শেক্সপিয়র সরণি থানায় বসেছে জীবাণুনাশক টানেল। —ফাইল চিত্র।
কোনও থানায় সংক্রমিত হয়েছিলেন ২০ জন, কোথাও আবার ১৫ জন বা তার বেশি। কোনও কোনও থানায় সংক্রমিত কর্মী-আধিকারিকের সংখ্যা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, থানার বাইরে প্যান্ডেল খাটিয়ে বসে সামলাতে হয়েছিল দৈনন্দিন প্রশাসনিক কাজকর্ম। গত বছর করোনার সময়ে এমনই নানা চিত্র দেখা গিয়েছিল কলকাতা পুলিশের একাধিক থানায়। তার পরে ধীরে ধীরে কমে সংক্রমণের হার।
এর পরে কেটে গিয়েছে বেশ কয়েক মাস। চলতি বছরে ফের রাজ্যে বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমণ। কিন্তু করোনা-সুরক্ষায় ব্যবস্থা নেওয়ার নতুন নির্দেশ ‘উপরমহল’ থেকে এখনও পৌঁছয়নি থানাগুলিতে। ফলে কোনও থানা সেই পুরনো নির্দেশ সম্বল করেই চলছে, কোনও থানায় আবার কর্মী-অফিসারদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে ‘ঢিলেঢালা’ ভাব। যদিও কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) শুভঙ্কর সিংহ সরকার বলছেন, ‘‘করোনা প্রতিরোধে পুরনো নির্দেশই বহাল রয়েছে। সেগুলি মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সব থানাকে।’’
গত বছর অতিমারির শুরু থেকেই সামনের সারিতে থেকে লড়াই চালিয়ে এসেছেন পুলিশকর্মীরা। ফলে তাঁদের মধ্যে সংক্রমণের হারও বেড়েছিল উল্লেখযোগ্য ভাবে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারাও গিয়েছেন অনেক অফিসার। কসবা, রবীন্দ্র সরোবর, ফুলবাগান, হেস্টিংস, প্রগতি ময়দান, শ্যামপুকুর, জোড়াবাগান-সহ কলকাতা পুলিশের একাধিক থানায় করোনা আক্রান্ত কর্মীর সংখ্যা ছিল সর্বাধিক। গত বছর জুলাইয়ের মাঝামাঝি কসবা থানার পুলিশকর্মীদের মধ্যে সংক্রমণ এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, থানার বাইরে প্যান্ডেল করে প্রশাসনিক কাজ সামাল দিতে হয়। ওই থানার প্রায় ৩০ জন কর্মী সেই সময়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এ ছাড়া প্রগতি ময়দান থানায় প্রায় ২০ জন ও শ্যামপুকুর এবং ফুলবাগান থানায় সংক্রমিত হয়েছিলেন ১৫ জনের বেশি পুলিশকর্মী। ফলে থানার কাজ চালানোই কার্যত দুষ্কর হয়ে উঠেছিল।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব থানাকে কঠোর ভাবে করোনা-বিধি মেনে চলার নির্দেশ দেয় লালবাজার। কিন্তু চলতি বছরে ফের সংক্রমণ বাড়তে শুরু করলেও দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন থানায় তেমন ভাবে সেই বিধি মানা হচ্ছে না। মাস্ক পরার কথা বার বার বলা হলেও থানার ভিতরে অধিকাংশ পুলিশকর্মী বিনা মাস্কে ডিউটি করছেন। কোনও কোনও থানায় আবার মাস্ক ছাড়াই ঢুকে পড়ছেন বিভিন্ন কাজে আসা লোকজন। অভিযোগ, মাস্ক পরার জন্য পুলিশকর্মীদের পক্ষ থেকেও তাঁদের সতর্ক করা হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু কলকাতায় করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৭১৬ জন। এই অবস্থায় বিভিন্ন থানার এমন ‘গা-ছাড়া’ মনোভাব প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে সাধারণ মানুষ এবং পুলিশ, উভয়ের ভূমিকা নিয়েই। গড়িয়াহাটের এক বাসিন্দা সৌরভ সরকার বলেন, ‘‘রাস্তাঘাটে এত লোক মাস্ক ছাড়া ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পুলিশ তো কাউকেই কিছু বলছে না। তাদের আগের সেই তৎপরতা এখন কোথায়? এমনকি, থানার ভিতরেও মাস্ক পরার নিয়ম মানা হচ্ছে না।’’ যদিও থানাগুলির দাবি, কোভিড-সুরক্ষায় উপরমহল থেকে নতুন কোনও নির্দেশ তাদের কাছে এখনও আসেনি। তাই তারা পুরনো নির্দেশ অনুযায়ী চলছে। কিন্তু সেই নির্দেশও কেন ঠিক মতো পালন করা হচ্ছে না, তার অবশ্য স্পষ্ট জবাব মেলেনি।
এই প্রসঙ্গে চিকিৎসক কুণাল সরকার বলেন, ‘‘আমার মনে হয় না, এই বিষয়ে পুলিশের আর বিশেষ কিছু করার আছে। যে ভাবে অতিমারি-বিধি শিকেয় তুলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রচার এবং মিছিল চলছে, সেখানে পুলিশের পক্ষে আলাদা করে করোনা প্রতিরোধে কিছু করার থাকতে পারে বলে মনে হয় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy