Advertisement
E-Paper

ভয়ে জলসা শিকেয়, টিকে রয়েছে যাত্রাপালা

বিদেশে যাওয়ার বিমান একের পর বাতিল হচ্ছে। অনেক বিমান সংস্থার উড়ান পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২০ ০৪:১১
তেলঙ্গানার এক থিয়েটারে টাঙানো হচ্ছে শো বাতিলের নোটিস।—ছবি পিটিআই।

তেলঙ্গানার এক থিয়েটারে টাঙানো হচ্ছে শো বাতিলের নোটিস।—ছবি পিটিআই।

এ বার গানের সুরেও তাল কাটছে করোনা-আতঙ্ক!

বেশি জনসমাগম হয়, এমন কোনও কর্মসূচি নিতে বারণ করেছে কেন্দ্র। কিন্তু গানের অনুষ্ঠান হবে, অথচ সেখানে শ্রোতার সমাগম হবে না, তেমনটা তো হয় না। দেশের পাশাপাশি বাংলার শিল্পীদের গান শুনতে বিদেশের মাটিতেও মার্চ থেকে মে পর্যন্ত আয়োজন হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের। কিন্তু করোনাভাইরাসের জেরে আপাতত ওই সব অনুষ্ঠান ইতি টেনেছেন উদ্যোক্তারা।

বিদেশে যাওয়ার বিমান একের পর বাতিল হচ্ছে। অনেক বিমান সংস্থার উড়ান পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ। তার জেরে বিদেশে যাওয়ার যেমন কোনও উপায় নেই, তেমনি আবার আমেরিকা, লন্ডন, সিঙ্গাপুর-সহ বিভিন্ন দেশের প্রবাসী বাঙালিরাও বাতিল করেছেন বৈশাখী অনুষ্ঠান। যেমন সঙ্গীতশিল্পী হৈমন্তী শুক্লর এপ্রিলের প্রথমেই আমেরিকায় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার কথা ছিল। করোনা-আতঙ্ক ছড়াতেই উদ্যোক্তারা অনুষ্ঠান বাতিলের কথা জানিয়ে দিয়েছেন শিল্পীকে।

হৈমন্তীদেবীর কথায়, ‘‘বাংলাদেশের অনুষ্ঠানও বাতিল হয়েছে। কয়েক দিন ছাত্রীদের থেকে দূরে বসে ছিলাম। এখন তো গানের স্কুলেও ছুটি দিয়েছি। হঠাৎ করেই পরিস্থিতি কেমন যেন হয়ে গিয়েছে!’’ লন্ডন, আমেরিকার অনুষ্ঠান বাতিলের আক্ষেপ থাকলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকাই ভাল বলে মনে করেন শিল্পী তথা সঙ্গীত পরিচালক বাপি লাহিড়ী। তাঁর কথায়, ‘‘একের পর এক অনুষ্ঠান বাতিল হচ্ছে ঠিকই। তবে রোগ থেকে দূরে থাকাই ভাল। কোথায় কী হবে, কেউ বলতে পারেন না।’’

অনুষ্ঠান বাতিলের ফলে বিপুল লোকসান হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন দেশ ও বিদেশে গানের জলসার আয়োজক তোচন ঘোষ। তিনি জানান, অনুষ্ঠানের আগে মুম্বইয়ের শিল্পীদের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ এবং কলকাতার শিল্পীদের ২৫-৩০ শতাংশ টাকা অগ্রিম দিতে হয়। সঙ্গে হোটেল, বিমানের টিকিট তো রয়েছেই। অনুষ্ঠান বাতিল হলে শিল্পীদের অগ্রিমের টাকা ফেরত পাওয়া যায় না। শিল্পীদের যেমন ওই নির্দিষ্ট দিনগুলি নষ্ট হয়। তেমনই পুরো টাকাও তাঁরা পান না। অন্য দিকে বিমান, হোটেল বুকিং বাতিলেও অনেক টাকা লোকসান হয়।

তোচনবাবু জানান, এপ্রিলেই কলকাতার একটি অভিজাত ক্লাবে আর ডি বর্মণ সন্ধ্যা অনুষ্ঠান বাতিল করেছেন আয়োজকেরা। আবার মে মাসে লন্ডনে শ্রেয়া ঘোষালের চারটি অনুষ্ঠানের সব কয়টিই বাতিল হয়েছে। ১ বৈশাখ বসুশ্রী সিনেমা হলে নববর্ষ উদ্‌যাপনের পুরো প্রস্তুতি হয়ে গেলেও আদৌ শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠান হবে কী না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন তোচনবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘করোনাভাইরাসের আতঙ্কে ইন্ডাস্ট্রির বড় ক্ষতি হল।’’

মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশ মেনে ৩০ মার্চ পর্যন্ত তাঁর আবৃত্তি স্কুলগুলি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাচিক শিল্পী ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর কথায়, ‘‘সিঙ্গাপুরের অনুষ্ঠান ছিল। আয়োজকেরা জানিয়েছেন তা স্থগিত করা হয়েছে। দেশেও অনেক অনুষ্ঠান বাতিল হচ্ছে।’’ শনিবার থিয়েটারের শো-এর শেষে অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদার বলেন, ‘‘আজ প্রেক্ষাগৃহে যে সংখ্যক দর্শক আসতে পারতেন, ততটা আসেননি। আগামী দিনে হয়তো প্রয়োজনে প্রেক্ষাগৃহগুলিও বন্ধ রাখা হতে পারে।’’

করোনাভাইরাস এখনও তাদের যাত্রাপালায় প্রভাব ফেলেনি বলেই দাবি চিৎপুরের যাত্রা সংস্থাগুলির। বরং মার্চ ও এপ্রিল জুড়ে বাংলার বিভিন্ন

গ্রামে প্রতিদিনই যাত্রাপালা রয়েছে। চিৎপুরের তিনটি যাত্রা সংস্থার মালিক কনক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আয়োজকেরা কোনও যাত্রা বাতিল করেননি। তবে আমরা শিল্পীদের সুরক্ষায় জোর দিচ্ছি।’’ তিনি জানান, শিল্পীদের সঙ্গে দর্শকদের নিজস্বী তোলায় রাশ টানা, বারবার জীবানুনাশক দিয়ে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের হাত ধোয়ায় জোর দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া যাত্রার সংলাপেও এক-দু’ লাইন করে করোনাভাইরাস সচেতনতার কথা যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে কনকবাবুদের।

যাত্রাশিল্পী রুমা দাশগুপ্ত বলছেন, ‘‘আমরা তো দর্শকদের ভিড় থেকে বেশ দূরে থাকি। তবে হাত মেলাতে আসা দর্শকদের এখন শুধু হাত জোড় করে নমস্কার জানাচ্ছি।’’

Coronavirus Health Entertainment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy