E-Paper

পুরপ্রতিনিধিরা কি আদৌ আছেন? ক্ষোভে ফুঁসছে কলকাতা

সোমবার রাতভর বৃষ্টির পরে মঙ্গলবার সকালে বানভাসি কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম আশ্বাস দিয়েছিলেন, নতুন করে বৃষ্টি না হলে জল দ্রুত নেমে যাবে।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:৪৮
কলকাতা পুরসভা।

কলকাতা পুরসভা। —প্রতীকী চিত্র।

এ শহরে একটি পুরসভা তো আছে। কিন্তু পুরপ্রতিনিধিরা? তাঁরা কি আদৌ আছেন? না কি তাঁদের উপস্থিতি বন্দি স্রেফ খাতায়-কলমেই? গত সোমবার সারা রাত ধরে অতি ভারী বৃষ্টির জেরে বেনজির ভোগান্তির মধ্যে পড়া গোটা কলকাতা যখন খাবি খাচ্ছিল, তখন কোথায় ছিলেন তাঁরা? বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াতে কেন দেখা গেল না তাঁদের অধিকাংশকেই? এই প্রশ্ন তুলেছেন দুর্ভোগে জেরবার এ শহরের অসংখ্য বাসিন্দা।

সোমবার রাতভর বৃষ্টির পরে মঙ্গলবার সকালে বানভাসি কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম আশ্বাস দিয়েছিলেন, নতুন করে বৃষ্টি না হলে জল দ্রুত নেমে যাবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, চার দিন পরে, শুক্রবারও জল নামেনি ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডের বালিগঞ্জের একটি আবাসনে। কবে নামবে, তারও কোনও নিশ্চয়তা নেই।

গত মঙ্গলবার সকালে দেখা যায়, জলমগ্ন হয়ে পড়েছে শহরের একাধিক আবাসন। পানীয় জলের অভাব ও বিদ্যুৎহীন অবস্থায় চরম আতান্তরে পড়েছিলেন সে সব আবাসনের বাসিন্দারা। বাজার থেকে জল কিনে খেতে হয়েছে তাঁদের। জল জমে থাকায় প্রবীণ নাগরিকেরা নীচে নামতে পারেননি। জানা গিয়েছে, সোমবার রাতের অতি ভারী বৃষ্টিতে শহরের যে চারটি ওয়ার্ডের একাধিক আবাসন সব চেয়ে বেশি জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল, সেগুলি হল, ৬৮, ৬৯, ১০৯ ও ১১০। ওই সমস্ত ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিপদের সময়ে স্থানীয় পুরপ্রতিনিধিদের ভূমিকায় প্রবল হতাশ তাঁরা। তাঁদের দাবি, কোনও পুরপ্রতিনিধিকে ফোন করলে সেটি বেজে গিয়েছে। কাউকে আবার এলাকায় দেখাই যায়নি। ওই চারটি ওয়ার্ডের আবাসিকদের সকলেরই বক্তব্য, ‘‘ভোটের সময়ে যে পুরপ্রতিনিধিরা ভোট চাইতে আসেন, বিপদে তাঁদের পাশে পেলাম না!’’

শুক্রবারও ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডের বালিগঞ্জের একটি আবাসনের বেসমেন্টে জল জমে ছিল। সেখানে একাধিক গাড়ি এখনও জলের তলায়। স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি সুদর্শনা মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘প্রোমোটার নিচু জমিতে আবাসন গড়েছেন। তাই ভিতরে জল জমেছে। আমার এলাকায় মঙ্গলবার দুপুরের পরেই জল নেমে গিয়েছিল।’’ তিনি যে মানুষের পাশে ছিলেন, তা প্রমাণ করতে সুদর্শনা সমাজমাধ্যমের কয়েকটি ভিডিয়ো-ও দেখান। পুরপ্রতিনিধি এ কথা বললেও স্থানীয় আবাসিকেরা পুরসভার ভূমিকায় প্রবল অসন্তুষ্ট। তাঁদের আশঙ্কা, জল জমে থাকায় ডেঙ্গির বাহক এডিস ইজিপ্টাই মশা বংশবিস্তার করবে। পুর স্বাস্থ্য দফতরের পতঙ্গবিদেরাও এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।

সুদর্শনা মুখোপাধ্যায়।

সুদর্শনা মুখোপাধ্যায়।

জলমগ্ন ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের একটি আবাসন থেকে জল সরেছে বৃহস্পতিবার বিকেলে। সেখানে বিদ্যুৎ এসেছে ওই দিন দুপুরে। আবাসিকদের অভিযোগ, ‘‘গোটা আবাসন তিন দিন ধরে জলে ডুবে থাকলেও স্থানীয় পুরপ্রতিনিধিকে দেখা যায়নি। তাঁকে ফোনেও ধরা যায়নি। আমরা তখন বাধ্য হয়ে পুরসভার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হই।’’ যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘পুরসভা একটি টিম। সোমবার রাতভর যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, তাতে কাউন্সিলরের একার পক্ষে কাজ করা অসম্ভব। পুরসভার তরফে পাম্প পাঠিয়ে ওই আবাসনের জমা জল সরানো হয়েছে।’’

অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়।

অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়।

১১০ নম্বর ওয়ার্ডে পাটুলি দমকল কেন্দ্রের পাশের একাধিক আবাসনও মঙ্গল ও বুধবার জলমগ্ন ছিল। সেখানকার এক আবাসিকের অভিযোগ, ‘‘জমা জল সরাতে স্থানীয় কাউন্সিলরকে একাধিক বার ফোন করা হলেও পাওয়া যায়নি। বাধ্য হয়ে বিধায়ক তথা মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদারকে ফোন করায় তিনি আসেন। পাম্প লাগিয়ে জল সরানোর কাজ শুরু হয়। দু’দিন পরে বিদ্যুৎ আসে।’’ ওই ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি স্বরাজকুমার মণ্ডলের পাল্টা দাবি, ‘‘আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। সোমবার রাতভর রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে। আমি এলাকায় ঘুরে জমা জল সরাতে তদ্বির করেছি।’’

স্বরাজকুমার মণ্ডল।

স্বরাজকুমার মণ্ডল।

একই রকম তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন ৬৯ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক আবাসনের বাসিন্দারা। বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড, কর্নফিল্ড রোডের একাধিক আবাসনের ভিতরে দু’-তিন দিন ধরে জল জমে ছিল। সে সব আবাসনের আবাসিকেরাও স্থানীয় পুরপ্রতিনিধির ভূমিকায় ক্ষুব্ধ। তাঁদের অভিযোগ, পুরপ্রতিনিধির ফোন বেজে গিয়েছে। তাঁকে বিপদের সময়ে পাওয়া যায়নি। যদিও ওই ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি দিলীপ বসুর দাবি, ‘‘আমাকে কেউ ফোনই করেননি। ৮৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের ফোন পেয়ে আমি আবাসনগুলির খোঁজখবর নিই। পুরসভার সঙ্গে কথা বলি।’’

দিলীপ বসু।

দিলীপ বসু।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

KMC Kolkata Municpal Corporation

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy