Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Janata Curfew

ধর্মঘট ডাকেন যাঁরা, ‘মানুষের ধর্মঘটে’ সুনসান তাঁদের দফতরই

কোনও দলের রাজ্য কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনও দলের ভবনে ভিতর থেকেই দরজা এঁটে বসে নিরাপত্তারক্ষী।

ফাঁকা: সুনসান তৃণমূল ভবন (বাঁ দিকে)। দরজা খোলা থাকলেও লোক নেই আলিমুদ্দিনে (মাঝে)। বন্ধ বিজেপি’র রাজ্য দফতর (ডান দিকে)। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

ফাঁকা: সুনসান তৃণমূল ভবন (বাঁ দিকে)। দরজা খোলা থাকলেও লোক নেই আলিমুদ্দিনে (মাঝে)। বন্ধ বিজেপি’র রাজ্য দফতর (ডান দিকে)। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২০ ০৩:১১
Share: Save:

ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক, কোনও-না-কোনও সময়ে ধর্মঘট ডেকেছে তারা সকলেই। তবে রবিবার জনতা কার্ফুর জেরে শহর কলকাতার যে চেহারা হয়েছিল, তা শেষ কবে কোন ধর্মঘটে দেখা গিয়েছিল— মনে করতে পারছেন না কেউই। এমন দৃশ্য তাঁদের কর্মসূচিতেও হয়েছে বলে মনে করতে পারলেন না কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা-মন্ত্রী। দিনভর ঘুরে দেখা গেল, শহরের সব ক’টি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ই কার্যত জনশূন্য।

কোনও দলের রাজ্য কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনও দলের ভবনে ভিতর থেকেই দরজা এঁটে বসে নিরাপত্তারক্ষী। শুধুমাত্র খোলা ছিল তৃণমূল ভবন এবং আলিমুদ্দিন। তবে সেখানেও সারা দিন সে ভাবে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের দেখা পাওয়া যায়নি। কয়েক জন নেতা বেলার দিকে এলেও তাঁরা জানিয়েছেন, সঙ্গে রয়েছে সব রকমের সুরক্ষা ব্যবস্থা। একই সঙ্গে তাঁদের দাবি, যা-ই হয়ে যাক, কিছু মানুষকে তো কাজ করতে বেরোতেই হয়!

সাম্প্রতিক অতীতে একাধিক বার ধর্মঘট ডেকেছে সিপিএম। সেই দলের রাজ্য সদর দফতর আলিমুদ্দিনে গিয়ে দেখা গেল, মূল ফটক তালাবন্ধ না থাকলেও অবারিত দ্বার নয়। ভবনে নেতা বলতে এসেছেন শ্রীদীপ ভট্টাচার্য। তাঁর সামনেই বসা ভবনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বললেন, ‘‘আমাদের কোনও ছুটি নেই। তবে সে ভাবে কেউ আসেননি। বিমানবাবু (বসু) নিজের ঘরে আছেন।’’ শ্রীদীপবাবু জানালেন, দলীয় কাজের জন্য হাওড়ার বাড়ি থেকে তাঁকে আসতেই হয়। এ দিনও সে কারণেই এসেছেন। বিমানবাবু পরে বলেন, ‘‘সূর্যকান্ত মিশ্রও এসেছিলেন। আমি দলীয় কার্যালয়েই থাকি। অন্য দিনের মতো সব কাজই করেছি।’’ যদিও দু’জনই মানছেন, এ দিনের পরিস্থিতির সঙ্গে ধর্মঘটের তুলনা চলে না।

ইএম বাইপাস লাগোয়া তৃণমূল ভবনে আবার মূল ফটকের সামনেই কাগজে লেখা দু’দিন আগের বিজ্ঞপ্তি, ‘আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন ভবন বন্ধ হবে বিকেল সাড়ে পাঁচটায়’। তবে আজ সোমবার শুরু হওয়া লকডাউনের পরিপ্রেক্ষিতে সেই সময়সূচির কী হবে, তার সদুত্তর মেলেনি। এ দিন দেখা গেল, তৃণমূল ভবনে ঢোকার মুখে টেবিল পেতে বসানো হয়েছে মাস্ক পরা দু’জনকে। তাঁরাই আগতদের দিকে হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার এগিয়ে দিচ্ছেন।

টেবিলে রাখা আছে একটি খাতাও। আগতদের নাম-ঠিকানা লিখে তবেই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। টেবিলে বসা এক জন বললেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে কে আসছেন, আর কে যাচ্ছেন, জানা দরকার। তাই এই ব্যবস্থা।’’ দুপুরের দিকে সেখানেই পৌঁছন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেত্রী দোলা সেন। গাড়ি থেকে নেমেই স্যানিটাইজ়ারে হাত পরিষ্কার করে ঢুকলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন কয়েক জন। আজও কর্মসূচি? দোলা বলেন, ‘‘রবিবার করে ভবনেই বসি। রাজ্যের অনেক জায়গা থেকে লোক আসেন। সকলকে ফোন করে আসতে বারণ করা হয়েছিল। তা-ও যদি কেউ চলে আসেন ভেবে দলের অনুমতি নিয়েই এসেছি। দেখলাম, মেদিনীপুর থেকে তিন জন এসেছেন। তবে আমি দল নিয়ে ঘুরি না। একাই ঘুরি।’’ পরে দোলা জানান, আধ ঘণ্টা পরেই তিনি বেরিয়ে গিয়েছিলেন।

দিনভর অবশ্য তালাবন্ধই ছিল প্রদেশ কংগ্রেস ভবন ও বিজেপির রাজ্য সদর দফতর। প্রদেশ কংগ্রেস ভবনের এক কর্মী বললেন, ‘‘মঙ্গলবারের পরে কার্যালয় খুলবে মনে হয়। এখন করোনা চলছে।’’ বিজেপি নেতারা অবশ্য জানিয়েছেন, রাজ্য দফতরে নয়। তাঁরা নিজেদের বাড়িতেই সময় কাটিয়েছেন এ দিন। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, সারা দিন সল্টলেকের বাড়িতে থাকার পরে বিকেলের দিকে তিনি বাড়ির বারান্দায় গিয়েছিলেন। সেখানেই দাঁড়িয়ে মোদীর কথা মতো অভিবাদন জানাতে শাঁখ বাজিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এই অবস্থায় রাজনীতি নয়। ধর্মঘটই চলছে, তবে মানুষের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Janata Curfew Coronavirus Party Office
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE