Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
College Street

করোনার জেরে বঙ্গাব্দের প্রথম দিনে ম্লান বইপাড়া

প্রত্যেক বাংলা বছরের প্রথম দিনে ২০০-র বেশি মিষ্টির প্যাকেটের অর্ডার দিয়েও কম পড়ে বলে জানালেন এক প্রকাশক ঢোলগোবিন্দ পাত্র।

নিষ্প্রভ: নববর্ষের প্রথম দিনে ভিড় জমল না কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়ায়।

নিষ্প্রভ: নববর্ষের প্রথম দিনে ভিড় জমল না কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়ায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২১ ০৫:২২
Share: Save:

গত বছর নববর্ষের দিন ঘরবন্দি ছিল গোটা শহর। সৌজন্যে, করোনার কারণে লকডাউন। তালাবন্দি ছিল শহরের বইপাড়াও। এ বার লকডাউন নেই ঠিকই। কিন্তু অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ায় কিছুটা নিচু তারেই বাংলা বছরটা শুরু করল কলেজ স্ট্রিটের প্রকাশক মহল। কিছু বইয়ের দোকান সাজানো হয়েছিল ফুল দিয়ে। কয়েকটি বইয়ের দোকানে এসেছিলেন লেখকেরাও। কিন্তু নববর্ষকে কেন্দ্র করে লেখক-প্রকাশকদের সেই আড্ডা দেখা গেল না প্রায় কোথাওই। ছিল না প্রিয় সাহিত্যিককে সামনে পেয়ে তাঁর সই নেওয়া অথবা তাঁকে ঘিরে নিজস্বী তোলার উন্মাদনা। মুষ্টিমেয় কিছু বইপ্রেমী অবশ্য বাংলা বছরের প্রথম দিনে বিশেষ ছাড়ের সুযোগ নিতে বই কিনতে এসেছিলেন। কিন্তু সব মিলিয়ে বৈশাখী দিনের বইপাড়া ছিল বেশ কিছুটা ম্লানই।

প্রত্যেক বাংলা বছরের প্রথম দিনে ২০০-র বেশি মিষ্টির প্যাকেটের অর্ডার দিয়েও কম পড়ে বলে জানালেন এক প্রকাশক ঢোলগোবিন্দ পাত্র। বললেন, ‘‘এমনও হয়েছে, আমাদের পরিচিত কোনও ক্রেতা বেশ কিছু দোকান ঘুরে এত মিষ্টির প্যাকেট পেয়েছেন যে, তাঁকে সেগুলি নিয়ে যেতে ট্যাক্সি ভাড়া করতে হয়েছে। এ বার সে সব কিছুই নেই।” প্রকাশকদের একাংশ জানালেন, নববর্ষে বিভিন্ন জেলা থেকে কলেজ স্ট্রিটে আসতেন দোকানদারেরা। সদ্য প্রকাশিত হওয়া বই নিয়ে যেতেন। মিটিয়ে দিতেন বকেয়া টাকাপয়সা। তার বিনিময়ে পেতেন উপহার, মিষ্টির প্যাকেট। এ বার কোভিড পরিস্থিতিতে তাঁরা প্রায় কেউই আসেননি।

একটি পাঠ্যবই প্রকাশনা সংস্থার এক কর্তা জানালেন, করোনাকালে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় পাঠ্যবইয়ের চাহিদা কম। তাঁর কথায়, “বেশ কিছু রাজ্যে ফের লকডাউন করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় পাঠ্যবই তেমন আসছেও না।” আর এক প্রকাশক পার্থশঙ্কর বসু জানালেন, তাঁরা বাংলাদেশের প্রকাশনা সংস্থার বেশ কিছু বই বিক্রি করেন। এ বার অতিমারির জন্য ও-পার বাংলা থেকে সেই বইও আসছে না। সব মিলিয়ে আর্থিক পরিস্থিতি বেশ খারাপ। কী ভাবেই বা জমাটি নববর্ষ পালিত হবে?

আগে নববর্ষের দিনে কলেজ স্ট্রিটে লেখক-সাহিত্যিকদের ভিড় লেগে থাকত। দোকানে বসে সই বিলি করতেন তাঁরা। চলত খাওয়াদাওয়া, আড্ডা। একটি প্রকাশনা সংস্থার কর্তা ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ বারও নববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে দোকানে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা রাখিনি। বদলে রয়েছে প্যাকেটের বন্দোবস্ত। মাস্ক পরলে তবেই দোকানে ঢুকতে দিচ্ছি।’’ তিনি জানান, অন্যান্য বার নববর্ষে দোকানে ‘সেলফি জ়োন’ তৈরি হয়। এ বার সে সব হয়নি। বরং অনলাইনে বেশি বই বিক্রি হয়েছে।

অনলাইনে বই বিক্রি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন আর একটি প্রকাশনা সংস্থার কর্তা সুধাংশুশেখর দে-ও। তিনি বলেন, ‘‘এ বার ঘনিষ্ঠ কয়েক জন বন্ধুবান্ধব, প্রকাশক, লেখককে আমন্ত্রণ করেছিলাম। প্রবীণ লেখকদের ফোন করেই নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছি। তবে নতুন বই বেরিয়েছে। কিছু বইপ্রেমী এসেছেন।’’

প্রকাশনা ব্যবসায় কয়েক বছর যুক্ত থাকলেও এ বছরই প্রথম কলেজ স্ট্রিটে দোকান খুলতে পেরেছেন এক প্রকাশক শান্তনু ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম ফুল দিয়ে দোকান সাজাব, প্রচুর মানুষ আসবেন। নতুন বইও বেরিয়েছে। কিন্তু প্রত্যাশা তেমন পূরণ হল না। আশা করছি, শীঘ্রই এই দুঃসময় কেটে যাবে।’’

নববর্ষের দিনে এক জায়গায় বসে খুব একটা গল্প হয় না বলে কলেজ স্ট্রিট তেমন উপভোগ করেন না সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তিনি বললেন, “নববর্ষে নিয়ম করে কলেজ স্ট্রিট যাওয়া হয় না। তবে আগে গিয়েছি কয়েক বার। কোনও এক জন প্রকাশকের অফিসে থিতু হয়ে বসে গল্প করা যায় না। আর এ বার কোভিড পরিস্থিতিতে তো ওখানে যাওয়ার পরিকল্পনাই নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE