বিপদ যে শহরে ঢুকেছে তা জানা গিয়েছিল মঙ্গলবারই। বিপদ এ বার ঘাড়ের কাছে বুঝে বুধবার থেকে যেন জেগে উঠল শহর। বিদেশ থেকে ফেরা একাধিক বাসিন্দাকে এ দিন স্বেচ্ছায় বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভিড় জমাতে দেখা গেল। যা দেখে স্বস্তিতে চিকিৎসকদের বড় অংশ। তাঁদের মতে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যাতে সমাজে ছড়াতে না পারে সে জন্য এই সচেতনতাই জরুরি। যা না দেখানোয় সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে শহরের প্রথম আক্রান্ত এবং তাঁর পরিবারকে।
সোমবার বেলেঘাটা আইডি-তে ভর্তি আক্রান্ত যুবকের মায়ের সঙ্গে নবান্নে সরাসরি যোগাযোগ হয়েছিল অন্য এক মহিলা আধিকারিকের। সেই মহিলা আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ হওয়ায় এ দিন নবান্নের অন্য এক অফিসার। সকাল হতেই সোজা আইডি-তে হাজির হয়ে বিষয়টি জানান চিকিৎসকদের। এই মুহূর্তে তাঁকে ‘হোম কোয়রান্টিন’-এ থাকতে বলা হয়েছে। করোনার কোনও উপসর্গ নজরে এলেই জানাতে বলা হয়েছে চিকিৎসকদের।
এ দিনই ইস্তানবুল থেকে দিল্লি হয়ে শহরে ফিরেছেন হাজরার বাসিন্দা এক দম্পতি। সঙ্গে ছিলেন দুই সহকর্মীও। দম্পতি জানিয়েছেন, দিল্লি বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানিং হয়নি। তবে ইস্তানবুল থেকে বিমান ধরার আগে হাতে স্বেচ্ছা-ঘোষণাপত্র ধরানো হয়েছিল। দম্পতির দাবি, কলকাতায় আসার পথেই উড়ানে তাঁরা জানতে পারেন, এ রাজ্যে প্রথম আক্রান্তের কথা। নিজেরাই বিমানবন্দর থেকে চলে যান বেলেঘাটা আইডি-তে। করোনাভাইরাসের কোনও উপসর্গ না মেলায় চিকিৎসকেরা তাঁদের ১৪ দিনের ‘হোম কোয়রান্টিন’-এ থাকার লিখিত পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁরা আশ্বস্ত না হয়ে এক বেসরকারি হাসপাতালে যান। সেখান থেকেও একই পরামর্শ দেওয়া হয়। যৌথ পরিবারে থাকা ওই দম্পতি এ বার তাঁদের গড়িয়ার আস্তানায় আলাদা থাকবেন। সঙ্গে থাকবেন দুই সহকর্মীও। দম্পতির কথায়, ‘‘কোয়রান্টিনের সব শর্ত মেনে চলব। আমাদের কারণে পরিবার এবং প্রতিবেশীদের ক্ষতি হোক, তা কখনওই চাইব না।’’
কর্মসূত্রে লন্ডনে থাকেন নারায়ণপুরের একটি আবাসনের বাসিন্দা তরুণী। ১৬ মার্চ শহরে ফেরেন তিনি। এ দিন সকালে অন্য আবাসিকদের সচেতনতায় আপাত সুস্থ তরুণী তাঁর মা, বাবা এবং ভাইকে নিয়ে বেলেঘাটা আইডি-তে যান। সেখান থেকে চিকিৎসকেরা তাঁদের চার জনকেই ‘হোম কোয়রান্টিন’ লিখে ফেরত পাঠিয়েছেন। অন্য দিকে, আইআইটি কানপুরের এক ছাত্র এ দিনই শহরে ফিরেছেন। হস্টেলে পাশের ঘরেই থাকেন ইতালির বাসিন্দা এক ছাত্র, এই আতঙ্কেই ওই তরুণ ফিরেই চলে যান আইডি-তে। সেখানে তাঁকেও ‘হোম কোয়রান্টিন’-এ থাকতে বলা হয়েছে।
জার্মানি থেকে আসা বেশ কয়েক জনকে এ দিনই রাজারহাটের কোয়রান্টিন কেন্দ্রে সরাসরি পাঠিয়ে দেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। সেই তালিকায় রয়েছেন পড়াশোনার সূত্রে সে দেশে থাকা গড়িয়ার বাসিন্দা
তরুণী ও কলকাতার এক যুবক। সেই সঙ্গে অফিসের প্রশিক্ষণে সেখানে যাওয়া এক যুবককেও বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ওই কেন্দ্রে পাঠানো হয়। পরিবার সূত্রের খবর, কয়েক ঘণ্টা তাঁদের রেখে কিছু তথ্য সংগ্রহ এবং পরীক্ষা করে হোম কোয়রান্টিন লিখে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।