গ্রেফতারের পরও মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা কৌস্তুভের। —ফাইল চিত্র।
আইনজীবী তথা কংগ্রেস নেতা কৌস্তুভ বাগচীকে গ্রেফতার করল কলকাতা পুলিশ। শনিবার সকালে তাঁকে গ্রেফতারের কথা জানানো হয়েছে। শুক্রবার গভীর রাতে তাঁর ব্যারাকপুরের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। অভিযোগ, ‘বিনা কারণে’ বড়তলা থানার পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছে। কৌস্তুভের গ্রেফতারির পর কংগ্রেস এবং বাম আইনজীবীরা তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। প্রদেশ কংগ্রেস এবং বামমহল কৌস্তুভের গ্রেফতারির কড়া নিন্দা করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, এই ঘটনা নিয়ে তাঁরা জাতীয় স্তরে আন্দোলন করবেন। পুলিশের বক্তব্য, কৌস্তুভকে হুমকি এবং অশান্তি ছড়ানোর দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শনিবার গ্রেফতারের সময় কোন ধারায় তাঁকে গ্রেফতার করা হচ্ছে, তা নিয়েও পুলিশের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় কৌস্তুভের। সকালের দিকে পুলিশের নতুন বাহিনী যায় তাঁর বাড়িতে। পরে সেখানেই গ্রেফতার করা হয় এই আইনজীবী নেতাকে। গ্রেফতারির পর কৌস্তুভ বলেন, ‘‘বিনা কারণে আমায় হয়রানি করা হচ্ছে। এখানে আইনের শাসন নয়, শাসনের আইন চলছে। আমায় গ্রেফতার করায় আমার জয় হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ভয় পেয়ে গিয়েছেন!’’
বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি উপনির্বাচনে কংগ্রেসের জয়ের পরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন অধীরের কন্যার আত্মহত্যা এবং তাঁর গাড়িচালকের মৃত্যু নিয়ে তিনি ‘অনেক কথা’ জানেন। তিনি ‘মুখ খুললে’ বিপদ হবে! তার জেরেই শুক্রবার পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক করেন কৌস্তুভ। সেখানে তিনি তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন আমলা দীপক ঘোষের একটি বইয়ের প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘ব্যক্তি আক্রমণ’ করেন বলে অভিযোগ। শনিবার কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় জানান, সেই কারণেই কলকাতা পুলিশ কৌস্তুভকে গ্রেফতার করেছে!
কৌস্তুভ তাঁর সাংবাদিক বৈঠকে জানান, তিনি দীপকের লেখা বইয়ের ‘সফ্ট কপি’ ছড়িয়ে দেবেন। আরও বলেছিলেন, এর জন্য তাঁর বা তাঁর কোনও সতীর্থের কোনও ক্ষতি হলে তার জন্য ‘দায়ী’ থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তিনি বলেছিলেন, “দুটো হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দিয়েছি। দীপক ঘোষ মমতাকে নিয়ে যা লিখেছিলেন, তার সফ্ট কপি চাইলেই যে কেউ পাবেন।” পাশাপাশিই তিনি দাবি করেছিলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য হুমকি ফোন আসছে। আমার বা আমার কোনও সতীর্থের কিছু হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দায়ী থাকবেন।”
ঘটনাচক্রে, তার পরেই তাঁর গ্রেফতারির ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্যের রাজনীতিতে বাম-কংগ্রেস আবারও কাছাকাছি আসতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। ইতিমধ্যেই অধীর বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না!’’ বামপন্থী আইনজীবীরা বলেছেন, কৌস্তুভের পাশে তাঁরা আছেন। তাঁর হয়ে তাঁরা লড়াই এবং আন্দোলন করবেন। পক্ষান্তরে, তৃণমূলের নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বলেছেন, ‘‘কৌস্তুভ মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্য করেছেন। ওঁর আগে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।’’
শনিবার ধৃত কৌস্তুভকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হতে পারে। প্রসঙ্গত, শনিবার কলকাতা শহরে একগুচ্ছ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল প্রদেশ কংগ্রেস। কৌস্তুভের গ্রেফতারিতে সেই সব কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy