Advertisement
E-Paper

লিখতে ভুলছে খুদেরা, তাই ‘বিধি মেনে’ চালু স্কুল

বেশির ভাগেরই বাড়িতে স্মার্টফোন নেই। অভিভাবকদেরও অনেকের হয়তো শুধুমাত্র অক্ষর পরিচয়টুকু আছে। গত প্রায় এক বছর ধরে স্কুলে না গিয়ে ওদের কারও কারও লেখার অভ্যাস চলে গিয়েছে।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২১ ০৭:৫৮
মেটিয়াবুরুজ এলাকার একটি বেসরকারি স্কুলে চলছে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস।

মেটিয়াবুরুজ এলাকার একটি বেসরকারি স্কুলে চলছে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস। বিশ্বনাথ বণিক

বেশির ভাগেরই বাড়িতে স্মার্টফোন নেই। অভিভাবকদেরও অনেকের হয়তো শুধুমাত্র অক্ষর পরিচয়টুকু আছে। গত প্রায় এক বছর ধরে স্কুলে না গিয়ে ওদের কারও কারও লেখার অভ্যাস চলে গিয়েছে। তাই মা-বাবারা ওই খুদে পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে স্কুল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলেন ক্লাস চালু করতে। স্কুল কর্তৃপক্ষ ক্লাস চালু করেছেন। পড়ুয়ারাও যেতে শুরু করেছে স্কুলে। যদিও অভিভাবকেরা জানেন, রাজ্য সরকার এখনও পর্যন্ত প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি।

সরকারি নির্দেশিকা আসার আগেই এ ভাবে প্রথম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের পঠনপাঠন চালু করে দিয়েছে মেটিয়াবুরুজের বেসরকারি ইংরেজিমাধ্যম স্কুল। ওই স্কুলের প্রিন্সিপাল আসিফ আলি মির্জার দাবি, যাবতীয় কোভিড-বিধি মেনেই ক্লাস হচ্ছে সেখানে। তিনি বলেন, ‘‘দুটো ব্যাচে ভাগ করে পড়ুয়ারা আসছে। কোভিড-বিধি মেনেই সমস্ত ক্লাস হচ্ছে। এই স্কুলে পড়ুয়াদের অনেকেই খুব গরিব। ওদের বাড়িতে পড়াশোনার পরিবেশ নেই। তাই ঘণ্টাখানেকের জন্য ওরা স্কুলে আসে। হোমওয়ার্ক শিক্ষকদের দেখিয়ে নিয়ে যায়। স্কুলে এইটুকু পড়ানো না হলে ওদের পড়াশোনা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। স্কুল খোলার জন্য বহু অভিভাবকই অনুরোধ করেছিলেন।’’

তবে বেসরকারি ওই স্কুলের এমন সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বুধবার বলেন, ‘‘এটা সম্পূর্ণ নিয়মবিরুদ্ধ। বেসরকারি স্কুলগুলির উপরে আমাদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নেই। তবু দেখব, কেন এমন করছেন কর্তৃপক্ষ। কেউ অসুস্থ হলে কে সেই দায় নেবে?’’

মেটিয়াবুরুজের আয়রন গেটের কাছে গলির ভিতরে গঙ্গার ধার ঘেঁষা ওই স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, ছোট ছোট বিভিন্ন ঘরে ক্লাস হচ্ছে। প্রথম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। ছোট ছোট ক্লাসঘরের বেঞ্চে যতটা সম্ভব দূরত্ব-বিধি মেনেই বসেছে পড়ুয়ারা। তাদের অধিকাংশেরই মুখে রয়েছে মাস্ক। পঞ্চম শ্রেণির এক পড়ুয়া জানাল, একমাত্র স্কুলে এসেই কিছুটা পড়াশোনা করতে পারে সে। বাড়িতে স্মার্টফোন একটা আছে, কিন্তু সেটা বাবা কাজে যাওয়ার সময়ে নিয়ে যান। তাই অনলাইন ক্লাস করা কোনও মতেই সম্ভব নয়। স্কুলে এসে পড়তেই তার বেশি
ভাল লাগে।

স্কুল ছুটির পরে মেয়েকে নিতে এসেছিলেন এক অভিভাবক। তাঁর কথায়, ‘‘প্রায় এক বছর ধরে স্কুল বন্ধ। আমার মেয়ে দীর্ঘ দিন ধরে স্কুলে যেতে না পেরে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। করোনার জন্য রাজ্য সরকার যে এখনও প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি, তা আমি জানি। কিন্তু স্কুল খোলায় আমার মেয়ের খুব উপকার হয়েছে। স্কুলে না এলে তো ও পড়াশোনাই পুরো ভুলে যাবে।’’

স্কুলের অধ্যক্ষ আসিফ জানান, এটা শুধু ওই অভিভাবকের কথা নয়, এলাকার বেশির ভাগ অভিভাবক একই কথা বলছেন। আসিফের কথায়, ‘‘গত মার্চ থেকে স্কুল বন্ধ ছিল। যার ফলে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির অনেক পড়ুয়াই লিখতে ভুলে গিয়েছে। ওদের যে দিন প্রথম স্কুলে ডাকলাম, সে দিন দেখলাম, এত মাসের অনভ্যাসের জেরে কেউ কেউ ব্ল্যাকবোর্ডের লেখাও টুকতে পারছে না। স্কুল খুলে কিছুটা সময় যদি এদের
পড়াই, সেটা কি খুব অপরাধ? করোনা অতিমারি নিয়ে আমরাও খুবই চিন্তিত। কিন্তু সেই সঙ্গে চিন্তিত এই খুদে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়েও।’’

প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় মনে করেন, করোনা-বিধি মেনে যদি ওই স্কুলে পড়াশোনা হয়, তা হলে তার মধ্যে খারাপ কিছু নেই। অমলবাবু বলেন, ‘‘ক্লাস হওয়াটা ভাল। ক্লাসরুমে যে পড়াশোনা হয়, পাঠগ্রহণের ক্ষেত্রে যে সুবিধা মেলে, তা অনলাইন বা বিকল্প কোনও ব্যবস্থায় সম্ভব নয়। কিন্তু মেটিয়াবুরুজের ওই স্কুলে করোনা-বিধি পুরোপুরি মেনে পড়ানো হচ্ছে কি? যদি বিধি মেনে পড়ানো হয়, তা হলে মনে করি, অবশ্যই স্কুল খোলা উচিত।’’

Kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy