Advertisement
১৭ জুন ২০২৪
Cyclone Remal Update

রেমালের প্রভাব পড়তে পারে কলকাতায়, ভয় জীর্ণ বাড়ি নিয়ে, বাসিন্দাদের সরাতে আস্তানার খোঁজ

ঝড়ের প্রভাব যে এ শহরে পড়তে পারে, সে আশঙ্কা রয়েছে। যে কারণে শহরের বিপজ্জনক বাড়িগুলি নিয়ে চিন্তায় রয়েছে প্রশাসন। বিপদ এড়াতে ওই সমস্ত বাড়ির বাসিন্দাদের অন্যত্র সরানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে।

আশঙ্কা: ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাসে এমন বিপজ্জনক বাড়ির বাসিন্দাদের নিয়ে চিন্তায় প্রশাসন। শনিবার, বিডন স্ট্রিটে।

আশঙ্কা: ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাসে এমন বিপজ্জনক বাড়ির বাসিন্দাদের নিয়ে চিন্তায় প্রশাসন। শনিবার, বিডন স্ট্রিটে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

চন্দন বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২৪ ০৭:২৭
Share: Save:

ঘূর্ণিঝড় রেমাল এ শহরে সরাসরি আছড়ে পড়বে, এমন ইঙ্গিত আবহাওয়া দফতর এখনও দেয়নি। তবে, ঝড়ের প্রভাব যে এ শহরে পড়তে পারে, সে আশঙ্কা রয়েছে। যে কারণে শহরের বিপজ্জনক বাড়িগুলি নিয়ে চিন্তায় রয়েছে প্রশাসন। বিপদ এড়াতে ওই সমস্ত বাড়ির বাসিন্দাদের অন্যত্র সরানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। কিন্তু ভোটের এক সপ্তাহ আগে তাঁদের জন্য ‘সেফ হাউস’ খুঁজে পেতেও সমস্যা হচ্ছে শহরে। সেই কারণে বিভিন্ন এলাকার ক্লাব ও কমিউনিটি হলে বাসিন্দাদের নিয়ে গিয়ে রাখার প্রস্তুতি নেওয়া হলেও সবাইকে সেখানে জায়গা দেওয়া যাবে না বলেই মনে করছেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা।

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, আজ, রবিবার মধ্যরাতে এ রাজ্যের সাগরদ্বীপ এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মধ্যে আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। স্থলভাগে ঢোকার সময়ে ঝড়ের গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। কলকাতায় এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার গতিতে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে বৃষ্টিপাত সহযোগে। আর তাই ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রাখছে প্রশাসন।

ঝড়ের আগে প্রশাসনিক কর্তাদের সব থেকে বেশি চিন্তায় রেখেছে বিপজ্জনক বাড়ি। জানা গিয়েছে, কলকাতা শহরে চার হাজারের কাছাকাছি বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে। ওই সমস্ত বাড়ির একটি বড় অংশে ঝুঁকি নিয়েই রয়েছেন বাসিন্দারা। ঝড় বা প্রবল বৃষ্টিতে যে কোনও সময়ে ভেঙে পড়তে পারে এই বাড়িগুলি। ঘটতে পারে প্রাণহানিও। যা অতীতে বহু বার ঘটেছে। তাই ঝড়ের আগে বিপজ্জনক বাড়িগুলি ফাঁকা করে বাসিন্দাদের অন্যত্র সরানোয় জোর দিচ্ছে প্রশাসন। প্রতি বারই ঝড়ের আগে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ‘সেফ হাউস’ তৈরি করা হয়। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, কমিউনিটি হলগুলিকে ‘সেফ হাউস’ বা নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এ বছর এক সপ্তাহ বাদে শহরে ভোট থাকায় এই ধরনের জায়গা পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার কারণ শহরের একাধিক স্কুল, কলেজ এবং কমিউনিটি হলকে বুথ হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই মতো প্রস্তুতিও সারা। এ বছরের ভোটে অন্যান্য বারের তুলনায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা বেশি থাকায় একাধিক স্কুল নিয়ে নেওয়া হয়েছে জওয়ানদের রাখার জন্য। ফলে ঝড়ের আগে বাসিন্দাদের জন্য নিরাপদ আস্তানা পেতে সমস্যা হচ্ছে।

বিভিন্ন এলাকার থানা ও পুরপ্রতিনিধিদের উদ্যোগে কিছু ক্লাব এবং ফাঁকা কমিউনিটি হল চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানেই বাসিন্দাদের রাখা হবে। পুলিশ ও পুরপ্রতিনিধিদের যৌথ উদ্যোগে কোন থানা এলাকায় কতগুলি বিপজ্জনক বাড়ি আছে, তাতে কত জন বাসিন্দা আছেন, সেই তালিকাও প্রস্তুত রাখা হচ্ছে।

আপৎকালীন পরিস্থিতিতে এই সমস্ত বিপজ্জনক বাড়ি থেকে বাসিন্দাদের বার করে আনতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় প্রশাসনকে। তাঁদের বড় অংশই বাড়ি ছেড়ে বেরোতে চান না বলে অভিযোগ। তাই শনিবার একাধিক থানার পুলিশ এবং পুরপ্রতিনিধিদের উদ্যোগে বিপজ্জনক বাড়িগুলিতে গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলা হয়। বাসিন্দাদের অনেকে বাড়ি ছেড়ে যেতে রাজি হলেও কেউ কেউ আপত্তির কথাও জানিয়েছেন। বিপজ্জনক বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র যেতে নারাজ, আমহার্স্ট স্ট্রিটের এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘ঝড় যে কলকাতায় আসবে, তেমন তো কোনও খবর নেই। শুধু শুধু বাড়ি থেকে বেরিয়ে কী করব?’’

পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের এক কর্তার কথায়, ‘‘বাড়ি ছাড়লে যে বাসস্থান হারানোর ভয় নেই, সেটা বার বার করে সবাইকে বলা হয়েছে। বিপদ কাটলেই আবার ওঁদের ফিরিয়ে আনা হবে। এর পরেও যদি নিজের ভাল কেউ না বোঝেন, তা হলে তো আমাদের কিছু করার থাকে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE