Advertisement
১১ মে ২০২৪
Dumping yard

এখনও বহাল ভাগাড়-জট, বৈঠকের দিকে তাকিয়ে বারাসত

বুধবার পুরসভার সামনেই অবস্থান বিক্ষোভ করেন দুই সংগঠনের সদস্য-সমর্থকেরা।

অব্যবস্থা: এ ভাবেই রাস্তায় পড়ে আবর্জনা। বুধবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ

অব্যবস্থা: এ ভাবেই রাস্তায় পড়ে আবর্জনা। বুধবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:১৭
Share: Save:

সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও বারাসত পুরসভার ভাগাড় সমস্যার কোনও সমাধান হল না। এর জেরে শহরের একাধিক এলাকার অবস্থা দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। এক দিকে যখন ভাগাড়ে জঞ্জাল না ফেলার দাবিতে আন্দোলন চলছে, অন্য দিকে তখন শহরের জঞ্জাল তুলে নিয়ে যাওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করল বাম এবং কংগ্রেসের মহিলা সংগঠন।

বুধবার পুরসভার সামনেই অবস্থান বিক্ষোভ করেন দুই সংগঠনের সদস্য-সমর্থকেরা। পুর কর্তৃপক্ষ আপাতত ব্যারাকপুর-বারাসত রোডের ধারে অল্প কিছু জঞ্জাল ফেলার ব্যবস্থা করেছেন। আজ, বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুর কর্তৃপক্ষের বৈঠক হওয়ার কথা। তাঁদের আশা, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটবে।

বারাসত শহর লাগোয়া কদম্বগাছি পঞ্চায়েত এলাকার কুবেরপুর-পিরগাছিতে জমি কিনে ভাগাড় তৈরি করেছিল পুরসভা। বছর দশেক ধরে সেখানেই জঞ্জাল ফেলা হচ্ছে। সমস্যা শুরু হয় বছর দুয়েক আগে। এলাকার চাষিদের অভিযোগ, ভাগাড়ের জঞ্জালে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। জঞ্জাল পচে তার দূষিত জলে কয়েকশো বিঘার ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উর্বরতা হারাচ্ছে চাষের জমি। জঞ্জালের দুর্গন্ধে এলাকায় টেকা দায় হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

অভিযোগ, পুরসভা বিষয়টি নিয়ে বার বার ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। ফলে ওই এলাকার বাসিন্দারা জমিতে চাষ করতে পারছেন না। দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব পড়ছে তাঁদের জীবিকায়। গত জুলাই মাসে নতুন করে সমস্যা শুরু হয়। ভাগাড়ে জঞ্জাল না ফেলার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন এলাকার চাষিরা। ভাগাড়ে ঢোকার রাস্তায় বসে পড়ে ধর্না শুরু করেন তাঁরা। তার ফলে সেখানে জঞ্জালের গাড়ি ঢুকতে পারেনি। সে বার দিন পাঁচেক চলেছিল আন্দোলন। পুর কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিলেন, ভাগাড় সংলগ্ন জমি চাষিদের থেকে ন্যায্য মূল্যে কিনে আরও একটি ভাগাড় তৈরি করা হবে। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, জমি কেনা হলেও ভাগাড়ের কাজ এখনও শুরু হয়নি। সপ্তাহখানেক আগে ফের আন্দোলন শুরু করেন এলাকার বাসিন্দারা। ভাগাড়ে ঢোকার রাস্তা বাঁশের ব্যারিকেড করে আটকে দেওয়া হয়ে। তার ফলে সেখানে জঞ্জাল ফেলার গাড়ি ঢুকতে পারছে না।

অন্য দিকে সপ্তাহখানেক ধরে জঞ্জাল না তোলার জেরে বারাসত শহরের অবস্থা খারাপ হচ্ছে বলে অভিযোগ। শহরের রাস্তাঘাটে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে জঞ্জাল। বিভিন্ন বাজারে, রাস্তায় উপচে পড়ছে ভ্যাট। গরু-কুকুর সেই জঞ্জাল নিয়ে এ দিক ও দিক টানাটানি করায় অবস্থা আরও খারাপ বেশ কয়েকটি এলাকায়। বাড়ি থেকে জঞ্জাল সংগ্রহ বন্ধ থাকায় বাসিন্দারা যেখানে পারছেন জঞ্জাল ফেলে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ।

গত দশ দিনে পুরসভা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাধিক বার বৈঠকে বসলেও কোনও রফাসূত্র বার হয়নি। আন্দোলনকারীরা ভাগাড় অন্যত্র সরানোর দাবিতে অনড় রয়েছেন। এ দিকে, শহর জঞ্জালমুক্ত করার দাবিতে বুধবার পথে নামলেন বাম ও কংগ্রেসের মহিলা সংগঠনের কর্মী-সমর্থকেরা। এ দিন দুপুরে বারাসত পুরসভার সামনে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। বামফ্রন্টের নেত্রী স্মৃতি কর বলেন, “বেশ কিছু দিন ধরে বাড়ি থেকে জঞ্জাল নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে পুরসভা। তার ফলে গোটা শহরই ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। প্রতিবাদে এ দিন আমরা প্রতীকী আন্দোলন করলাম। অবিলম্বে শহর জঞ্জালমুক্ত না হলে আমরা আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।”

বারাসত পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য তাপস দাশগুপ্ত বলেন, “গত সাত দিন ধরে জঞ্জাল পরিষ্কারের কাজ কিছুটা হলেও ব্যাহত হয়েছে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ইতিমধ্যে কয়েক বার আলোচনাও হয়েছে। পুরসভার পক্ষ থেকে আধুনিক মানের ভাগাড় তৈরি করা হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের দাবি মতো সব কাজ হয়েছে। কৃষকদের কাছ থেকে কেনা জমিতে কাজ শুরু হবে। অথচ সেই কাজেই বাধা দেওয়া হচ্ছে। আপাতত ব্যারাকপুর রোডের ধারে একটি জায়গায় জঞ্জাল ফেলা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি-সহ আমরা আন্দোলনকারীদের নিয়ে বৈঠক করব। আশা করছি ওই বৈঠকে জট কেটে যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dumping yard Barasat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE