্টি যোগ হয়েছে মিষ্টির দোকানের সম্ভারে। নিজস্ব চিত্র

উদ্ভাবন: ছানার কেক (বাঁ দিকে) এবং বেকড কেক সন্দেশের মতো সৃষ্টি যোগ হয়েছে মিষ্টির দোকানের সম্ভারে। নিজস্ব চিত্র

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:০১
Share: Save:

বিজয়া দশমী, ভাইফোঁটাতেও ধাক্কা কাটেনি পুরোপুরি। বড়দিন আর বর্ষবরণের পার্বণ তা-ও আশার আলো দেখাচ্ছে। কেক, পিঠে, সন্দেশ, রসগোল্লা— সবই বাঙালির সংস্কৃতিতে মিশে অন্তত দেড়শো বছর। তবু কেকের মধ্যে বাঙালির ঘরানার ছোঁয়া নিয়েও ভাবছেন কোনও কোনও মিষ্টি-স্রষ্টা।

কেকে নলেন গুড়ের স্বাদ বা সন্দেশে কেকের আদল নিয়ে নিরীক্ষা আগেও শুরু হয়েছিল। এই শীতে ছানার কেকের ঘরানাও শোভা পাচ্ছে সাবেক মিষ্টি-স্রষ্টার শোকেসে। সাধারণত বেকারির কারিগরের ছানা কাটানোর তুকতাকে তত হাত পাকে না। আবার ডিমের ছোঁয়াচের ভয়ে দীর্ঘদিন কেককে ভয় করে এসেছে বাঙালি ময়রার ‘ভেনঘর’। বড়দিন, নতুন বছরের পার্বণ এসে ক্রমশ বাঙালি মিষ্টি-স্রষ্টার সেই জড়তা কাটিয়ে দিয়েছে। শহর জুড়ে ছড়ানো ছিটোনো বলরাম ময়রা বা বাঞ্ছারামের কাছে কেক-পেস্ট্রি বেশ কয়েক বছর ধরেই গুরুত্বপূর্ণ আইটেম। তবে এ বছর সল্টলেক থেকে টালাপার্ক, বড়িশা থেকে নিউ টাউনের অখ্যাত পাড়াকেন্দ্রিক দোকানে বেকারি সম্ভারের বিশেষ সমীহ। তবে বাজার গত বছরের থেকে খানিক মন্দায়।

রিষড়ার শতাব্দী-প্রাচীন ফেলু ময়রার উত্তরপুরুষ অমিতাভ মোদক বলছিলেন, ‘‘২০২০-র দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বছরটাতেই কিছু নতুন রাস্তা বেরিয়ে এসেছে।’’ হুগলির ব্যান্ডেল তল্লাটে চিজ়, ছানা নিয়ে বাঙালির পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রতি দুনিয়ার তাবৎ রন্ধন বিশেষজ্ঞদেরই একটা সম্ভ্রম আছে। বাঙালির ছানার মিষ্টি তো বটেই, ব্যান্ডেল চিজ় এখনও দেশের পাঁচতারা হোটেলেও সসম্মানে অধিষ্ঠিত। এই সব ঘরানা আপন করেই ফেলু ময়রা এ বছর তাদের ছানার কেকে আরও উৎকর্ষ অর্জন করেছে। ছানার কেক বিষয়টি এত দিন কলকাতার অ্যাংলো ইন্ডিয়ান মহল্লা বো ব্যারাক বা আদতে চাটগাঁইয়া বড়ুয়াদের কারখানারই সম্পদ বলে চিনত বাঙালি। উত্তর কলকাতায় কোনও সাবেক কেবিনে কাটলেট-কবিরাজির পরে আসত সুদৃশ্য ছানার পুডিং। কিন্তু ডিমের ছোঁয়ায় বাঙালি ময়রা সে-সবে এত দিন হাত পাকাতে পারেনি।

ডিমবিহীন ছানা নিয়ে ইউরোপের চিজ়কেক বা মুসের আদলে কিছু নিরীক্ষা বলরামে করে দেখিয়েছেন কর্ণধার সুদীপ মল্লিক। টার্টের আদলে ছানার মিষ্টিতে তাক লাগিয়েছে বাঞ্ছারামও। অনেক দিন বাদে ফেলুর দোকান কিন্তু নিখাদ ছানার কেককেই উপস্থাপনা করতে সফল। বেকিং আভেন বস্তুটি অনেক দিনই নানা কাজে মিষ্টির দোকানে ঢুকে পড়েছে। রসগোল্লা, দই, কালাকাঁদ, বরফি— সব কিছুই আজকাল বেক্‌ড হয়। তা ছাড়া লাড্ডুর বেসন ফেটাতে বা ক্রিম নিয়ে নানা কাজেও বেকিং কসরত লাগে। অমিতাভের কথায়, ‘‘ছানার কেকে গরুর দুধ আর মোষের দুধের ভাগের কিছু গোপন ফর্মুলা আছে। ছানার জলটাও বিশেষ কায়দায় কাজে লাগানো হয়।’’ বড়ুয়াদের অ্যাংলো ঘরানার ছানার কেকের তুলনায় কম মিষ্টি ফেলুর ছানার কেক। রকমারি শুকনো ফল, বাদামে স্বাদ বিশেষ খোলতাই।

নলেন গুড়ের মরসুমেও মিষ্টি-কারবার গত বছরের তুলনায় শতকরা ২০-২৫ ভাগ পিছিয়ে গড়ে। তবু বড়দিনের বাজারে টিকে থাকতে কেকে অনেকেই জোর দিচ্ছেন। গার্ডেনরিচের সতীশ ময়রারও আলাদা বেকারির কারিগর। উপরে নলেন গুড় সুরভিত ক্ষীরের ‘লট’ ঢেলে এক ধরনের বেক-করা মিল্ককেকে তাদের মুন্সিয়ানা। ইডেনে কেকেআরের জয় উদ্‌যাপন করতে আগে নকুড় বা বলরামের ‘সন্দেক’ কাটার তারকা-খচিত অনুষ্ঠান দেখা গিয়েছে। নকুড়-কর্তা রাজা নন্দীর কথায়, ‘‘কেকের মতো দেখতে হলেও সন্দেকে আমরা সন্দেশত্ব খাটো হতে দিইনি। অতিমারির বছরে ধাক্কা খেলেও আশা রাখি, সাবেক বাঙালি সন্দেশের জোরেই ঠিক সঙ্কট পার করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Food Cake
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE